বয়স বাড়ার সঙ্গে অনেকের ত্বকের লাবণ্যতা হারায়, কারও কারও ত্বক অকালে বুড়িয়ে যায়। আবার দেখা যায় কোনো ব্যক্তির বয়স বাড়লেও ত্বকের উজ্জ্বলতা বা লাবণ্যতা হারায় না। অনেকেই প্রশ্ন করে থাকেন, কেন এমনটি হয় এবং উজ্জ্বলতা বা লাবণ্যতা বাড়ানোর কৌশল কী? এসব বিষয়ে অনেক কিছু জানার আছে। আর বর্তমানে উন্নতমানের ডার্মাটোলজি চিকিৎসা ব্যবস্থা  ত্বকের বুড়িয়ে যাওয়া বা মলিনতা দূর করতে সফলভাবে কাজ করছে। সাধারণত ত্বকের একটি গভীরে তৈলগ্রন্থি থাকে। এটি সেবাম তৈরি করে, যা প্রাকৃতিক ময়েশ্চারাইজার ফ্যাক্টর হিসেবে কাজ করে। কোনো কারণে গ্রন্থিগুলো যদি হাইপার অ্যাকটিভ হয়ে যায়, বেশি বেশি সেবাম তৈরি করে, ত্বক তখন দেখায় চকচকে। আর সেবাম প্রয়োজনের তুলনায় যদি কম তৈরি করে, সে ক্ষেত্রে ত্বক হয়ে যায় শুষ্ক। ত্বকের উজ্জ্বলতা মানেই ত্বকের সৌন্দর্য, তা কিন্তু না! আপনি হয়তো আধুনিক কিছু চিকিৎসা নিয়ে ত্বকের  উজ্জ্বলতা বাড়িয়ে নিলেন কিন্তু এতে অনেক রকম দ্বিধা থাকে। উজ্জ্বল ত্বক বলতে ডার্মাটোলজি চিকিৎসকরা সেই ত্বককে বলে থাকেন, যা সুস্থ-স্বাভাবিক ও প্রাণবন্ত ও সঠিক আর্দ্রতা বজায় থাকে।

কারণ, আর্দ্রতা হারালে ত্বক মলিন বা ফ্যাকাশে হয়ে যায়। যদি কারও ত্বকের প্রতিটি কোষ থাকে সুস্থ থাকে তাহলে সুস্থ কোষের কারণে তার ত্বক নির্দিষ্ট পরিমাণ মেলানিন তৈরি করবে এবং ভালো থাকবে। কোষগুলো যদি কোনো কারণে ক্ষতিগ্রস্থ হয়ে যায়, তখন ত্বকের  উজ্জ্বলতা বা লাবণ্যতা হারায় এবং  এটিকে ত্বকের বুড়িয়ে যাওয়ার একটি কারণ হিসেবে ধরা হয়।

ত্বকের লাবণ্যতা বা উজ্জ্বলতা হারানোর প্রথম কারণ হিসেবে ধরা হয় বয়স। বয়স বাড়তে থাকলে ইলাস্টিন ও কোলাজেন কিন্তু কমতে থাকে। এতে ত্বক দৃঢ়তা ও স্থিতিস্থাপকতা হারায়। এরপর কোষগুলো ক্ষতিগ্রস্ত হতে থাকে, তখন বেশি মেলানিন তৈরি করে যা ত্বকের বয়সজনিত সমস্যার কারণ।

অন্যান্য কারণ: ত্বক বুড়িয়ে যাওয়ার জন্য প্রথমত আমরা বয়সজনিত কারণকেই প্রধান কারণ হিসেবে চিহ্নিত করি। এ ছাড়া অতিরিক্ত টেনশন, অনিদ্রা, অস্বাস্থ্যকর ও এলোমেলো জীবনযাপন, দুর্ঘটনাজনিত কারণ, অপুষ্টিকর খাবার ইত্যাদির জন্য  অনেকে অকালে বুড়িয়ে যান বা বয়সের লাবণ্যতা কমে যায় সঙ্গে বয়স বাড়ার গতিটাও যেন বেড়ে যায়। এ ছাড়া অতিরিক্ত প্রসাধনীর ব্যবহার, কিছু হরমোনজনিত সমস্যায়  অবাঞ্ছিত লোম দেখা দেয়। এক্ষেত্রে মেয়েদের টেস্টোস্টেরন হরমোনের পরিমাণ বেড়ে যায়। অনেক সময় প্রসাধনী বেশি ব্যবহারের কারণেও অবাঞ্ছিত লোম হয়।

