নিজস্ব প্রতিনিধি -একজন দলের সাংসদ, অন্যজন তৃণমূল ছেড়ে আসা রাজ্যের প্রাক্তন মন্ত্রী। সৌমিত্র খাঁ ও রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায়। এই দুজনকে নিয়ে বিড়ম্বনায় দল। তবে সবচেয়ে অস্বস্তি দলের যুব মোর্চার রাজ্য সভাপতিকে নিয়েই। সৌমিত্র খাঁ-র প্রকাশ্যে ফেসবুক লাইভকে ভালভাবে নিচ্ছে না কেন্দ্রীয় নেতারা। দলের অন্দরের খবর, বিজেপির মতো শৃঙ্খলাবদ্ধ পার্টিতে সোশ্যাল মিডিয়ায় যেভাবে দলের নেতাদের প্রকাশ্যে সমালোচনা করেছেন বিষ্ণুপুরের সাংসদ, তা দল বিরোধী কাজের পর্যায়েই পড়ে। এমনটাই মনে করছে শীর্ষ নেতৃত্ব। দলের রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষ ও বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী সম্পর্কে প্রকাশ্যে যেসব কথা সৌমিত্র খাঁ বলেছেন সেজন্য খুব শীঘ্রই তাঁর জবাব তলব করা হতে পারে। শীর্ষ নেতারা মনে করছেন, দলের কোনও রাজ্যের যুব মোর্চার সভাপতি এবং কোনও সাংসদ ফেসবুকে এভাবে দলের নেতাদের বিরুদ্ধে তোপ দেগেছেন, এরকম নজির বিজেপিতে ব্যতিক্রম। শুধু তাই নয়, আগামীদিনে যুব মোর্চার রাজ্য সভাপতি পদে অন্য কাউকে দায়িত্ব দেওয়ার বিষয়টি নিয়ে দলের মধ্যেও যে ভাবনা চিন্তা শুরু হয়ে গিয়েছে, এমনটাই খবর মিলেছে। কারণ, চল্লিশের বেশি বয়স এ এরকম কাউকে যুব মোর্চায় রাখা যায় না। সেই কারণ দেখিয়ে আগামী দিনে সৌমিত্র খাঁকে হয়তো যুব মোর্চা থেকে অব্যাহতি দেওয়া হতে পারে। এর আগেও গত বছর পুজোর সময় যুব মোর্চার দায়িত্ব ছাড়তে চেয়েছিলেন সৌমিত্র। যুব মোর্চার কমিটিতে রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষের মনোনীতদের জায়গা দেওয়া নিয়ে দিলীপবাবুর বিরুদ্ধে সরব হয়েছিলেন সৌমিত্র। সেটাও ভালভাবে নেয়নি দল। আর এবার প্রকাশ্যে রাজ্যের বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারীর বিরুদ্ধে বিস্ফোরকভাবে সরব হওয়ায়, পার্টি বিষয়টিকে কড়াভাবেই দেখছে। এবং তা দিলীপ ঘোষের বক্তব্য থেকেই স্পষ্ট হয়েছে। সৌমিত্র খাঁ প্রসঙ্গে বৃহস্পতিবার দিলীপবাবু বলেন, “একজন দায়িত্বশীল নেতা সাংসদকে এসব শোভা পায় না। পার্টিতে ব্যবস্থা আছে। যা হওয়ার হবে। পার্টিতে বিতর্ক তৈরি করে প্রচারে আসাটা রাজনীতি নয়। বারবার এরকম নাটক করলে লোকের নজরে নেতার পদের গুরুত্ব কমে যায়।”
অন্যদিকে, ভোটের আগে তৃণমূল ছেড়ে গেরুয়া শিবিরে আসা রাজ্যের প্রাক্তন মন্ত্রী রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায়কে নিয়েও যথেষ্ট অস্বস্তিতে বঙ্গ বিজেপি। ভোটে হেরে যাওয়ার পর বিজেপির সঙ্গে দূরত্ব রেখে চলছেন তিনি। পাশাপাশি তাঁর দুটি ফেসবুক পোস্ট দল বিরোধী বলেই মনে করছেন রাজ্য নেতারা। মুখ্যমন্ত্রী ও তৃণমূল সরকারের পাশে দাঁড়িয়ে শুভেন্দু অধিকারীকে নিশানা করে দুবার ফেসবুক পোস্ট করে দলের অস্বস্তি বাড়িয়েছেন রাজীব। বিজেপির রাজ্য কমিটির আমন্ত্রিত সদস্য রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায়। কিন্তু বারবার তাঁর দল বিরোধী অবস্থান ও ফেসবুক পোস্ট নিয়ে কেন কোনও ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে না তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে পার্টির অন্দরে। রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায় তাঁর অবস্থান স্পষ্ট করুক, চাইছেন বিজেপির রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষও। রাজীব প্রসঙ্গে বৃহস্পতিবার দিলীপবাবু বলেছেন, কিছু কিছু লোক আছেন তাঁরা ঠিক করতে পারছেন না, কী করবেন, কোথায় যাবেন। যদিও দিলীপ ঘোষের বক্তব্য, রাজীব দলের কোনও পদাধিকারী নন। কিন্তু দলের নিচুতলার নেতা ও কর্মীদের একাংশের কথায়, জেলা নেতারা দল বিরোধী কোনও কথা বললে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে, তাহলে রাজীবদের বিরুদ্ধে কেন নেওয়া হবে না। সৌমিত্র প্রসঙ্গে বলতে গিয়ে দিলীপ ঘোষ এও বলেন, পাগলামির একটা সীমা আছে। রাজনীতিতে জোকারদের সব সময় একটা গুরুত্ব থাকে। কিন্তু তাতে নিজের ওজন কমে যায়।