স্মৃতি হলেও সত্যি

বিধাননগর উল্টডাঙ্গা

এর নাম জীবন হয়তো, মাত্র সাত বছরের বালিকা। বাড়ি আসানসোল কালিপাহাড়ি জেলায় অন্তর্গত ছোট্ট একটি  গ্রামে । নাম রূপসী , দাদু ছিলো তার প্রানের বন্ধু। তার কঠিন অসুখ ব্রেন টিউমার । গ্রামের স্বাস্থ্যকেন্দ্র অনেক দুরে , আর দাদুর অবস্থা খুব খারাপ ছিল বলে সেখানকার  হাসপাতাল ডাক্তার বাবু দাদুকে রাখেনি। চিকিৎসা এবং অপারেশনের জন্য ওনাকে পাঠানো হলো কলকাতায় নীলরতন হাসপাতালে । পাশের বাড়িতে থাকতো কাকা ও কাকিমা, ওদের কাছে রূপসীকে  রেখে বাবাও মা তার দাদুকে নিয়ে‌ পড়ে রয়েছে কলকাতায়  নীলরতন হাসপাতালে। রূপসীর ভীষন মন খারাপ কারন দাদু ওর ভালো বন্ধু ছিলো , ভালোবাসা এক অন্তহীন।

কেউ  কাউকে ছেড়ে থাকতে পারে না । গত রাতে দাদুর অপারেশন  হয়ে গেছে  । খবরটা শোনার পর থেকেই দাদুকে দেখার জন্য রূপসীর মন খুব ছটপট  করছিলো । কাকা ও কাকী মা বুঝতে পেরে রূপসীকে

নিয়ে যাবে কলকাতায় । রূপসীর আনন্দ আর ধরেনা !  কতদিন পরে তার দাদুকে দেখতে পাবে , পাশাপাশি কলকাতায়  শহরের ট্রেনে চড়ে  যাবে, আনন্দ দেখে কে কলকাতায়  কোনদিন যায়নি , তবে নামটা শুনলেই ওর মনে হয় বহু দিনের চেনা শহর । আবার মাঝে মাঝে ভেসেও আসে চোখের সামনে অলিগলি । এই কথা রূপসী কাউকে কখনও বলেনি , একাই ভেসে গেছে অজান্তে মনে, ট্রেন চড়ার অভিজ্ঞতা এই প্রথম । ট্রেনে যেতে যেতে একরাশ ভালো লাগার মুগ্ধতা নিয়ে, চারপাশে দেখতে দেখতে মনের আনন্দে চলছে কলকাতায় । নামলো শিয়ালদা স্টেশনে কাকু ওর  হাত চেপে ধরলো , এবার হাসপাতাল অভিমুখে হাঁটতে লাগলো । এইসব রাস্তা রুপসীর চেনার কথা নয় । তা সত্ত্বেও ওর ভীষন চেনা লাগছিল রাস্তাঘাট । এই পথে যেন বহুকাল যাওয়া আসা করেছে । হঠাৎ রূপসী কাকুর হাত ছাড়িয়ে অন্যদিকে দৌড়াতে শুরু করলো। আর কাকু চিৎকার করতে লাগলো কোনো  দৌড়াচ্ছো রূপসী  ? কে কার কথা শোনে-সে এক এখন অন্য জগতে মানুষ । কোনও কথা কানে না তুলে উল্টোপথে এক গলির রাস্তায়

দিয়ে হনহন করে হেঁটে চলেছে , যেন এই রাস্তাঘাট কত দিনের চেনা । কাকু ও ওর পিছনে পিছনে দৌড়াতে  লাগলো।  এই গলি সে গলি পেরিয়ে, সামনে একটি‌ বটগাছ পাশে শিব মন্দির,ঠিক তার পাশের বাড়িতে রূপসী

কলিংবেলটা বাজিয়ে দিলো । কিছুক্ষণ পর মধ্যবয়স্ক পুরুষ দরজা খুলেই হাসিমুখে বললেন,; কাকে চাই মা ,

রূপসী হাসিমুখে বল্লো , রমেশ তুমি কেমন আছো ?

এত রোগা হয়ে গেছো কেনো , সুগার টা বেড়েছে বুঝি । ঠিক মতো  প্রেসার  ও সুগারের ওষুধ খাচ্ছো তো ?  আর আমাদের মেয়ে ,  রূপামা কোথায় এখন ?  ডাক্তারি পরীক্ষা  দিতে বিলেত গিয়েছিলো , রূপামা ফিরেছে?,ও বলেছিলো বাড়ি ফিরে এসে  ওর পছন্দের ছেলেকে বিয়ে করবে । রূপসী গড়গড় করে সব বলছিলো,  সেদিন আমি অফিসে ছুটির দরখাস্ত জমা দিতে গিয়েছিলাম , টাকা তুলেছি  রূপা মায়ের বিয়ের  শাড়ি ও গয়না কেনাকাটা করবো বলে । আমি বাড়ি‌র দিকে ফিরছিলাম, কত কথা ভাবতে ভাবতে রাস্তায় চলছিলাম । মনের আনন্দে রমেশ তোমাকে নিয়ে  বিয়ের‌ কেনাকাটা করবো এইসব অনেক কিছু ভাবছিলাম । দুর্ভাগ্য… হঠাৎ বাসটা  ব্রেক ফেল করে আমার গায়ে এসে পড়লো ! তারপর আর কিছু জানিনা… এর মধ্যে কাকু এসে গেছে ওর কাছে  ।

রূপসীকে বললো কি সব পাগলের মত বলছো , চলো  দাদুকে দেখতে।ভদ্রলোকের দিকে তাকিয়ে বললেন আপনি দাদা ক্ষমা করে দেবেন , ও ছোট্ট বাচ্চা মেয়ে,  ওর দাদুর চিন্তায় ভুল বকছে ,বলেই রূপসীর হাত‌ টানতে‌ লাগলো । দরজা সামনে দাঁড়িয়ে রমেশের চোখের সামনে তখন সব অন্ধকার হয়ে গেল , মাটিতে লুটিয়ে পড়লো…

আজও তুমি এত ভালোবাসো সোনা ? আমি ও তোমাকে ভুলতে পারছিনা , আমি জানি সোনা তুমি আমার কাছে ফিরে এসেছো আবার ।

………………………………………………………………………………………………….

  •  

  • __________________________________________________________

  •  

  •  

  •  

  • __________________________________________________________

  • _______

  •  

  •  

  •  

  •  

  •  

  •  

  •  

  •   

Loading