নিজস্ব প্রতিনিধি – আগামী চার বছরে এসব সরকারি সম্পদ বিক্রি করা হবে ভারতের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধিকে আরো গতিশীল করতে। ভারতীয় মুদ্রায় এর পরিমাণ ৬ লাখ কোটি টাকা। রাজস্ব আদায় কমে যাওয়ায় বাজেট ঘাটতি মোকাবেলায় এধরনের রাষ্ট্রায়াত্তব সম্পদ বিক্রি থেকে অন্তত ১.৭৫ ট্রিলিয়ন টাকার যোগান দেওয়া হবে। বিশ্বের ৫ম বৃহত্তম অর্থনীতির এ দেশটি অবকাঠামো উন্নয়নে ব্যাপক বরাদ্দ দেওয়ার পরিকল্পনা হাতে নিয়েছে। সড়ক, বিমান বন্দর, রেলওয়ে স্টেশন, গ্যাস পাইপলাইন, ওয়ারহাউসিং সুবিধা বেসরকারি খাতে ছেড়ে দেওয়া হবে। এসব স্থাপনা দীর্ঘমেয়াদী লিজ দেওয়া হবে। ভারত সরকারের থিংক ট্যাং হিসেবে পরিচিত নিতি আয়োগের প্রধান অমিতাভ কান্ত বলেন এধরনের সরকারি সম্পদ বিক্রির ফলে বেসরকারি বিনিয়োগ বাড়বে এবং অর্থনীতিতে প্রাণ সঞ্চার হবে। শুধু সড়ক খাতেই ২৫ বিলিয়ন ডলারের সম্পদ বিক্রি করা হবে। রেলওয়ের সম্পদ বিক্রি করা হবে ২০.৪ বিলিয়ন ডলারের। জালানি ও বিদ্যুৎ সঞ্চালন লাইনে সম্পদ ছেড়ে দেওয়া হবে ৬ বিলিয়ন ডলারের। প্রাকৃতিক গ্যাস সম্পদ বিক্রি করা হবে ৫.৪ বিলিয়ন ডলারের। টেলি যোগাযোগ খাতে অন্তত ৫.৩ বিলিয়ন ডলারের প্রকল্প বিক্রি করা হবে। ভারত সরকারের এধরনের কৌশলের লক্ষ্য হচ্ছে প্রাতিষ্ঠানিক এবং দীর্ঘমেয়াদী বেসরকারি বিনিয়োগকে সরকারি সম্পদে যৌথ বিনিয়োগে পরিণত করা যা আগামীতে আরো নতুন ধরনের বিনিয়োগের সুযোগ সৃষ্টি করবে। একই সঙ্গে কোভিড মহামারিতে অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধারে এ কৌশল কাজে লাগবে। বাজেট ঘাটতি মোকাবেলায় ভারতের সরকারি সম্পদ বিক্রির মাধ্যমে প্রাপ্ত অর্থ কাজে লাগানো হবে। গত বছর ভারতের বাজেট ঘাটতি ৯.৩ থেকে এবছর তা হ্রাস পেয়ে দাঁড়িয়েছে ৬.৮ শতাংশে। এছাড়া লাইফ ইন্স্যুরেন্স কর্পোরেশন অব ইন্ডিয়ার অংশীদারিত্ব বিক্রি করা হবে। একই সঙ্গে ভারত পেট্রোলিয়াম কর্পোরেশন, এয়ার ইন্ডিয়া লিমিটেডের অংশীদারিত্ব বা শেয়ারও বিক্রি করা হবে। সড়ক খাত থেকে ১.৬ ট্রিলিয়ন, রেল থেকে দেড় ট্রিলিয়ন, বিদ্যুৎ ও গ্যাস খাত থেকে ১ ট্রিলিয়ন, গ্যাস পাইপলাইন থেকে ৫৯০ বিলিয়ন ও টেলিযোগাযোগ খাত থেকে ৪শ বিলিয়ন টাকা আহরণ করা হবে। একই সঙ্গে পাবলিক ওয়ারহাউস, সিভিল এভিয়েশন, বন্দর অবকাঠামো, স্পোর্টস স্টেডিয়াম ও খনিজ খাত থেকে আরো ১ ট্রিলিয়ন টাকা আহরিত হবে বলে আশা করছে ভারত সরকার। এদিকে গত এপ্রিল-জুন মাসে ভারতের অর্থনীতি সম্প্রসারিত হয়েছে ১৮ শতাংশ। গত তিন মাসে ভারতের জিডিপি বৃদ্ধি পেয়ে দাঁড়িয়েছে সাড়ে ১৮ শতাংশে। স্টেট ব্যাংক অব ইন্ডিয়ার গবেষণায় দেখা যাচ্ছে কোভিড মহামারির কারণেই প্রবৃদ্ধি সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। তবে ভারতের অর্থনীতিতে গ্রস ভ্যালু এ্যাড ১৫ শতাংশ বৃদ্ধি পাবে বলা হচ্ছে। বাণিজ্যিক কার্যক্রম সূচকও বৃদ্ধির পথে রয়েছে। ৪ হাজার ৬৯টি কোম্পানির প্রবৃদ্ধির হার ২৮.৪ শতাংশে দাঁড়িয়েছে। তবে ভারতে রাষ্ট্রায়াত্ত্ব সম্পদ বিক্রির এ পরিকল্পনা কতদূর বাস্তবায়ন হবে তা নির্ভর করছে বিনিয়োগকারীদের স্বার্থ সংরক্ষণ কতটুকু নিশ্চিত করা হবে তার ওপর। এমন মন্তব্র করে সিঙ্গাপুরের নোমুরা হোল্ডিংসের অর্থনীতিবিদ সোনাল বার্মা বলেন এধরনের সম্পদ বিক্রির পর তা পুনরায় অবকাঠামো খাতে বিনিয়োগই সরকারের প্রধান লক্ষ্য হওয়া উচিত।

Loading