এরপর আমাদের ত্বকের যে উপরিভাগের লেয়ার, এটি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। অনেক সময় কিছু কিছু অবাঞ্ছিত লোম একত্রিত হয়ে কালো কালো গোল গোল দাগ তৈরি করছে, মেছতাজনিত কারণ, অকালে চুল পড়ে গেলে অনেকে অতিরিক্ত চিন্তা করে বুড়িয়ে যান।

চিকিৎসা: সারা পৃথিবীতেই ডার্মাটোলজি বা অ্যায়েসথেটিকস চিকিৎসাকরা এই সমস্যা সমাধানে ফেস পিআরপি, লেজার, মাইক্রোনিডলিং, কেমিকেল পিলিং, মেজোথেরাপি, ফেইস সেপিং, ফ্রাক্টোনাল আর এফ, কিছু ছোট সার্জারি এবং বোটক্স ও ফিলার, বায়ো লিফট ইত্যাদির  মাধ্যমে ত্বকের তারুণ্যতা ধরে রাখার চিকিৎসা করে থাকেন।

লাইফস্টাইল সমাধান

চিন্তা বাদ দিন: অতিরিক্ত চিন্তা অকালে বুড়িয়ে যাওয়ার কারণ। চেষ্টা করুন চিন্তামুক্ত জীবন গড়তে।

সুঠাম দেহ  তৈরি করুন: শরীর যদি ঢিলেঢালা ধরনের হয় তবে আপনাকে অনেক বয়স্ক দেখাবে। কম বয়সী দেখাতে চাইলে দৈহিক গড়নের দিকে লক্ষ্য রাখুন। নিয়মিত ব্যায়াম ও পরিচর্যার মাধ্যমে শারীরিক গঠন সুঠাম রাখুন।

ত্বকের ভাঁজ: একটু বয়স হয়ে গেলে গলায় বা ত্বকে ভাঁজ পড়ে, ফলে অনেক বেশি বয়স্ক মনে হয় ছেলেদের। এই সমস্যা দূর করতে কোনো স্টাইলিশ কাপড় পরুন। ত্বকে ভাজের চিকিৎসা নিন।

মুখ ও ঠোঁটের যত্ন নিন: মুখ ও ঠোঁটের যত্নে সতর্ক হোন। ঠোঁট শুকনো দেখালে এবং ফেটে থাকলে অথবা কালচে ভাব থাকলে বিশ্রী দেখানোর পাশাপাশি বয়স্ক দেখায়। তাই নিয়মিত ঠোঁটের যত্ন নিন। ভালো লিপবাম ব্যবহার করুন।

চুলের স্টাইলে পরিবর্তন: যদি ভালো কোনো মানানসই স্টাইলিশ ছাঁটে চুল কাটতে পারেন তবে বয়স অনেক কম লাগবে। যদি চুল পড়ে টাক হয়ে থাকে তবে বা চুল গজাতে হেয়ার স্পেশালিস্টদের শরণাপন্ন হোন। এতে টাকের তুলনায় বেশ স্টাইলিশ ও কম বয়সী লাগবে দেখতে।

সাদা চুল বা পাকা চুল ঢেকে ফেলুন: যদি চুল পেকে সাদা হওয়া শুরু করে তবে চুলে রঙ বা মেহেদি করতে একবারেই পিছপা হবেন না। সতর্কতার সঙ্গে সকল সাদা চুল ঢেকে ফেলুন। এতে বয়স প্রায় ১০ বছর কমে যাবে। অঙ্গবিন্যাস সঠিক রাখুন। আপনি পিঠ বাঁকা করে দাঁড়ালে আপনাকে বয়স্ক মনে হবে।

সঠিক পোশাক নির্বাচন: সঠিক পোশাক নির্বাচন বয়স অনেকটা কমিয়ে দেয়ার ক্ষমতা রাখে। আপনাকে কোন ধরনের পোশাকে মানাবে এবং কোন রঙে আপনাকে ভালো দেখাবে এই সম্পর্কে সজাগ থাকুন।

ত্বকের নিয়মিত যত্ন নিন: ত্বক শুষ্ক ও রুক্ষ হয়ে গেলে বয়স অনেক বেশি মনে হয়। তাই ত্বককে হাইড্রেট ও ময়েশ্চারাইজ করুন। চিকিৎসকের সঙ্গে কথা বলে ময়েশ্চারাইজার ব্যবহার করুন এবং প্রচুর পানি পান করুন।

পজেটিভ মনে চলুন: ‘বুড়ো হয়ে গিয়েছি’? ‘বুড়ো হয়েছেন’ এই ধরনের চিন্তা বাদ দিন বা পজেটিভ মনে চলুন।

 

 

 

__________________________________________________________

 

 

 

 

 

 

 

__________________________________________________________

 

 

_______

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

  

 

 

 

 

Loading