ঈশ্বরের দূত
কলমে – স্বপ্না মজুমদার
********
এ সমাজে কতো কিছুই না ঘটে। মানুষের মন ভাবনা একে জনের এক এক রকম। কতো মানুষ অর্থ থেকেও বখাটে হয়ে ওঠে পড়াশোনা করতে চায় না আবার খুব গরীব ঘরের লড়াই চলে মাথা উঁচু করে বাঁচার জন্য।
ভালো মন্দ কতো রকম মানুষের সাথে হয় আমাদের প্রতিনিয়ত দেখা।
শালিনীর বাবা মধ্যবিত্ত মানুষ। ছোটো একটা লেডিজ গার্মেন্টস এর দোকান চালান। দুই ছেলেমেয়েকে সুশিক্ষিত করে তুলবেন এটাই তার বড় স্বপ্ন। শালিনী কলেজে পড়ার সময় তার বাবা মহিমবাবুর ব্রেইন টিউমার ধরা পড়ে। সেই অপারেশন করতে গিয়ে জমানো টাকা পয়সা ও দোকান বিক্রি হয়ে যায়। এদিকে ঘরসংসার শালিনীর ভাই ও তার পড়াশোনা চলবে কিভাবে। শালিনীর মা লোকের বাড়িতে রান্নার কাজ ধরেন। শালিনী টিউশনি করেও সুরাহা তেমন একটা হচ্ছে না। মহিম বাবুর অপারেশনের পরেও চিকিৎসা ও ওষুধ পত্র কিনতে হিমসিম খেতে হচ্ছে।
একদিন ফেসবুক থেকে একজনের সাথে আলাপ হয় শালিনীর। সে বেশ পয়সাওয়ালা মানুষ বলেই পরিচয় দেয়। মাঝে মাঝে চ্যাটিংএ কথা হয়। একদিন ফোনে বলেন— আমি মধ্য বয়স্ক মানুষ। আমার নাম শোভন সেন।আমার স্ত্রী সম্প্রতি মারা গেছেন। মেয়ের বিয়ে দিয়েছি। এবারে নিজেও বিয়ে করতে চাই। শালিনী কোনো কিছু না ভেবে দুম করে বলে— আমাকে বিয়ে করবেন? তবে শর্ত আছে।
শোভন সেন বলেন—- তুমি কেন বিয়ে করতে চাইছো। আমার মতো একজনকে। এ হয় না। তাছাড়া তোমার বাড়ির লোক রাজি হবে না।
শালিনী — জানি। তারা রাজী হবেন না। কিন্তু আমার উপায় নেই। ওই যে বললাম শর্ত আছে। আপনি রাজি হলে তবেই বিয়ে হবে।
শোভন সেন বললেন— বলো,কি তোমার শর্ত।
শালিনী —— আমাকে পড়াশোনা করে নিজের পায়ে দাঁড়ানোর সুযোগ দিতে হবে। আর আমি যতোদিন চাকরি না পাব। আমার ফ্যামিলিকে দেখতে হবে। আমার ভাইয়ের পড়াশোনায় সাহায্য করতে হবে।
শোভন সেন মনে মনে হাসলেন। বললেন — তুমি জানো না তুমি কি বলছো। ফ্যামিলীর জন্য তুমি আমাকে বিয়ে করবে?
শালিনী — এ ছাড়া আমার উপায় কি বলুন? শুধু শুধু কে আমাকে সাহায্য করবে।
শোভন সেন বললেন —- দেখো আমি বিয়ে করে শেষ বয়সের একজন সঙ্গিনী খুঁজছি।সুখ দুঃখের কথা বলার জন্য। তুমি সে হতে পারো না। যাইহোক তোমার কথা আমি শুনলাম। তোমাকে আমার বেশ ভালো লেগেছে।আমি তোমাকে ও তোমার পরিবারকে এমনিই সাহায্য করবো। এই কথা তোমাকে দিতে পারি।
আমার সম্পত্তি তাতে খুব একটা কমে যাবে না। ঈশ্বর আমাকে যথেষ্ট দিয়েছেন। কারো জন্য না হয় এটুকু উপকার করবো।
শালিনী —- কতোদিন করবেন? হঠাৎ করে চলেও তো
যেতে পারেন।তখন কি হবে।
শোভন সেন—– অন্ধকার আছে বলেই আলোর এতো সৌন্দর্য। এ জগতে সবাই খারাপ হয় না শালিনী।
আর শোনো,, আমার বিয়ে ঠিক হয়ে গেছে। আমাদের বিয়ের ছোট্ট অনুষ্ঠানে তুমি অবশ্যই এসো।
শালিনী বলে– আমার বাড়ির অবস্থা হঠাৎ এতো খারাপ হওয়ায় আমার মাথা ঠিক ছিল না। যা মনে এসেছে বলেছি।
শোভন সেন—- এবার থেকে আমাকে আঙ্কেল বলেই ডেকো,কেমন। আমি তোমাদের বাড়িতে একদিন যেতে চাই। কোনো আপত্তি আছে তোমার?
শালিনী — না,কোনো আপত্তি নেই। আসবেন একদিন।
শোভন সেন— ওই দিন তোমার বাবা মায়ের সাথে আলাপ করে আমার সাহায্য করার কথা বলে আসবো।
শালিনী বলে—- ভগবান হয়তো দূত হিসেবে আপনাকে
আমাদের কাছে পাঠিয়েছেন। তবে আঙ্কেল একটা শর্ত আছে,তবেই সাহায্য নেব।
শোভন সেন —- আবার শর্ত? বলো শুনি।
শালিনী—- আমি চাকরি পেলে আপনার সব অর্থ শোধ করতে চাই। প্লিজ,, না বলবেন না।
শোভন সেন হেসে বলেন— বেশ তাই হবে।।