সুধাময়ী
✍ শর্মিষ্ঠা সেন
মিসেস সুধা বসুকে প্রণাম করে শিউলি স্টেজে উঠল।মাইকের কাছে গিয়ে গলাটা ঝেড়ে নিয়ে বলতে শুরু করল,”আজ এই অনাথ আশ্রম সুধাময়ীর উদ্বোধন।আপনারা দেখেছেন যে,আমি নিজে বর্তমানে কুড়ি জন অনাথ বাচ্ছার দায়িত্ব নিয়েছি।”
ডাক্তার শিউলি দাসকে এই শহরে চেনে না এমন লোক নেই।প্রেস,মিডিয়া,আমন্ত্রিত অতিথিতে গিজগিজ করছে অনুষ্ঠানগৃহ।কিন্তু ছোট্ট শিউলির ডাক্তার শিউলি দাস হয়ে ওঠা এত সহজ ছিল না।
সুধা বসুর বাড়িতে শিউলির মা মমতাময়ী পরিচারিকার কাজ করত।শিউলির বাবা মারা যাওয়ায় ও বাড়িতে আর কেও না থাকায় শিউলিকেও সাথে করে নিয়ে আসত।সুধামা শিউলিকে মায়ের মতোই ভালোবাসতেন।শিউলির পড়াশোনায় আগ্রহ দেখে তিনি তাকে একটি কাছের স্কুলে দিলেন ও নিজে পড়াতে শুরু করলেন। সুধাবসুর নিজের ছেলে ব্রত অসৎসংগে পড়ে ক্রমশ বখাটে হয়ে যেতে লাগল।
সামনে উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষা।শিউলির জীবনে ঘটে যায় দুটি দুর্ঘটনা।তার মা মমতাময়ী মারা যায়।আর ব্রত একদিন তাকে ফাঁকা বাড়িতে একা পেয়ে শ্লীলতাহানি করে।এইসময় নিজের ছেলের বিরুদ্ধে কোর্টে মামলা করে তাকে শাস্তি দেন সুধাদেবী।শিউলি উচ্চ মাধ্যমিক দেয়,জয়েন্ট এন্ট্রান্স দেয়।ভালোভাবে পাস করে।নিজের সবটুকু উজাড় করে শিউলিকে ডাক্তারি পড়ান সুধাদেবী।যে পরিমাণ মনের জোর তিনি এইসময় একজন অনাথা মেয়েকে দেন তা কমজনই দিতে পারেন।
আজ শিউলি সফল ডাক্তার। সেও কয়েকজন বাচ্ছার কাছে সুধামা হতে চলেছে।তাই নিজের মা আর সুধামার নাম জুড়ে অনাথ আশ্রমের নাম রেখেছে সুধাময়ী।আরও কয়েকজন বাচছার মধ্যে এইভাবেই ছড়িয়ে যাবে এই আদর্শ। সমাজ শিউলির সুগন্ধে ভরে উঠবে।
……………………………………………………………………………………………………