শান্তি রায়চৌধুরী: অসমের গোলাঘাট জেলার ছোট্ট গ্রাম বারোমুখিয়ার এক দরিদ্র পরিবারে মেয়ে লভলিনা। দারিদ্রতা ছিল নিত্য সঙ্গী। বেড়ে উঠেছেন অভাব অনটনের মধ্যে। ছোটবেলায় স্বপ্ন দেখেছিলেন কিক বক্সার হওয়ার। আসলে ওর ইচ্ছা ছিল মোহাম্মদ আলীর মত বক্সারের আদর্শকে সামনে রেখে এগিয়ে যাওয়ার। সেটা নিয়ে হাজির হয়েছিলেন কোচ পদম বোড়োর কাছে। আজও সময় পেলে আলি-র ভিডিও দেখেন লভলিনা। সেটাই তাঁকে বাড়তি অনুপ্রেরণা জোগায় রিংয়ে নামার আগে। সেই কথাই একনিশ্বাসে বলে যান কোচ পদম। তাঁর হাতেগড়া ছাত্রী টোকিও থেকে পদক জিতে ফিরুক, সেই প্রার্থনাই একনাগাড়ে করে চলেছেন সাইয়ের প্রাক্তন কোচ। লভলিনার জীবনের গল্পটাও শুনলে চোখে জল আসবে। বারোমুখিয়ায় ছোট্ট ব্যবসা টিকেন বড়গোহাইঁয়ের। তাতে সংসার চলে না। বাধ্য হয়ে স্থানীয় চা-বাগানে মাসিক ২৫০০ টাকায় কাজ করতে হয়। দুই যমজ কন্যা আর স্ত্রী মামনিকে নিয়ে তাই অভাব অনটনের সংসার। তাদের তিনটি মেয়ে দেখে গ্রামের সবাই নাক সিঁটকাতো। আজ উপেক্ষার জবাব দিতে গিয়ে সেই স্মৃতি উসকে লভলিনা বলেছেন, গোটা গ্রামের মানুষ আমার বাবা-মাকে কথা শুনাতো। তাঁদের কোনও ছেলে ছিল না। শুধু তিন মেয়ে আমার মা সবসময় আমাদের উৎসাহিত করতেন ভালো কিছু করে নিন্দুকদের ভুল প্রমাণ করার জন্য। আজ আমরা তা করে দেখিয়েছি।” তবে এই আনন্দের মুহূর্তে লভলিনার পরিবারে দুঃখের চোরাস্রোত। কয়েকবছর ধরে অসুস্থ লভলিনার মা। গতবছর তাঁর কিডনি প্রতিস্থাপন করতে হয়। সেই সময় মায়ের শ্রুশ্রষাতে দিনরাত এক করেছেন ভারতীয় এই বক্সার। সংক্রামিত হয়েছিলেন করোনায়। ছেদ পড়েছিল অলিম্পিকের প্রস্তুতিতে। তবু লভলিনা লক্ষ্য থেকে বিচ্যুত হননি। লভলিনার বাবা টিকেটের কথায়,”এমন মেয়েদের নিয়ে গর্ব হওয়াই স্বাভাবিক।” সেই সঙ্গে তিনি বলেন,” আমার স্ত্রীকে নতুন জীবন দিয়েছে। টোকিও-র পদক ওর মায়ের আরোগ্যে পথ্যের কাজ করবে। ওর হাতে পদক দেখলে আমার স্ত্রী তাড়াতাড়ি সুস্থ হয়ে উঠবে।” একসময়ের গ্রামের প্রতিটি মানুষের তাচ্ছিল্যই যে তাদের এই যায়গায় নিয়ে গেছে এটা বলার অপেক্ষা রাখে না। আজ তাই লভলিনা গোটা গ্রামের মানুষের কাছে গর্বের মণিহার!