নিজস্ব প্রতিনিধি – পশ্চিমবঙ্গের একুশের বিধানসভা ভোটে বিজেপি’র পরাজয়ের কারণ খুঁজতে গিয়ে এবার দেখা হচ্ছে দলটির ১৮ জন সাংসদের রির্পোট কার্ড। ২০২৪ এ ভারতের লোকসভা নির্বাচন সামনে রেখে গত নির্বাচনের পারফরম্যান্স খতিয়ে দেখা হচ্ছে। পাশাপাশি মোদি-শাহর টিম পুর্নগঠিত করতে মন্ত্রিসভার রদবদলে ঠাঁই দিতেও লোকসভায় সাংসদদের কাজের খতিয়ান মূল্যায়ন করা হচ্ছে। বিজেপি সাংসদের বিধানসভা ভিত্তিক জয়ের নিরিখে দেখা যাচ্ছে একদম ডাহা ফেলের তালিকায় রয়েছেন লকেট চট্টোপাধ্যায় এবং কুনার হেবব্রম। ব্যর্থতার হিসাবে এগিয়ে আছেন খোদ রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষ, দুই কেন্দ্রীয় মন্ত্রী বাবুল সুপ্রিয় এবং দেবশ্রী চৌধুরী, সাংসদ অর্জুন সিং, এস এস আলুওয়ালিয়ারা। অপরদিকে রির্পোট কার্ডেও একদম প্রথম সারিতে রয়েছেন জন বারলা। তারপরেই জগন্নাথ সরকার, শান্তনু ঠাকুর ও নীশিথ প্রামানিক। এই বাইরে বাকি সাংসদরা রয়েছেন এভারেজের তালিকায়।
২০১৯ এর লোকসভা ভোটের নিরিখে বাংলায় ২৯২ টি বিধানসভা আসনের মধ্যে ১২১টি আসনে তৃণমূলের থেকে এগিয়ে ছিল বিজেপি। আর জয় পাওয়া ১৮ লোকসভার মধ্যে থাকা ১২৬টি বিধানসভা আসনের মধ্যে ৯৬টি গিয়েছিল বিজেপির পক্ষে। একুশের বিধানসভা নির্বাচনের পর দেখা যাচ্ছে এই এগিয়ে থাকা ৯৬ টির মধ্যে ৩৭ আসন হাতছাড়া হয়েছে বিজেপির। জয় এসেছে মাত্র ৬০টিতে। এর মধ্যে শীতলকুচি আসনটি ২০১৯ লোকসভায় পিছিয়ে থাকলেও এবার জয় এসেছে বিজেপির পক্ষে। ২০১৯ এর লোকসভার নিরিখে এবার সবচেয়ে খারাপ ফল হুগলি ও ঝাড়গ্রামে। হুগলিতে লোকসভায় ৭ টির মধ্যে ৫টিতে লকেট চট্টোপাধ্যায় এগিয়ে থাকলেও একুশের ভোটে সবকটিতে হার হয়েছে বিজেপির। একইভাবে ঝাড়গ্রামে লোকসভায় ৭ টির মধ্যে ৫ টিতে কুনার হেমব্রম এগিয়ে থাকলেও এবার সবকটিতে হেরেছে বিজেপি। অপর দিকে, খারাপ ফলের নিরিখে দ্বিতীয় স্থানে খোদ বিজেপির রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষ। তার মেদিনীপুর লোকসভায় ২০১৯ বিজেপির জয় এসেছিল ৫ বিধানসভায়। এবার কেবল খড়গপুর সদর বিধানসভা আসনে জয় পেয়ে মান রক্ষা করছে বিজেপি। একই দশা হয়েছে অর্জুন সিং এর ব্যারাকপুর লোকসভায়। এখানে ২০১৯ লোকসভায় ৫ টিতে এগিয়ে থাকলেও একুশে বিজেপি মাত্র