কিছুদিন আগে আপনার পছন্দের রং ছিল হলুদ। এরপর আপনার পছন্দের রং হয়ে গেল ধূসর। আর এখন কালো। তবে সাদা আর সবুজও ভালো লাগে। একজন কালার সাইকোলজিস্ট কেবল এটুকু তথ্য থেকেই আপনার সম্পর্কে অনেক কিছু বলে দিতে পারবেন। কেননা, রঙের সঙ্গে মানুষের ব্যক্তিত্বের গভীর সম্পর্ক রয়েছে।

রঙের মনস্তত্ব

সময়ের সঙ্গে ক্রমে জনপ্রিয়তা পাচ্ছে কালার সাইকোলজি বা রং–মনস্তত্ব। এর সারমর্ম হলো—আপনার পছন্দের রং থেকে আপনার ব্যক্তিত্ব সম্বন্ধে ধারণা করা যায়।

মনস্তাত্ত্বিকরাও মতপ্রকাশ করেছেন, রং দিয়ে যায় চেনা। রং নিয়ে বিভিন্ন গবেষণা ও জরিপের ভেতর দিয়ে রঙের এই মনস্তত্ত্বের ধারণা হয়েছে আরও স্বচ্ছ। প্রতিটি রঙের রয়েছে ভিন্ন ভিন্ন তরঙ্গদৈর্ঘ্য। তাই প্রতিটি রং আমাদের মস্তিষ্কে ভিন্ন উদ্দীপনা আর অনুভূতি সৃষ্টি করে। বড় পর্দার চরিত্রগুলোর কস্টিউম ডিজাইনে পোশাকের রং দিয়ে ব্যক্তির চরিত্র নির্মাণ করা হয়। মিসর ও চীনে চিকিৎসার জন্য রং ব্যবহার করা হতো, যাকে আজকের যুগে বলা হয় ‘ক্রোমোথেরাপি’।

ভেরি ওয়েল মাইন্ড ওয়েবসাইটে প্রকাশিত প্রতিবেদনে ২০২০ সালের একটা গবেষণার উল্লেখ আছে। ৩০টি দেশের ৪ হাজার ৫৯৮ জনের ওপর একটা জরিপ পরিচালনা করে রঙের সঙ্গে ব্যক্তিত্বের সম্পর্ক নিয়ে কিছু সিদ্ধান্তে আসেন গবেষকেরা। এই যেমন, ৫১ শতাংশ মানুষ মনে করেন, শোকের সঙ্গে কালোর সংযোগ আছে। সাদা হলো উপশম, মুক্তি, শান্তির রং। নীলও প্রশান্তিদায়ক।

৫২ শতাংশ মানুষ মনে করেন, হলুদ আশা আর আনন্দের রং। ৬৮ শতাংশ মানুষ মনে করেন, লালের সঙ্গে ভালোবাসার গভীর সংযোগ রয়েছে। ৩৪ শতাংশ ‘ভোট’ পেয়ে এরপরের ভালোবাসার রং হলো গোলাপি। এদিকে জরিপে অংশ নেওয়া ৩৬ শতাংশ জানিয়েছেন, বাদামি রং বিরক্তিকর!

কালার সাইকোলজি বা রঙের মনস্তত্ত্বের একটা গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো, রঙের সঙ্গে ব্যক্তিত্বের সম্পর্ক। রং কীভাবে মানুষের মেজাজ, আবেগ, অনুভূতির ওপর প্রভাব বিস্তার করে, এ ব্যাপারে দীর্ঘকাল ধরেই গবেষণা করে আসছেন শিল্পী, স্থপতি আর মনস্তাত্ত্বিকেরা।

এটা ঠিক যেকোনো ব্যক্তির ওপর রঙের প্রভাবটা অনেকটা ব্যক্তিগত ও এই ব্যক্তির পরিবেশের সঙ্গেও সম্পর্কিত; অর্থাৎ সব রঙের প্রভাব সবার ওপর সমান নয়। এই যেমন পশ্চিমা বিশ্বে সাদা উৎসবের রং। বিয়ের পোশাক সাধারণত সাদা বা সাদার বিভিন্ন শেড, যেমন অফ হোয়াইট, আইস হোয়াইট-জাতীয় রঙের হয়। দক্ষিণ এশিয়ায় সাদা আর কালো উভয়ই শোকের রং হিসেবে জনপ্রিয়।

সাধারণভাবে কোন রঙের কেমন প্রভাব, জেনে নিন

নারী-পুরুষ উভয়ের পছন্দের তালিকার শীর্ষে নীল। ৫৭ শতাংশ পুরুষ আর ৩৫ শতাংশ নারীর পছন্দের শীর্ষে রয়েছে এই রং। সাধারণত শান্ত প্রকৃতির, শান্তিপ্রিয় মানুষদের প্রিয় রঙের তালিকায় প্রথমেই থাকে নীল। নীল রং যাঁদের পছন্দ, তাঁরা খুব সহজেই কোনো কিছুতে বিশ্বাস করেন। আর সহজে বিশ্বাস হারান না। আবার আকাশের রং নীল হওয়ায় সমুদ্রেও এই রঙের আভা পাওয়া যায়। ফলে যাঁদের নীল রং প্রিয়, তাঁরা সহজেই একাত্মতা ও শান্তি খুঁজে নিতে পারেন।

তাঁরা সাধারণত বিশ্বাসী হন। যেকোনো মানুষের বিশ্বাস অর্জনে তাঁদের তেমন বেগ পেতে হয় না। অন্যদিকে তাঁদের চিন্তার গভীরতাটাও সমুদ্রের মতো।

আপনার প্রিয় রং কি লাল?

