একটা কিছু ভাজার পর দেখলেন কড়াইয়ে অনেকটা তেল বাকি রয়েছে। খামোকা তেল নষ্ট করবেন কেন,— এই ভেবে তেলটা কড়াইয়ে রেখে দিলেন। পরে ফের ওই তেল গরম করে আলু ভাজলেন। আলু ভাজার পরেও দেখলেন তেল আছে খানিকটা। তাই মাছটাও ভেজে নিলেন। এমন ঘটনা প্রতিদিন বেশিরভাগ গৃহকোণেই ঘটে। অর্থ বাঁচাতে এমন কাজ বহু গৃহস্থবাড়িতেই করা হয়। তবে জানলে অবাক হবেন, সাময়িকভাবে কিছু পয়সা বাঁচলেও ভবিষ্যতে কয়েক লক্ষ টাকা খরচ হয়ে যেতে পারেন এমন অভ্যেসে! কারণ চিকিৎসকরা বলছেন বারবার তেল গরম করে রান্না করলে শরীরে এক ধরনের প্রদাহ তৈরি হয় যা ডেকে আনতে পারে একাধিক জটিল ব্যাধি। সেই অসুখগুলির চিকিৎসা যথেষ্ট ব্যয়বহুল। প্রশ্ন হল কী কী অসুখ হতে পারে, প্রতিরোধের উপয়াই বা কী এবং তেলের ব্যবহারই বা কেমনভাবে করা উচিত?

কার্সিনোজেনিক তেল

যা কিছু কার্সিনোজেনিক সেই সমস্ত কিছুই শরীরে তৈরি করতে পারে ক্যান্সার। গবেষণায় দেখা গিয়েছে বারংবার তেল গরম করলে তৈরি হয় অ্যালডিহাইডস বা এক ধরনের বিষাক্ত উপাদান। ফলে এমন তেলে রান্না করলে শরীরে ওই বিষাক্ত উপাদান ঢোকে ও দেহে ফ্রি র্যাডিকেলস-এর মাত্রা বৃদ্ধি করে। ফ্রি র্যাডিকেলস দেহে প্রদাহের মাত্রা বাড়ায়। প্রদাহ বাড়লেই ডায়াবেটিসের আশঙ্কাও বেড়ে যায়। এমনকী কমে যায় রোগ প্রতিরোধক ক্ষমতাও। ফলে বারংবার নানা জীবাণু দ্বারা সংক্রামিত হওয়ার আশঙ্কাও বাড়ে।

এলডিএল কোলেস্টেরল

পুড়ে কালো হয়ে যাওয়া ধোঁয়া বেরনো তেলে রান্না করলে শরীরে এলডিএল বা খারাপ কোলেস্টেরলের মাত্রা বেড়ে যায়। রক্তে উচ্চ মাত্রার কোলেস্টেরল হার্ট ডিজিজ, স্ট্রোক এবং বুকে ব্যথার আশঙ্কাও বৃদ্ধি করে। তাই কোলেস্টরল, হার্ট ও স্ট্রোকজনিত সমস্যা থেকে দূরে থাকতে চাইলে একই তেলে বারবার রান্না করবেন না।

অ্যাসিডিটি

আজকাল কি আগের চাইতে বেশি পেটে, বুকে ও গলায় জ্বালা ভাব বেড়ে গিয়েছে? বারংবার একই তেল গরম করে রান্নার ফলাফল হতে পারে অ্যাসিডিটির সমস্যা। অতএব রাস্তার ধারে জাঙ্ক এবং ডিপ ফ্রায়েড খাদ্য খাওয়া বন্ধ করুন। দেখবেন ধীরে ধীরে সমস্যাও কমছে।

রাস্তার খাবার

ফ্রেঞ্চ ফ্রাই, ফ্রায়েড চিকেন, চাউমিন, মোগলাই , এগরোলের মতো খাদ্য আমরা যখন তখন খেয়ে থাকি। এই ধরনের খাদ্য শরীরে বিস্তর সমস্যা তৈরি করতে পারে। রাস্তার ধারে স্টলগুলিতে একইদিনে প্রচুর লোকের জন্য খাবার তৈরি করতে হয় বলে অনেকটা তেল গরম করে তারপর রান্না করা হয়। সেই তেল বেঁচে গেলেও দোকানদাররা সাধারণত তেল ফেলে দেন না। পরের দিন ফের তেল গরম করে রান্না করেন। এই ধরনের খাবার প্রতিদিন খেলে স্বাস্থ্যঝুঁকি এড়ানো যায় না।

একই তেল গরম করে রান্না করার অন্যান্য ঝুঁকি—

  • স্থূলত্ব • ওজন বৃদ্ধি • ডায়াবেটিস • হার্ট ডিজিজ • অ্যালঝাইমার্স।

কীভাবে বারংবার একই তেলের ব্যবহার কমাবেন?

বাড়িতে তৈরি খাদ্য খান: স্বাস্থ্য ভালো রাখতে চাইলে বাড়িতে তৈরি খাবার খাওয়া অভ্যেস করুন। তাছাড়া বাড়িতে খাবার তৈরি হলে তেল, কার্বোহাইড্রেট, ফ্যাট ও প্রোটিনের ব্যবহারের উপর আপনার নিয়ন্ত্রণ থাকবে। আপনি বুঝেশুনে খাবার খেতে পারবেন। ফলে ওজনবৃদ্ধি, স্থূলত্বের মত্য সমস্যা থেকেও মুক্তি পাবেন। ক্যান্সারের আশঙ্কাও কমবে।

তেলের ব্যবহার

অল্প অল্প মাত্রায় খাদ্য বস্তু নিন ও অল্প তেলে রান্না করুন। এর ফলে একসঙ্গে অনেকটা তেলের ব্যবহার হবে না। তেল কম ব্যবহার হলে দেহে ফ্যাটও ঢুকবে কম। কোলেস্টেরলের মাত্রা কমাতেও সুবিধা হবে।

_________________________________________________________________________

 

Loading