ভাটপাড়ায় জয় পেয়েছে। আবার এসএস আলুওয়ালিয়ার বর্ধমান-দুর্গাপুর লোকসভায় একই ফল হয়েছে। এখানে ২০১৯ এ বিজেপি ৩টিতে এগিয়ে থাকলেও এবারও একুশে জুটেছে মাত্র দুর্গাপুর পশ্চিম আসনটি। এরপরেই রয়েছেন কেন্দ্রীয় দুই মন্ত্রী। আসানসোলে বাবুল সুপ্রিয় ২০১৯-এ এগিয়ে ছিলেন ৭ টি বিধানসভাতেই। এবার ৫ বিধানসভা আসন হেরে বিজেপির হয়ে জয় পেয়েছেন আসানসোল দক্ষিণে অগ্নিমিত্রা পাল এবং কুলটিতে অক্ষয়কুমার পোদ্দার। একইভাবে দেবশ্রী চৌধুরী রায়গঞ্জে লোকসভায় ৪টি বিধানসভায় এগিয়ে থেকে জয় পেলেও এবার বিজেপির ভাগ্যে জুটেছে মাত্র ২ আসন। দক্ষিণবঙ্গে সবচেয়ে ভাল ফল করেছেন রানাঘাটের সাংসদ জগন্নাথ সরকার। উনিশের লোকসভার নিরিখে তিনি ৭টি বিধানসভার মধ্যে ৬ আসনই ধরে রাখতে পেরেছেন। শুধু তাই নয় নবদ্বীপে প্রার্থী হয়ে প্রায় ১৭ হাজার ভোটে জয় পেয়েছেন। একইভাবে বনগাঁর সাংসদ শান্তনু ঠাকুর মতুয়া ভোট ব্যাংক অটুট রেখে লোকসভা ভোটের ফলই ধরে রাখতে পেরেছেন। এখানেও বিজেপি ৭ এর মধ্যে ৬টি আসন পেয়েছে। বাঁকুড়ায় সুভাষ সরকার উনিশের লোকসভায় ৭ বিধানসভায় জয় পেলেও এবার বিজেপি এখানে ৩ আসন খুইয়ে ৪টি আসন পেয়েছে। পুরুলিয়ার জ্যোর্তিময় সিং মাহাত লোকসভায় ৭ আসনে জয় পেলেও একুশের বিধানসভায় বিজেপি এখানে ৫ বিধানসভায় জয় পেয়েছে। বিষ্ণুপুরে সৌমিত্র খাঁ উনিশে ৬ বিধানসভায় এগিয়ে থাকলেও এবার বড়জোড়া আসনটি হারিয়ে বিজেপি এখানে ৫ আসনে জয় পেয়েছে। উনিশের লোকসভার মতোই একুশেও উত্তরবঙ্গে ভালো ফল করেছে বিজেপি। রাজ্যের মধ্যে সবচেয়ে ভালো ফল করেছেন সাংসদ জন বারলা। আলিপুরদুয়ারে এবার বিরোধীদের নিশ্চিহ্ন করে দিয়ে লোকসভার মতোই একুশে ৭টি বিধানসভায় জয় পেয়েছে বিজেপি। উত্তরবঙ্গে তুলনামূলক ভাবে ফল খারাপ সাংসদ জয়ন্ত কুমার রায়ের জলপাইগুড়িতে। এখানে গত লোকসভায় এগিয়ে থাকা তিনটি বিধানসভা আসন হাতছাড়া হয়ে বিজেপির জয় এসেছে ৩টিতে। কোচবিহারে সাংসদ নিশিথ প্রামানিক এবার নিজে প্রার্থী ছিলেন দিনহাটায়। সামান্য ভোটের ব্যবধানে জিতলেও তাঁর লোকসভার ফলের থেকেও একটি আসন বাড়িয়ে নিয়ে বিজেপি ৬ বিধানসভা দখলে নিয়েছে। মালদা উত্তরে সাংসদ খগেন মুর্মুর এখানে উনিশের লোকসভা ফলই আবার হয়েছে। বিজেপি এখানে ৩ আসন ধরে রাখতে পেরেছে।