যাঁদের প্রিয় রং লাল, তাঁরা সাহসী, দৃঢ় ও আত্মবিশ্বাসী হন। তাঁরা গভীরভাবে ভালোবাসতে জানেন। যাঁদের পছন্দের রং লাল, তাঁরা দ্রুত অন্যের দৃষ্টি আকর্ষণ করেন, আবেদনময়ী ও উচ্চাকাঙ্ক্ষী।

গোলাপি’ মন যাঁদের…

যাঁদের প্রিয় রং গোলাপি, তাঁরা মানুষ হিসেবে আবেগপ্রবণ, নরম প্রকৃতির হন। সংবেদনশীল, কল্পনাপ্রবণ, শিশুতোষ মনের অধিকারী। তাঁরাও ভালোবাসতে ভালোবাসেন। উচ্চাকাঙ্ক্ষী বা বৈষয়িক নন। জীবনের জয়-পরাজয় নিয়ে বিশেষ ভাবেন না। বাস্তবের দুনিয়া থেকে পালিয়ে তাঁরা বরং গোলাপির আড়ালে পালিয়ে বাঁচতে চান।

সবুজ আর নিরাপত্তা অনেকটা সমার্থক

আপনার প্রিয় রং যদি সবুজ হয়, এর মানে আপনি ‘সেফ গেম’ খেলার ওস্তাদ। জীবনে স্থিরতা, নিরাপত্তাই আপনাদের প্রথম চাওয়া। ‘সেফ জোন’ থেকে বের হতে চান না। সম্পর্ক, বিনিয়োগ ও সঞ্চয়ের ক্ষেত্রে সব সময় নিরাপত্তা খোঁজেন। অনেকে আবার হন প্রকৃতিপ্রেমী। সবুজপ্রেমীরা নিজেদের সামাজিক ইমেজ নিয়েও বেশ সচেতন।

শুভ্রতার প্রতীক সাদা

সাদা যাঁদের পছন্দের তালিকায় শীর্ষে, তাঁরা সাধারণত সহজ, সরল, নির্ভেজাল মানুষ। তাঁরা পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা পছন্দ করেন।

কালো আভিজাত্যের প্রতীক

সময়ের সঙ্গে পছন্দের রং হিসেবে জনপ্রিয়তা বাড়ছে কালোর। এর পেছনে রয়েছে কালোর অভিজাত লুক। কালো রং যাঁদের পছন্দ, তাঁরা আরও ক্ষমতা চান, চান সবকিছুতে নিজের নিয়ন্ত্রণ। অনেকে অন্তর্মুখী। নিজেকে কালোর ভেতরে আড়াল করতে চান। নিজেকে রহস্যময় ব্যক্তিত্বের অধিকারী হিসেবে উপস্থাপন করতে চান। অনেকে আবার ভোগেন ‘সুপিরিওরিটি কমপ্লেক্সে’।

আশাবাদীদের পছন্দের রং হলুদ

আশাবাদী মানুষদের প্রিয় তিন রঙের একটি হলুদ। নিজেদের নিয়ে সব সময় খুশি থাকতে ভালোবাসেন তাঁরা। অন্যের মনোযোগ পেতে চান। হুটহাট বড় সিদ্ধান্ত নেন।

কমলা রং যাঁদের পছন্দ

তাঁরা সাধারণত বন্ধুত্বপূর্ণ, রোমাঞ্চপ্রিয় আর কিছুটা নাটুকে প্রকৃতির হন। তাঁদের কাছে সম্পর্কের মূল্য কম। সম্পর্ক টিকিয়ে রাখার চেয়ে বরং এক সম্পর্ক থেকে আরেক সম্পর্কে সুইচ করতে অধিক আগ্রহী। ‘মিলেনিয়াল’ (যাঁদের জন্ম ১৯৮১ থেকে ১৯৯৭ সালের মধ্যে) ও  ‘জেন জি’য়ের (যাঁদের জন্ম ১৯৯৮ থেকে ২০১২ সালের মধ্যে) কল্যাণে কমলা এখন ফ্যাশনের ট্রেন্ডে!

নারীদের পছন্দ বেগুনি

নীলের পর নারীদের অন্যতম পছন্দের রং বেগুনি। যাঁরা বেগুনি রঙ ভালোবাসেন তাঁরা আবেগপ্রবণ আর অনুভূতিশীল হন। স্বাধীনচেতা। তাঁদের অনেকে আবার ‘সুপিরিওরিটি কমপ্লেক্সে’ ভোগেন।

সূত্র: ভেরি ওয়েল মাইন্ড

 

 

__________________________________________________________

 

 

 

__________________________________________________________

_______

 

 

 

 

 

 

 

  

Loading