গল্প – নৃশংস এক ডাকাতের কাহিনী
শ্রী সুবোধ চন্দ্র সরকার
এম,কম ,এলএল,বি (আইনজীবী) মোবাইল- 9477443110
তোমরা ডাকাতের অনেক ভালো কাহিনী পড়েছো বা শুনেছো। আজ তোমাদের তাদের জীবনের একটা সাংঘাতিক ঘটনার কথা বলব। তোমরা এটাকে গল্প ভাব বা ঘটনার বর্ণনা ভাব কিন্তু একটা বাস্তব ঘটনা অবলম্বনে এই গল্পটি লেখা।
আগেগ্রীষ্মকালে গ্রামে ডাকাতি হত। শুনেছি দিনের বেলা ছদ্মবেশে এসে ডাকাত সর্দার বাড়ি ঠিক করত, কখনো একটা বাড়িতে বা কখনো একই পাড়াতে দুইটি বাড়িতে ডাকাতি চালাতে।
এই ডাকাতি করতে যাওয়ার আগে তারা গ্রামের বাড়িতে এক নির্জন জায়গায় বা নদীর ধারে কোন
শ্মশানে মা কালীরপুজো দিত।এখন পশ্চিমবঙ্গে অনেক জায়গায় ডাকাত কালীমন্দির আছে। মা কালী পুজো দেওয়ার উদ্দেশ্য ছিল নিরাপদে তাদের ডাকাতির কাজ সম্পন্ন হয় এবং সকলেসুস্থভাবে বাড়ি ফেরত যায়।মা কালীর সামনে প্রতিজ্ঞা করানো হতো সকলে সর্দারের র্নির্দেশ মানবে, তার আদেশ অমান্য করা যাবে না। যদি তার আদেশ না মানা হয় তাহলে চরম শাস্তি পেতে হবে।
এইরকম একটা ডাকাত দল তৈরি হয়েছিল । সর্দারের বয়স তিরিশ-বত্রিশ হবে আর সকলে একুশ বছর থেকে পঁচিশ বছরের মধ্যে। দলে ডাকাতের সদস্য ছিল ১২ জন। এই দলে সর্দারের প্রধান সহকারী ছিল তার এক সহোদর ভাই। এরা যখন ডাকাতি করত তখন কেউ কাহার নাম ধরে ডাকতো না।তারা নাম ঠিক করে দিত প্রথমে বড়বাবু,মেজ বাবু ছোট বাবু, তারপর পরপর বার নম্বর এইভাবে।
সেদিন ছিল অমাবস্যা বৈশাখ মাস ,অমাবস্যার রাত্রে ঘুটঘুটে অন্ধকারে মানুষজন সশস্ত্র ডাকাতের দলটি নদীর ধারে এসে পৌঁছালো। নদীতে জল নেই। নদীর ওপারে যে গ্রাম আছে, সেই গ্রামের বাবুদের বাড়িতে ডাকাতি করার প্ল্যান করেছিল। তখন রাত্রি দশটা, নদী পেরিয়ে একটা শ্মশান পরে, ওরা শ্মশান টার কাছে এলো এবং সকলে মা কালীর পুজো দিল এবং সকলে সর্দারের কথামতো নির্দেশাবলী শুনে নিল।
ঠিক রাত্রি এগারোটার সময় বাড়িটির সামনে পৌঁছালো প্রত্যেকের হাতে একটা করে টর্চ ছিল, আর কারো হাতে দা, কারো হাতে তলোয়ার ,কারো হাতে বল্লম এবং অন্যান্যদের সকলের হাতে কিছু না কিছু অস্ত্র ছিল। কারো কারো হতে বোমা ও ছিল। আর ছিল লাঠি প্রত্যেকেই লাঠি খেলা জানত।
যে বাড়িতে ডাকাতি করবে তার চারিদিকে দুজন করে লাঠি ও অস্ত্র নিয়ে বাইরে পাহারা দেবে এবং সর্দারসহ আর তিনজন বাড়ির ভিতরে ঢুকবে বাড়ির জিনিসপত্র হরণ করার জন্য। এই ডাকাতি করতে তারা গৃহ স্বামীকে বেঁধে ফেলতো,অন্যান্যদের মুখে টেপ লাগিয়ে দিতে এবং কোনরূপ চিৎকার চেঁচামেচি করলে আগে মেরে ফেলবার হুমকি দিত। সহজে যদি তার অলঙ্কার বা টাকা-পয়সা না দিত আঙুল কেটে বা হাত কেটে হাতের বালা বা আংটি ছিনিয়ে নিত, কানের দুল কান ছিঁড়ে খুলে নিতো। ঘরের সিন্দুকের চাবি যদি না দিত তাহলে তাকে উনুনে বসিয়ে আগুন জ্বেলে দেওয়ার ভয় দেখাতো বা মেরে ফেলার হুমকি দিত। সিন্দুকের চাবি না দিলে তাদের উপর অত্যন্ত অত্যাচার চালাতো।
