নিজস্ব প্রতিনিধি – পশ্চিমবঙ্গের সমুদ্র উপকূলবর্তী এলাকায় ধরা পড়ছে না ইলিশ। এতে সারা রাজ্যে দেখা দিয়েছে ইলিশের আকাল। ছোট আকারের কিছু ইলিশ মিললেও তা ধরার ওপর রয়েছে সরকারি নিষেধাজ্ঞা। এর মধ্যেই জাটকা বিক্রি বন্ধে রাজ্যের বিভিন্ন এলাকায় চালানো হচ্ছে অভিযান। পশ্চিমবঙ্গে টানা দুই মাস পর গত ১৪ জুন ইলিশ ধরার ওপর নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করে রাজ্য সরকার। এরপর থেকে জাটকা ইলিশ বিক্রি বন্ধে নজরদারি করছে মৎস্য দপ্তর। রাজ্যের পূর্ব মেদিনীপুর এবং উত্তর ও দক্ষিণ ২৪ পরগনার সমুদ্র উপকূলবর্তী এলাকায় বিভিন্ন মৎস্য আড়তে অভিযান শুরু করেছেন মৎস্য দপ্তরসহ প্রশাসনিক পর্যায়ের কর্মকর্তারা। অভিযান চলছে ডায়মন্ড হারবার, দীঘা, নামখানার বড় বড় মাছের আড়তগুলোয়ও। দীঘার ফিশারম্যান অ্যান্ড ফিশ্ ট্রেডার্স অ্যাসোসিয়েশনের সদস্য নবকুমার প্যায়রা সাংবাদিকদের বলেন, সমুদ্রে দূষণ ও দলের তাপমাত্রা বেড়ে যাওয়ায় ইলিশের প্রজনন ব্যাহত হচ্ছে। এতে ইলিশের আশানুরূপ বৃদ্ধি হচ্ছে না। তা ছাড়া আগের মৌসুমগুলোয় ইলিশ ছাড়া পমফ্রেট, ভোলা, ভেটকি, লোটে মাছও ধরা পড়ত। এবার তা–ও মিলছে না। ফলে ইলিশের পাশাপাশি অন্য মাছের বাজারও ফাঁকা। নবকুমার আরও জানান, দীঘায় এখন ২০০ থেকে ৩০০ গ্রাম ওজনের ইলিশ বিক্রি হচ্ছে ৬০০ থেকে ৬৫০ টাকা প্রতি কেজি। ৫০০ গ্রাম ওজনের ইলিশ প্রতি কেজি বিক্রি হচ্ছে ৭০০ থেকে ৮০০ টাকাতে। আর ১ কেজি ওজনের ইলিশ বিক্রি হচ্ছে ২ হাজার ২০০ থেকে ২ হাজার ৫০০ টাকা প্রতি কেজি। কলকাতার ফিশ্ ইম্পোটার্স অ্যাসোশিয়েশনের সভাপতি অতুল দাস প্রথম আলোকে বলেন, ‘ধারণা ছিল, রথযাত্রার পর আমাদের জালে ইলিশ ধরা দেবে। কিন্তু এখনো সেভাবে ধরা দিচ্ছে না। যা ধরা দিচ্ছে, তা অত্যন্ত ছোট আকারের। এই ইলিশ ধরার ওপর সরকারের নিষেধাজ্ঞা এখনো বলবৎ রয়েছে। সেই নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে অনেক মৎস্যজীবী ছোট আকারের ইলিশ ধরে গোপনে বিক্রি করছেন।’
এদিকে জাটকা ইলিশ ধরা নিয়ে হুঁশিয়ারি দিয়েছেন রাজ্যের মৎস্যমন্ত্রী অখিল গিরি। তিনি বলেছেন, ছোট ইলিশ ধরার ওপর এখনো নিষেধাজ্ঞা রয়েছে। কেউ এই ইলিশ ধরলে তাঁর ট্রলারের লাইসেন্স বাতিল করা হবে। নদী এবং সমুদ্রে ইলিশের উৎপাদন বাড়ানোর লক্ষ্যে এই পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। পশ্চিমবঙ্গের পূর্ব মেদিনীপুর এবং উত্তর ও দক্ষিণ ২৪ পরগনার সমুদ্র উপকূলবর্তী এলাকায় অন্তত ১০ থেকে ১২ হাজার মাছ ধরার ট্রলার রয়েছে। ১৪ জুন ইলিশ ধরার ওপর নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারের পর সেদিন রাত থেকেই মাছ ধরতে বের হন জেলেরা। দক্ষিণ ২৪ পরগনার নামখানা, কাকদ্বীপ, ফ্রেজারগঞ্জ, রায়দীঘি, কুলতলী, পাথর প্রতিমা, সাগরদ্বীপ, ডায়মন্ড হারবার, বকখালি, ফলতা, হরিরামপুর, সীতারামপুর ও নৈনান এলাকার কয়েক হাজার ট্রলার ইলিশ ধরতে সমুদ্রে পাড়ি দেয়। এ ছাড়া পূর্ব মেদিনীপুর এবং উত্তর ২৪ পরগনারও সমুদ্র উপকূল এলাকার কয়েকশ জেলে ট্রলার নিয়ে সমুদ্রে ইলিশ ধরতে যান। তবে সে সময় সাগরে বৈরী আবহাওয়ার কারণে ট্রলার নিয়ে ফিরে আসতে হয় অনেককে। আর এখন বড় মাছ ধরা না পড়ায় অনেক জেলেই ফিরছেন ছোট ইলিশ নিয়ে। খরচ পোষাতে সেসব ইলিশই তাঁরা গোপনে বিক্রি করছেন পাইকারদের কাছে।