নিজস্ব প্রতিনিধি  – একইসঙ্গে রাজ্যে টানা ৩৪ বছর (২০১১ সালের আগ পর্যন্ত) ক্ষমতায় থাকা সিপিআইএম ও কংগ্রেস যেন বিলুপ্তপ্রায় রাজনৈতিক দল হয়ে গেলো একুশের নির্বাচনে। ‘অব কি বার দোশো পার’ অর্থাৎ এবার দুশো আসন পার করবো- এমন স্লোগান তুলেছিলেন মোদী ও অমিত শাহ। কিন্তু বিজেপির সেই স্লোগান ব্যুমেরাং হলো বাংলার দিদির দিকে। হ্যাটট্রিক করলেন তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দোপাধ্যায়।

বাংলা আরও একবার আস্থা রাখলো দিদির ওপরেই। ২১৩ আসন নিয়ে তৃতীয়বারের মতো রাজ্যে সরকার গঠন করেতে যাচ্ছেন দিদি। তবে রাজ্যের ইতিহাসে এই প্রথম কোনো দল বিপুল আসনে জয়ী কিন্তু হেরে গেলেন দলের প্রধান।

বিজেপিকে এবারের মতো রথ থামাতে হয় ৭৭ আসন নিয়ে। ক্ষমতা দখল না করতে পারলেও গতবারের ৩ থেকে ৭৭টি আসন মোটেও খারাপ ফল নয়, এমটাই জানিয়েছন রাজ্য বিজেপির সভাপতি দিলীপ ঘোষ। তিনি বলেন, মানছি রাজ্যবাসী মমতাকেই চেয়েছেন। তাই এই ফল। তবে মমতাও পশ্চিমবঙ্গে একদিনে এই সফল পথ দেখেননি। বহু বছর পর ২০১১ সালে ক্ষমতায় আসেন। তবে একুশের নির্বাচন এও দেখালো দল জিতলেও সুপ্রিমো হারলো। রাজ্যবাসীকে ধন্যবাদ আমাদের এতগুলি আসন দেওয়ার জন্য। ২০১১ সালে পশ্চিমবঙ্গ বিধানসভা নির্বাচনে তৃণমূল কংগ্রেস-জাতীয় কংগ্রেসের-বামদল এসইউসিআই যৌথভাবে জোট বেঁধে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে ৩৪ বছরের বামফ্রন্ট সরকারের পতন ঘটিয়েছিল। এককভাবে ১৮৪টি আসনে জয়লাভ করে তৃণমূল কংগ্রেস। কংগ্রেস পায় ৪২টি এবং এসইউসিআই ১টি। ফলে জোট হিসেবে পেয়েছিল ২২৮টি আসন। সেবার বামফ্রন্ট পেয়েছিল ৬২টি আসন। এবং বিজেপি ১ ও গোর্খা জনমুক্তি মোর্চা পায় ৩টিআসন। সেবার বিজেপি ও গোর্খা জনমুক্তি মোর্চা জোট বেঁধেছিল। ২০১৬ -র ভোটে ২৯৪টি আসনের মধ্যে তৃণমূল পেয়েছিল ২১১টি আসন। বিজেপি ৩টি, কংগ্রেসের ঝুলিতে ছিল ৪৪টি এবং বামফ্রন্ট পেয়েছিল ৩২টি। এছাড়া অন্যান্য দল মিলিয়ে ৪টি আসন। সেবারও বাম-কংগ্রেস জোট হয়েছিল। এবার পশ্চিমবঙ্গে এখন বিরোধীদল বলতে শুধুই বিজেপি। ধুয়েমুছে সাফ হয়ে গেলো বাম এবং কংগ্রেস। একটি মুখ থাকছে না অ্যাসেম্বলিতে। মাত্র দক্ষিণ ২৪ পরগনার ভাঙড় আসনে একটি আসন পেয়েছে আব্বাস সিদ্দিকির দল ইন্ডিয়ান স্যেকুলার ফ্রন্ট। তবে এটা বাস্তব একুশের নির্বাচনে বাংলা তার নিজের মেয়ের উপরেই ভরসা রাখলো। মোদী-অমিত শাহ এমনকী সর্বভারতীয় সভাপতি জেপি নাড্ডাসহ বিজেপির শীর্ষস্তরের প্রায় সব নেতানেত্রীদের লাগাতার রাজ্যে হাইভোল্টেজ প্রচার, মাটি কামড়ে পড়ে থাকাও কাজে এলো না এ যাত্রায়। পরিবর্তন নয়, রাজ্যবাসী ভরসায় সিলমোহর পড়লো মমতার প্রত্যাবর্তনেই।

Loading