নিজস্ব প্রতিনিধি- চোদ্দো বছর আগে চীন বিরোধি চার দেশ চতুর্দেশীয় অক্ষ ‘কোয়াড’ গঠন করেছিল। তবে এই উদ্যোগ আন্তর্জাতিক রাজনীতিতে মুখ থুবড়ে পড়েছিল। শুক্রবার সেই ‘কোয়াড’ সম্মেলনে ভারত, যুক্তরাষ্ট্র, জাপান এবং অস্ট্রেলিয়ার -এর শীর্ষ নেতারা প্রথম বারের জন্য বৈঠকে বসছেন।

এই বৈঠকে একদিকে সমুদ্রপথে চীনের একাধিপত্যের বিরুদ্ধে আওয়াজ তোলা, অন্য দিকে ভারতের করোনা প্রতিষেধক উৎপাদনকে আরও শক্তিশালী করার উদ্যোগ— এই দু’টি বিষয়কে অগ্রাধিকার দেয়া হবে বলে জানা গিয়েছে। বৈঠক হবে ভার্চুয়ালি, ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে। কোয়াড-এর মঞ্চে প্রথম বারের জন্য মুখোমুখি হবেন নতুন মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন এবং নরেন্দ্র মোদি। হোয়াইট হাউসের মিডিয়া সচিব জেন সাকি একটি বিবৃতি দিয়ে বলেছেন, ‘জো বাইডেন দায়িত্বে আসার ঠিক পরেই এই বহুপাক্ষিক সম্মেলনটির প্রতি আগ্রহ দেখিয়েছেন। এর থেকেই প্রমাণিত আমরা ভারত-প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে বন্ধু রাষ্ট্রগুলির সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সহযোগিতা গড়ে তুলতে কতটা আগ্রহী।’

চীন বিরোধী চার দেশের বাণিজ্যিক এবং রণকৌশলগত সমন্বয় শুরু হয়েছিল মনমোহন সিংহ সরকারের আমলেই। ২০০৭ সালে আসিয়ানভুক্ত রাষ্ট্রগুলোর আঞ্চলিক ফোরামের বৈঠকের পাশেই কোয়াড-এর অন্তর্গত রাষ্ট্রগুলোর কূটনৈতিক কর্তাদের বৈঠক হয় ম্যানিলায়। ওই একই বছরে বঙ্গোপসাগরে কোয়াড-এর অন্তর্গত রাষ্ট্রগুলো সিঙ্গাপুরকে সঙ্গে নিয়ে নৌবাহিনীর মহড়া চালায়। এর পরই চীন সংশ্লিষ্ট দেশগুলোকে ডিমার্শে পাঠিয়ে কড়া ভাবে জানতে চায় যে, এই অক্ষ কি চীনের সঙ্গে সংঘর্ষের জন্য তৈরি করা হয়েছে? চীনের ভয়ে পরের বছর ওই মালাবার মহড়াটিই হয়ে যায় ভারত এবং যুক্তরাষ্ট্র দ্বিপাক্ষিক মহড়া! চীনকেও বোঝানো হয়, এই অক্ষ আদৌ কৌশলগত বা প্রতিরক্ষাকেন্দ্রিক নয়। অস্ট্রেলিয়াও সরে যায়।

কূটনৈতিক শিবিরের মতে, শুক্রবারের বৈঠকটি চোদ্দ বছর আগে বেইজিং-এর সেই দর্পিত মনোভাবকে প্রত্যাখ্যান করছে। এক কূটনীতিকের মতে, ‘কোয়াড সম্মেলনের আসল পরীক্ষা, তারা বিশ্বের কাছে ঠিক বার্তা পাঠাতে পারছে কি না। গণতান্ত্রিক, আইনের শাসন মানা দেশগুলো তাদের রাজনৈতিক এবং অর্থনৈতিক মূল্যবোধগুলিকে ভাগ করে নিতে পারছে কি না।’

ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রণালয় সূত্রে খবর, চীন এবং ভারতের মধ্যে করোনার প্রতিষেধক তৈরির যে অদৃশ্য যুদ্ধ চলছে, সেই প্রসঙ্গটিকে সামনে নিয়ে এসে ভারতে উৎপাদন আরও বাড়ানোর জন্য হাত বাড়াবে যুক্তরাষ্ট্র এবং জাপান। এখনও পর্যন্ত ভারত ৬৬টি দেশকে ৫ কোটি ৮০ লাখ ডোজ় প্রতিষেধক পাঠিয়েছে। পাশাপাশি চীন পাঠিয়েছে ৬৯টি উন্নয়নশীল দেশকে। তবে চীন বিভিন্ন দেশে কোভিড প্রতিষেধক পাঠানো সংক্রান্ত বিশদ তথ্য এখনও প্রকাশ করেনি।

 180 total views,  2 views today