চলো যাই আসাম
একঘেয়ে জীবনে যখন আমরা ক্লান্ত হয়ে পড়ি তখনই ভ্রমণপিপাসু বাঙালির মন উড়ু উড়ু করে। তখনই সাগরের ডাক তার কানে বাজে, তুষারশুভ্র সুউচ্চ পর্বতমালার হাতছানি তাকে আকৃষ্ট করে। পাখির কলকাকলি ভরা সবুজ বনানীর মধ্যে সে হারিয়ে যেতে চায়। ভ্রমণপিপাসুদের পিপাসা মেটাতে ধারাবাহিক ভাবে ভারতের বিভিন্ন চিত্তাকর্ষক স্থানগুলি সম্বন্ধে জানাচ্ছেন বিশিষ্ট পর্যটক, সফল ব্যবসায়ী তথা সমাজসেবী ডঃ ধৃতিমান বড়ুয়া। যোগাযোগ – 7002444861
আসাম রাজ্যের দরং জেলাতে ওরাং নামের একটি খুব মনোরম ভ্রমণস্থল আছে, আসামের রাজধানী দিশপুর (গুয়াহাটি) থেকে ১১৩ কিমি (৭০.২ মাইল) দূরে অবস্থিত। স্থলভাগের দূরত্ব ২ ঘন্টা ১৫ মিনিট।
এইখানে আছে ওরাং রাষ্ট্রীয় উদ্যান যা ব্রহ্মপুত্র নদের তীরে দরং ও শোনিতপুর জেলার মধ্যে ৭৯.২৮ স্কোয়ার কিমি. অঞ্চল জুড়ে বিস্তৃত। ১৩ই এপ্রিল ১৯৯৯ সালে, এই উদ্যানকে ‘রাষ্ট্রীয় উদ্যান’ হিসাবে ঘোষণা করা হয়েছিল। ‘ওরাং রাষ্ট্রীয় উদ্যানে’ই পাওয়া যায় এক শৃঙ্গ বিশিষ্ট গন্ডার, এশিয়ান হাতি, জলে বসবাসকারী হিংস্র মহিষ এবং বাংলার বাঘ।
তেজপুরগামী এ.এস.টি.সি বা প্রাইভেট বাসে তিন ঘন্টার রাস্তা, গুয়াহাটি রেলস্টেশন থেকে মাঝবাট স্টেশনে নেমে, প্রাইভেট যানবাহনে ওরাং আসতে ১৫ মিনিট সময় লাগে। গুয়াহাটি থেকে সকাল ৬টা ও বিকাল ৪টে তে ট্রেন মাঝবাটের উদ্দেশ্যে রওনা হয় এবং গুয়াহাটি থেকে বাস সার্ভিস সকাল ৬টা থেকে রাত্রি ৯ টা পর্যন্ত চালু থাকে।
ওরাং রাষ্ট্রীয় উদ্যান –
আসামের ওদালগুড়ি জেলাতে সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে ৭০৩ মিটার উচ্চতাতে অরুণাচল ও ভুটানের অন্তর্গত ছোট্ট শহর ‘দইফাম’ সংলগ্ন স্থানে এবং অসম, ভুটান ও অরুণাচল প্রদেশের তিনটি স্থানের সংযোগস্থলে ‘ভৈরবকুন্ড’ নামের ইতিহাসের পৃষ্ঠাতে অবলুপ্তপ্রায় একটি অতি মনোরম তীর্থস্থান ও পিকনিক স্পট আছে। ভুটান থেকে উৎসারিত হয়ে ভৈরবী নদী ও জামপানি নদী একসঙ্গে মিলিত হয়ে আসামের ধানশিরি নদীর উৎপত্তি হয়েছে, যা ব্রহ্মপুত্র নদের একটি শাখা নদী। এই ধনশিরি নদীর উপরে কুন্ডের আকারে একটি বাঁধ রয়েছে যেখানে শিবের উপাসনা করা হয়, যার থেকে ভৈরবকুন্ড নামকরণ হয়েছে।
ভৈরবকুন্ডের বিশাল পাথরের পৃষ্ঠভূমিতে একটি বড় ছিদ্র বা ফাটল রয়েছে।
স্থানীয় (মনপাস জনগোষ্ঠী) জনজাতির বিশ্বাস এই ফাটলের মধ্যে দিয়ে বেরিয়ে যেতে পারলে নিজের বুদ্ধির বিকাশ হয়। অরুণাচল প্রদেশের স্থানীয় জনজাতির লোকেরা কার্তিক মাসে পাহাড়ের উপর থেকে নেমে এসে নিজেদের মস্তকমুন্ডন করে এবং তারপর তারা ওদালগুড়ি মেলাতে বেড়াতে যায়।
যাতায়াতের যোগাযোগ ব্যবস্থা – ওদালগুড়ি রেলস্টেশন থেকে প্রাইভেট ট্যাক্সিতে ভৈরবকুন্ড পৌঁছানো যেতে পারে। গুয়াহাটি ও অরুণাচল প্রদেশের রাজধানী ইটানগর থেকে প্রতিদিন বাস সার্ভিস চালু আছে ওদালগুড়ি রেলস্টেশনের বাস স্ট্যান্ড পর্যন্ত।