নিজস্ব প্রতিনিধি- ভারতে সংবাদমাধ্যমের স্বাধীনতা এখন আকাশকুসুম কল্পনা মাত্র। অন্তত রিপোর্টার্স উইদাউট বর্ডার্স (আরএসএফ)-এর সাম্প্রতিক সমীক্ষায় তেমনই একটি ইঙ্গিত রয়েছে। তাদের প্রেস স্বাধীনতা সূচকে ভারতীয় সংবাদ জগতের যে ছবি ফুটেছে, তাকে ভয়াবহ বললেও কম বলা হয় হয়তো। সমীক্ষার মতে, গত এক বছরে ভারতের অবস্থানের কোনও হেরফের না ঘটলেও, তা যথেষ্ট খারাপ এবং সংকটজনক অবস্থাতেই রয়েছে। সোজা কথায়, ভারতীয় সংবাদমাধ্যম ও সাংবাদিকরা খুব সুখে নেই। মিডিয়া ওয়াচডগ রিপোর্টার স্যানস ফ্রন্টিয়ারস নামে প্যারিসের ওই সংগঠনের প্রকাশিত বার্ষিক সূচকে (প্রেস ফ্রিডম ইনডেক্স) ভারতের অবস্থান আগের বারের মতো এবারও (২০২১) ১৮০টি দেশের মধ্যে ১৪২তম। সমীক্ষকদের বিচারে, ভারতে সাংবাদিকতার পরিবেশ আগের বারের মতোই খারাপ রয়েছে। ভালো হওয়ার কোনও লক্ষণ নেই। সাংবাদিকদের পক্ষে এই দেশে স্বাধীনভাবে কাজ করা যথেষ্ট বিপজ্জনক বলেই রায় দিয়েছেন তাঁরা।

২০২১ সালের ওয়ার্ল্ড প্রেস ফ্রিডম ইনডেক্স বলছে, গণমাধ্যমের স্বাধীনতা ও সাংবাদিকদের অধিকারের প্রশ্নে দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলির মধ্যে ভারতের অবস্থান একেবারে তলানিতে। ভুটান (৬৫), নেপাল (১০৬), এমনকি যুদ্ধবিধ্বস্ত আফগানিস্তান (১২২) এবং সেনা অভ্যুত্থানের আগে মায়ানমারেরও (১৪০) নীচে। শুধু বাংলাদেশ (১৫২) ও পাকিস্তানের (১৪৫) ওপরে। ৭টি মাপকাঠিতে বিচার করে একটি দেশের সংবাদমাধ্যম কতটা স্বাধীনতা ভোগ করছে, তা বোঝার চেষ্টা করেছে রিপোর্টার্স উইদাউট বর্ডারস। এই সাতটি মাপকাঠি হল সংবাদমাধ্যমে ভিন্নমতের প্রকাশ, স্বাধীনভাবে কাজ করার সুযোগ, পরিবেশ ও স্ব-আরোপিত সেন্সরশিপ, আইনি কাঠামো, সংবাদমাধ্যমের কাজে স্বচ্ছতা, পরিকাঠামোগত সুবিধা এবং সাংবাদিকদের ওপর নির্যাতন। এই সব মাপকাঠিতে ১০০ পয়েন্টের সূচকে যে দেশের স্কোর যত কম, সেই দেশে সংবাদমাধ্যমের স্বাধীনতা তত বেশি বলে ধরা হয়। এই বছর ভারতের স্কোর ৪৬.৫৬, স্থান ১৪২। ২০১৬ সালে ভারতের স্থান ছিল ১৩৩-এ। তারপর প্রতি বছর পিছলে গিয়েছে মোদির ভারত। ভারতীয় সংবাদমাধ্যমের এই করুণ দশার জন্য আন্তর্জাতিক রিপোর্টে বিজেপি সমর্থকদের ইন্ধনে তৈরি হওয়া দমবন্ধ পরিবেশকে দায়ী করা হয়েছে। বলা হয়েছে, সাংবাদিকদের যে-কোনো সমালোচনাকে জাতীয়তাবিরোধী, দেশবিরোধী ইত্যাদি বলে দেগে দেওয়ার ফলে এই পরিবেশ তৈরি হয়েছে। সংবাদমাধ্যমকে কবজা করতে মুঠো শক্ত করেছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। এমনকি করোনা মহামারির সুযোগ নিয়ে সংবাদমাধ্যমের ওপর নিয়ন্ত্রণ বাড়িয়েছে।

২০২০ সালে ৪ জন সাংবাদিক খুন হয়েছেন। সাংবাদিকতা করতে গিয়ে সরকারি ও বেসরকারি গোষ্ঠীর হাতে নানাভাবে হয়রানি ও আক্রমণের শিকার হতে হয়েছে সাংবাদিকদের। মহিলাদের ক্ষেত্রে আক্রমণের ঝাঁঝ আরও বেড়েছে। হিন্দু জাতীয়তাবাদের উত্থানের আবহে এই হিংসার পরিবেশ ভারতে তৈরি হয়েছে বলেও মত প্রকাশ করেছেন সমীক্ষকরা।

Loading