নিজস্ব প্রতিনিধি – আলোচিত প্যানডোরা পেপারসে বেরিয়ে আসছে একের পর এক বাঘা রাজনীতিক, ব্যবসায়ী, সেলিব্রেটির সম্পদের তথ্য গোপণের খবর। গতকাল রোববার প্রকাশ হওয়া এসব গোপন নথিতে বিশ্ব নেতা, রাজনীতিবিদ এবং বিলিয়নিয়ারদের গোপন সম্পদ এবং লেনদেনের প্রায় ১ কোটি ২০ লাখ নথি এখন বিবিসি প্যানারোমা, গার্ডিয়ানসহ বেশ কিছু সংবাদমাধ্যমের হাতে। এই প্যানডোরা পেপারসে উঠে এসেছে রিলায়েন্স ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেডের চেয়ারম্যান অনিল আম্বানির নাম। ভারতীয় সংবাদমাধ্যম ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ২০২০ সালের ফেব্রুয়ারিতে চীনের রাষ্ট্রায়ত্ত তিনটি ব্যাংকের সঙ্গে ঝামেলার জেরে লন্ডনের আদালতে অনিল আম্বানি নিজেকে দেউলিয়া দাবি করেছিলেন। তিনি দাবি করেছিলেন, তাঁর প্রকৃত সম্পদ শূন্য। সে সময় আদালত পর্যবেক্ষণে বলেন, অনিল আম্বানির বিদেশে কোনো স্বার্থ আছে কি-না এ বিষয়ে প্রশ্ন আছে। তাঁর বিদেশে সম্পদ থাকার বিষয়টি স্পষ্ট নয়। আম্বানি সে বিষয়ে আদালতকে কিছু জানাননি। এর তিন মাস পর অনিল আম্বানিকে নির্দেশ দেওয়া হয়, তিনি যেন ব্যাংগুলোকে ৭১ কোটি ৬০ লাখ ডলার পরিশোধ করেন। কিন্তু আম্বানি বলেন, এই টাকা পরিশোধের সামর্থ্য তাঁর নেই। বিশ্বের কোথাও কোনো সম্পত্তি নেই বলেও দাবি করেন তিনি।
প্যানডোরা পেপারসে দেখা গেছে, রিলায়েন্স এডিএ গ্রুপের চেয়ারম্যান অনিল আম্বানি ও তাঁর প্রতিনিধিরা জার্সি, ব্রিটিশ ভার্জিন আইল্যান্ডস (বিভিআই) ও সাইপ্রাসে কমপক্ষে ১৮টি অফশোর (বিদেশি) কোম্পানির মালিক। এই কোম্পানিগুলো ২০০৭ থেকে ২০১০ সালের মধ্যে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। এর মধ্যে ৭টি কোম্পানি ১৩০ কোটি ডলার ঋণ গ্রহণ ও বিনিয়োগ করেছে।
ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, জার্সিতে অনিল আম্বানির মালিকানাধীন তিনটি কোম্পানি রয়েছে। কোম্পানিগুলো হলো—ব্যাটিস্টে আনলিমিটেড, রেডিয়াম আনলিমিটেড ও হুই ইনভেস্টমেন্ট আনলিমিটেড। এই কোম্পানিগুলো ২০০৭ সালের ডিসেম্বর থেকে ২০০৮ সালের জানুয়ারির মধ্যে প্রতিষ্ঠিত হয়। ব্যাটিস্টে আনলিমিটেড ও রেডিয়াম আনলিমিটেড এডিএ গ্রুপের হোল্ডিং কোম্পানি রিলায়েন্স ইনোভেঞ্চারস প্রাইভেট লিমিটেডের মালিকানাধীন। হুই ইনভেস্টমেন্ট আনলিমিটেড এএএ এন্টারপ্রাইজেস লিমিটেডের মালিকানাধীন। এটি রিলায়েন্স ক্যাপিটালের একটি প্রোমোটার কোম্পানি।
ব্যাটিস্টে আনলিমিটেড ও রেডিয়াম আনলিমিটেডের রেকর্ড দেখাচ্ছে, ব্যাটিস্টে আনলিমিটেডের নামে ৫০ কোটি ডলার এবং রেডিয়াম আনলিমিটেডের নামে ২২ কোটি ডলার ঋণ বা বিনিয়োগ করা হয়েছে। দ্য গার্ডিয়ানের প্রতিবেদনে বলা হয়, নতুন এই আর্থিক কেলেঙ্কারিতে নাম উঠে এসেছে বিভিন্ন দেশের সরকারের মন্ত্রী, মেয়র, সামরিক বাহিনীর জেনারেল, এমনকি বিচারকের। বিশ্বের ৯০টি দেশের রাজনৈতিক নেতা, সরকারপ্রধান কিংবা ঊর্ধ্বতন সরকারি কর্মকর্তার নাম রয়েছে এই প্যানডোরা পেপারসে।
ব্রিটেনে ক্ষমতাসীন কনজারভেটিভ পার্টির বড় বড় দাতাদের নাম উঠে এসেছে এই নতুন নথিতে। ফলে ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসন এখন সত্যিকার অর্থেই বিপাকে পড়েছেন। রয়েছেন বিশ্বের শতাধিক বিলিয়নিয়ার, তারকা, রক তারকা ও ব্যবসায়ী নেতারা। গোপন সম্পদের তালিকায় গোপন ব্যাংক অ্যাকাউন্ট যেমন রয়েছে, তেমনি রয়েছে বিলাসবহুল ইয়াট, বাড়ি, ম্যানসন, কম্বোডিয়া থেকে লুট করা অ্যান্টিক, পাবলো পিকাসোর চিত্রকর্ম, ম্যুরাল কিংবা বাঙ্কসির গ্রাফিতি।