নিজস্ব প্রতিনিধি – পশ্চিমবঙ্গে বিরাট জয়ের পর আগামী ২০২৪ সালে লোকসভা নির্বাচনে মোদির নেতৃত্বাধীন বিজেপিকে ভারত থেকে হঠাতে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কেই নেতৃত্ব দেয়ার কথা তুলেছে বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলো। বিধানসভায় তৃণমূলের বিরাট সাফল্যের পর ভারতের বিভিন্ন আঞ্চলিক দলের শীর্ষ নেতারা সেই বার্তাই পাঠিয়েছেন তৃণমূল নেত্রীকে। তাদের উচ্ছ্বাস, অভিনন্দন এবং বিবৃতি থেকে স্পষ্ট; তৃণমূল নেত্রীকে সামনে রেখে ২০২৪ সালের লোকসভা নির্বাচনের লড়াইয়ে কার্যত এখন থেকেই শুরু হয়ে গেল।
সমাজবাদী পার্টি থেকে শিবসেনা, আপ থেকে ন্যাশনাল কনফারেন্স— সমস্ত শীর্ষবিরোধী নেতারাই মোদি-অমিত শাহের সঙ্গে মমতার এই লড়াকু ভূমিকার অকুণ্ঠ প্রশংসা করেছেন।
আগামী বছরেই উত্তরপ্রদেশে বিধানসভা নির্বাচন। পশ্চিমবঙ্গের পরে এই বিধানসভা ভোটটিও ২০২৪ সালের লোকসভা ভোটের প্রশ্নে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ হিসেবেই মনে করা হচ্ছে। রাজ্যের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী তথা এসপি নেতা অখিলেশ সিংহ যাদব টুইটে বলেছেন, ‘বাংলার সচেতন মানুষ, লড়াকু নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এবং তৃণমূলের অক্লান্ত পরিশ্রম করা নেতা ও কর্মীদের জানাই আন্তরিক অভিনন্দন। তারা বিজেপির ঘৃণার রাজনীতিকে বাংলায় হারিয়েছেন। বিজেপি যেভাবে অপমানজনক ঠাট্টার সুরে ‘দিদি ও দিদি’ বলে গেছে, আজকের ফল তার মুখের মতো জবাব।’ তার সহনেতা কিরণময় নন্দ খোলাখুল জানিয়েছেন, ২০২৪ সালে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নেতৃত্বে বিজেপির বিরুদ্ধে লড়তে প্রস্তুত তার দল। বিরোধীশিবিরের অধিকাংশ নেতার মতে, বাংলার এই রায় বিজেপির ‘এক রাষ্ট্র এক দল’ অথবা হিন্দুরাষ্ট্র গঠন সংক্রান্ত প্রচারের বিরুদ্ধে একটি জিহাদ। তৃণমূল নেতা সুখেন্দুশেখর রায় বলেন, এ দিনের এই ফলাফল আঞ্চলিক আশার জয়। বিজেপির দিল্লিকেন্দ্রিকতা এবং গোটা দেশকে দিল্লির বশংবদ করে তোলার বিরুদ্ধে বাংলার মানুষ ভোট দিয়েছেন। গোটা দেশের ক্ষমতাকে দিল্লির করিডরে কুক্ষিগত করার প্রয়াসের বিরুদ্ধে রায় দিয়েছেন।
শুধু পশ্চিমবঙ্গই নয়, কেরল বা তামিলনাড়ুর ভোটেও ক্ষমতার কেন্দ্রীকরণের বিরুদ্ধে, আঞ্চলিক শক্তির বিকাশের পক্ষেই ফলাফল দেখা গেছে।
কংগ্রেসের মুখপাত্র রণদীপ সিংহ সুরজেওয়ালা মমতা এবং বাংলার মানুষকে অভিনন্দন জানিয়ে বলেন, ‘বিজেপির টাকা এবং পেশিশক্তি এবং বিভেদকামী রাজনীতির বিরুদ্ধে লড়াইটা ছিল। রাজ্যের মানুষ ঘৃণা এবং বিভেদের বদলে শান্তি এবং সৌভ্রাতৃত্বকেই বেছে নিয়েছেন।’
শিবসেনা প্রধান উদ্ধব ঠাকর এক টুইটে লিখেছেন, ‘বাংলার বাঘিনী একাই লড়়ছিলেন। প্রধানমন্ত্রী, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী, অন্য রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীরা তাকে হারাতে পশ্চিমবঙ্গে গিয়েছিলেন। সব শক্তিকে হারিয়ে তিনি জয়ী হয়েছেন।’’
তৃণমূল নেত্রীর পাশে দাঁড়িয়েছে কাশ্মীর। পিডিপি প্রেসিডেন্ট মেহবুবা মুফতির টুইটে লিখেছেন, ‘মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এবং তৃণমূলের কর্তাদের অভিনন্দন এই জয়ের জন্য। বিভেদকামী এবং ধ্বংসকামী শক্তিকে হারানোর জন্য পশ্চিমবঙ্গের মানুষকে কুর্নিশ।’
এদিকে, জয়ের দিনই দেশবাসীকে বিনামূল্যে কোভিড প্রতিষেধক দেওয়ার জন্য মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়, শরদ পওয়ার, সীতারাম ইয়েচুরি, উদ্ধব ঠাকরে, সোনিায় গান্ধীসহ মোট তের জন বিরোধী নেতা একটি যৌথ বিবৃতি দিয়েছেন। এটি একটি জোট গড়ে তোলার ইশারা। যদিও সোনিয়া গান্ধী রয়েছেন, কিন্তু ২০২৪ সালে বিজেপি হটাতে বিরোধী জোটে অগ্রণী ভূমিকা নিতে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কেই দেখা যাবে বলে মনে করছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা।