শান্তি রায়চৌধুরী: প্রকৃতিতে বইছে শীতের হাওয়া। শীতে প্রকৃতি সাজে নবরূপে। তাই প্রকৃতিপ্রেমী ভ্রমণপিপাসুদের জন্য বছরের এই সময়টা বেশ উপযোগী। তবে শীতকালে ভ্রমণে একটু বেশি সতর্ক থাকতে হয়। প্রস্তুতিটাও হতে হবে সময়োপযোগী। ভ্রমণ প্রস্তুতির ওপর নির্ভর করবে কতটা আনন্দময় হবে আপনার ভ্রমণ।

শীতকালীন ভ্রমণের খুঁটিনাটি নিয়ে আলোচনা হোক আজ’

সঠিক স্থান নির্বাচন:

শীতকালীন ভ্রমণে কোন স্থানটি উপযুক্ত তা মাথায় রাখতে হবে। এমন যায়গায় যাওয়া যাবে না,যা আপনার জন্য বিপদজনক। মনে রাখতে হবে, ভ্রমণ আপনার মনের খোরাক। তাই বলে ভ্রমণের জন্য ঝুঁকি নেওয়া অপ্রয়োজনীয়।

পর্যবেক্ষণ করুন ভ্রমণস্থলের আবহাওয়া:

আপনি যেখানে বেড়াতে যাবেন, সেখানকার আবহাওয়া সম্পর্কে ধারণা নিন। কারণ, এক আবহাওয়া থেকে অন্য আবহাওয়ায় গেলে শরীর ও মনে বিরূপ প্রভাব সৃষ্টি হয়। সেই আবহাওয়ার সঙ্গে খাপ খাইয়ে আপনি কতটা টিকে থাকতে পারবেন সেটা আগে ভাবুন।

ভ্রমণস্থলের খোঁজ-খবর নিন:

ভ্রমণস্থলের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি সম্পর্কে খোঁজ নিন। সেখানকার জরুরি কিছু ফোন নম্বর সংগ্রহ করুন। যদি ওই এলাকায় পরিচিত কেউ থাকেন, তাহলে তার ফোন নম্বর নিয়ে যেতে ভুলবেন না।

স্বপ্ন নয়, বাস্তবতা নিরিখে করুন ভ্রমণ প্লান:

মনে রাখবেন, আপনি হয়তো ডিসকভারির বিয়ার গ্রিলস না।  হয়তো আপনাকে প্রোটেকশন দেওয়ার টিম নেই। তাই নিজেকে বিয়ার গ্রিলস না ভাবাই ভালো। এমন কোথাও যাওয়া থেকে বিরত থাকুন, যেখানে বিপদ আপনার জন্য ওঁত পেতে আছে। অনেকেই শীতে বন জঙ্গলে বেড়াতে যেতে চায়। তবে মাথায় রাখবেন, শীতে মাটিতে ঝড়ে পড়া গাছের পাতার স্তুপের মধ্যে লুকিয়ে থাকতে পারে সাপ। তাই জঙ্গলে ঘুরলেও দৃশ্যমান মাটিতে পা ফেলুন। এ ছাড়া শীতে অনেক প্রাণীর প্রজননকাল। এ সময়ে ওরা আক্রমণাত্মক হয়ে ওঠে। পাহাড়ে, বনে, নদীতে কোনো প্রাণীর বাচ্চা দেখলেই তাকে ছুঁয়ে দেখাতে যাবেন না। এতে নিজেই আক্রমণের শিকার হতে পারেন। এক কথায় অবাস্তবতাকে বাস্তবে ফলানোর চেষ্টাই করবেন না।

যাতায়াত ও থাকা-খাওয়া  :

ভ্রমণের জন্য পরিবহণ একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। আর কোথায় থাকবেন-কি খাবেন তা আগে থেকেই ব্যবস্থা করা জরুরি। আপনার খাবার স্বাস্থ্যসম্মত কি-না তা যাচাই করে নিন। সঙ্গে কিছু শুকনো খাবার রাখতে পারেন। তেলে ভাজা খাবার পরিহার করাই ভালো। পাশাপাশি থাকার পরিবেশ ও নিরাপত্তা ব্যবস্থাও ভাবার বিষয়। আর তাঁবু ক্যাম্পিং করতে চাইলেও উপযুক্ত পরিবেশ দরকার। সেক্ষেত্রে দেশের সামাজিক-রাজনৈতিক পরিস্থিতিও বিবেচনার বিষয়।

দরকারি জিনিসপত্র নিন লিস্ট অনুযায়ী:

প্রয়োজনীয় জিনিসের একটা তালিকা করুন। তালিকা ধরে টিক চিহ্ন দিয়ে একটা একটা করে ব্যাগে ভরুন। এতে দরকারি কোনো কিছু ভুলে ফেলে যাবেন না। জলের পট, টয়লেট পেপার, মশা তাড়ানোর স্প্রে, ফোন ব্যাগ, ফ্লাস্ক, টর্চ লাইট, থ্রি পিন প্লাগ ও কনভার্টার, চাকু, রসি বা সুতা, মাস্ক, ভোটার আইডি কার্ড, ব্যাংক কার্ড, ভ্রমণের টিকিট, ফোনের চার্জার, পাসপোর্ট-ভিসা, কোভিড টিকার সনদ ও অন্যান্য কাগজপত্র গুছিয়ে নিন। তবে এসবের সবকিছুই সব জায়গায় দরকার হবে না। আপনার ভ্রমণের জায়গার ভিত্তিতে ‍আপনি তালিকা করুন। যা দরকার হবে না, তা বহন করার কোনো মানে নেই।

হালকা ওজনের ব্যাগ প্যাকিং:

শীতে বেড়াতে গেলে গরম জামার কারণে ব্যাগের ওজন বেড়ে যায়। তবে অতিরিক্ত ওজনের ব্যাগপত্র ভ্রমণকারীর জন্য মুশকিলের ব্যাপার। এজন্য ভ্রমণের ব্যাগটি হালকা ওজনের নিন। ব্যাগে কতটা মালামাল নেবেন তা নির্ভর করবে, কতদিন থাকবেন তার ওপর। পাহাড়ে বেড়াতে গেলে অবশ্যই ব্যাগের ওজন কমাতে হবে। টুথপেস্ট, ব্রাশ, আন্ডারওয়ার, গামছা বা তোয়ালে নিতে ভুলবেন না। মোটের উপর দরকারি জিনিস ছাড়া অন্যকিছু না নেয়াই ভালো। দেখেশুনে দরকারি জিনিস নেয়াই উত্তম। কারণ, ব্যাগ ভারী হলে তা আপনাকেই বহন করতে হবে। তাই আগেই ভাবুন, আপনার একান্ত কি কি লাগতে পারে। তবে সতর্ক থাকুন, ব্যাগের ভেতরে যেন জল না ঢোকে।

পোশাক:

শীতে গরম জামা সঙ্গে রাখা আবশ্যক। গাড় রঙের তাপ-নিরোধক কাপড় নিন। সোয়েটার, মাফলার, টুপি, মোজা, গ্লাভস সঙ্গে নিন। তবে খেয়াল রাখবেন অতিরিক্ত কাপড়ের ওজন যেন আপনার বিরক্তির কারণ না হয়। জুতা নির্বাচনে চিন্তা করুন। আরামদায়ক কেডস হলে ভালো। মেয়েদের ক্ষেত্রে হিল জুতা ব্যবহার না করাই ভালো। আপনি যেখানে যাচ্ছেন, সেখানে যদি বরফ পড়ে, তাহলে এমন জুতা নিন যা পা গরম রাখবে এবং বরফে পিছলেও যাবে না।

ওষুধ:

শীতে সর্দি-জ্বর,কাশি, শ্বাসকষ্ট বা হাঁপানি, নাকের প্রদাহ, চোখ ওঠা, ডায়রিয়া, আমাশয়, নিউমোনিয়া প্রভৃতি রোগ হয়ে থাকে। সম্ভব হলে প্রয়োজন মতো ওষুধ সঙ্গে রাখুন। জ্বর,পেট খারাপ, অ্যাসিডিটি, বমি, মাথা ধরার ওষুধ, ব্যান্ড এইড,অ্যান্টিসেপটিক, তুলা ও গজ সঙ্গে রাখুন। শারীরিক অন্য কোনো সমস্যা থাকলে প্রেসক্রিপশন অনুযায়ী ওষুধ নিন।

সতর্কতা:

শীতে সন্ধ্যার পর অথবা বেশি রাত পর্যন্ত হোটেলের বাইরে অবস্থান করবেন না। বিশেষ করে পরিবার নিয়ে ভ্রমণ করতে গেলে শিশুদের দিকে লক্ষ্য রাখবেন। যানবাহন থেকে নামার সময় কোনো মালপত্র ফেলে গেলেন কি না সেদিকে খেয়াল রাখুন। মানি ব্যাগ, ক্রেডিট কার্ড সাবধানে রাখবেন। সব টাকা মানিব্যাগে না রেখে কিছু টাকা অন্য জায়গায় রাখবেন। কার্ডে ও ব্যাগে আপনার ঠিকানা লিখে রাখবেন।  এতে হারিয়ে গেলেও ফেরত পাওয়ার সম্ভাবনা থাকবে।

বিশুদ্ধ জল পান করতে হবে। খোলামেলা খাবার খাওয়া যাবে না। ভ্রমণের সময় অপরিচিত লোকদের ব্যাপারে সতর্ক থাকুন। মনে রাখবেন, একটি সুন্দর ভ্রমণ প্রস্তুতি আপনার ভ্রমণকে আনন্দময় করে তুলবে।

Loading