সেদিন পূর্ব পরিকল্পনা অনুযায়ীও তারা গুটি সাজিয়েছিল। প্রথমে দুটি বোমা ফাটিয়ে তাদের উপস্থিতি জাহির করল অর্থাৎ কেউ কাছে আসলে তাকে বোমার আঘাতে প্রাণ দিতে হবে।
বাইরে যারা পাহারা দিচ্ছিল অস্ত্র নিয়ে ঘুরে ঘুরে পাহারা দিচ্ছিল।যে বাড়িতে ডাকাতি করতে গিয়েছিল সেই বাড়িতে বন্দুক আছে জানতো না। তাদের বাড়ির ছোট ছেলের বয়স চব্বিশ এর কাছাকাছি বাইরে চাকরি করতো
সেদিন বাড়ি ফিরেছিল। যখন ডাকাতির কাজ শুরু হল, তখন সেই ছেলেটি একটা টর্চ এবং বন্দুক নিয়ে খিড়কী দরজা দিয়ে বের হয়ে গুলি চালাতে লাগলো। তার মাথায় অভিনব বুদ্ধি খটিয়ে ছিল।টর্চ জ্বেলে এক জায়গায় রেখে অন্যজায়গা থেকে গুলি ছুঁড়ছিল।ডাকাতেরা বুঝতে পারছিল না কোন দিক থেকে কখন গুলি আসছে। এইভাবে খণ্ড যুদ্ধ হতে থাকলো। কিন্তু দলের সর্দার এবং তার ভাই বাড়ির ভেতর থেকে যখন বের হলো অমনি একটা গুলি সর্দারের ভাইয়ের মাথায় লাগলো। আ: বলে চিৎকার করে মাটিতে লুটিয়ে পড়লো, সঙ্গে সঙ্গে তার মৃত্যু হল।
সর্দার ভাইকে নানাভাবে পরীক্ষা করে দেখলো তার জীবন আর নেই। একটা শিষ্ দিয়ে সমস্ত ডাকাতদের এক জায়গা করে বলল। বলল চল এখান থেকে পালিয়ে যাই। তারা দেখলো সরদার ভাইয়ের মৃত্যু হয়েছে। বিশাল দেহ তাকে কি করে ওখান থেকে নিয়ে যাব যদি না নিয়ে যায় তাহলে পুরো দলটা ধরা পড়ে যাবে।
সরদার হুকুম দিল কে আছিস এর মুন্ডুটা কেটে ফেল এবং দেহটা ফেলে মুন্ডুটা নিয়ে কেটে পড়। যেমন কথা তেমনি কাজ চুলের মুঠিটা ধরে একজন ধরালো অস্ত্র দিয়ে সরদারের ভাইয়ের মুন্ডু টা কেটে ফেলল এবং সেটা কাপড়ের মুড়ে সে স্থান ত্যাগ করল। এবং ভাইয়ের মৃতদেহে ও কাপড়ে দেশলাই জেলে আগুন ধরিয়ে দিল, সেই স্থানত্যাগ করল। সকলে উঠে যখন গ্রামবাসীরা সেই বাড়িতে পৌঁছালে দেখল একটা মুন্ডু হিন আজ পোড়া মানুষ। আর বাড়ির কর্তাকে বেঁধে রাখা হয়েছে অন্যরা ভয় থর থর করে কাঁপছে বলছে ওনারা আমাদের সর্বস্ব নিয়ে চলে গেল।
ডাকাত সরদারের সিদ্ধান্ত এবং নৃশংসতা সত্যিই মানুষকে ভয় পাইয়ে দেয়। থানাতে ফোন করে জানানো হয়েছিল এক অফিসার এবং চারজন কনস্টেবল সেখানে পৌঁছালেও এবং লাশটাকে গাড়িতে তুলল এবং সকলকে জিজ্ঞাসাবাদ করে থানায় ফিরে গেল।
একজন দুধে অফিসার তদন্ত করে দলটিকে ধরে ফেলেছিল ডাকাত সরদার এর কাছে জানতে পেরেছিল সেদিনের সেই মুন্ডুহীন আট পরা লাশটা ছিল তার মায়ের পেটের ভাই। তাদের বিরুদ্ধে খুব না জানি এবং ডাকাতির কেসের মামলার রুজু করা হয়েছিল।