নিজস্ব প্রতিনিধি – চোখের সামনে সারি সারি পাহাড়। নানা আকৃতি, নানা রং। সামনের পাহাড়গুলো স্পষ্ট। পিছনের পাহাড়গুলো অনেকটা আবছা। রিসোর্টের এক কর্মচারি জানালেন, ওগুলো সবই সিকিমের পাহাড়।
পেডং-এ প্রথমবার এসে প্রকৃতির অসীম সুন্দর রূপ দেখার পাশাপাশি পাহাড়ের মানুষের জীবনযাত্রা খুব কাছ থেকে দেখার সৌভাগ্য হয়েছিল। তারপর কতবার যে আসা! স্বাভাবিক ভাবেই দৃঢ় হয় সম্পর্কের বাঁধন। সিকিমের বর্ডারে অবস্থিত এই ছোট্ট জনপদ কালিম্পং জেলার মধ্যেই। ঐতিহাসিক দিক থেকে এর গুরুত্ব অসীম। প্রাচীন সিল্ক রুট যাওয়ার একটি পথ গিয়েছে পেডং হয়ে। কালিম্পং থেকে পেড়ং মাত্র ২০ কিলোমিটার দূরে। এখানে খ্রিস্টান ও বৌদ্ধধর্মের প্রচার ও প্রসার ঘিরে তৈরি হয়েছে গুম্ফা, গির্জা ইত্যাদি। ভারতে প্রথম চা উৎপাদনের সঙ্গেও জড়িয়ে পেডং-এর নাম। ওক, পাইন, বার্চ ও দেওদারের ছায়ামাখা সবুজে ভরা পাহাড়ি গ্রাম হল পেডং। পশ্চিমবঙ্গ ও সিকিমের সীমান্তে পাঁচ হাজার ফুট উচ্চতায় অবস্থিত সুন্দর পাহাড়ি গ্রাম এটি। পেডং এর ক্রস হিল থেকে কাঞ্চনজঙ্ঘা, কাব্রু ও পান্ডিম শৃঙ্গ সুন্দর ভাবে দেখা যায়। তিস্তার অপরূপ সৌন্দর্য ও ঢেউ খেলানো চা-বাগানের অপরূপ শোভা পেডং–এর সম্পদ। আর অন্যান্য উল্লেখযোগ্য জায়গাগুলো হল- রামি ভিউ পয়েন্ট, সাইলেন্ট ভ্যালি, ভুটানিদের হাতে গড়া সাংচেন দোরাজি গুমফা, ১৮৩৭ সালে গড়া পেডং মনাস্ট্রি, ফরাসিদের তৈরি সেক্রেড হার্ট গির্জা এবং দামসাং ফোর্ট। পেডং মানেই যেন রঙিন ফুল আর সবুজের অশেষ সমারোহ, পাহাড়ের গায়ে টুপ্ করে ডুবে-যাওয়া সূর্য, আর মায়াবি কুয়াশা-ঢাকা রাস্তা। ঘরের সামনের বারান্দায় বসে গরম গরম মোমো খেতে খেতে মুগ্ধ করা প্রকৃতি দর্শন। রাতে অজস্র তারা আঁকিবুঁকি কেটে চলেছে আকাশে। পূর্ণিমার কাছাকাছি সময়ে এখানে আসলে দেখা যায় এক অপূর্ব দৃশ্য। হাওয়ায় হালকা, হলুদ চাঁদের আলো নরম একটা আস্তরণ বিছিয়ে দিচ্ছে চারদিকে। সামনে পাহাড়ের গায়ে ঝলমল করছে দূরের কোনো শহরের আলোকমালা। পর্যটন কেন্দ্র হিসেবে পেডং এখনো তেমন জনপ্রিয় হয়ে ওঠেনি। তবে মন ভালো করার জন্য এই জায়গাটাতে পা রাখাটাই যথেষ্ট।