সোরিয়াসিস একটি দীর্ঘমেয়াদি ও সাধারণ চর্মরোগ। তবে মাথা, জিহবা, ঘাড়, হাতের কনুই, পিঠ, আঙুল, তালু, নখ, পায়ের তালু, হাঁটু, হাত ও পায়ের সন্ধিস্থলে এটি বেশি দেখতে পাওয়া যায়। এতে মলিন রূপালী আঁশযুক্ত ছোপ দেখা যায়, যা উঠে যাওয়ার পর লালচে আভা বা সামান্য রক্তক্ষরণ হতে পারে।

এটা কি ছোঁয়াচে রোগ?

সাধারণত সোরিয়াসিসের রোগী দেখলে অন্যরা ভয় পেয়ে যায়। আমরা অনেকেই ছোঁয়াচে রোগ বলে থাকি। তবে এটি কোন ছোঁয়াচে বা সংক্রামক চর্মরোগ নয়। এটি বড় শরীরিক কোন সমস্যাও সৃষ্টি করে না।

কারণ ঃ

এ রোগের মূল কারণ এখনো জানা যায় নাই। সোরিয়াসিস হওয়ার পেছনে অনেক কারণ রয়েছে বলে একে মাল্টি ফ্যাক্টরিয়াল বলা যেতে পারে। নি¤েœ বিভিন্ন কারণ আলোচনা করা হলো:

বংশের কারো থাকলে অন্যদেরও রোগ হওয়ার সম্ভাবনা আছে।

ছত্রাক ভাইরাস, ব্যাকটেরিয়া ইত্যাদি সংক্রমনের কারণেও সোরিয়াসিস হতে পারে।

অতিরিক্ত মদপান, ধুমপানের কারণে এ রোগ হতে পারে।

অতিরিক্ত ওজন বাড়লে, কোলেষ্টরল বাড়লে এ রোগ হতে পারে।

লাল মাংস, বিশেষ করে খাসি ও গরুর মাংস অধিক খেলে এ রোগ হতে পারে।

অতিরিক্ত মানসিক চাপে ও সোরিয়াসিস হতে পারে।

ভিটামিন –ডি, সানবার্ণ, আঘাত, কাটা, ক্ষত, ত্বকের সংক্রমণের ফলে এ রোগ হতে পারে।

কিছু কিছু ঔষধ, বিশেষ করে উচ্চ রক্তচাপের, ব্যথার, মানসিক রোগের বিভিন্ন ঔষধে পাশর্^ প্রতিক্রিয়ায় এ রোগ হতে পারে।

কারা আক্রান্ত হতে পারে?

সোরিয়াসিস যে কোন বয়সে হতে পারে, তবে ১৫-৪৫ বছরের মধ্যে এ রোগ বেশি দেখা দেয়।

সোরিয়াসিস মারাত্মক রোগ নয়। তবে এটি জটিল আকার ধারণ করতে পারে, যার তীব্রতা বিভিন্ন ধরনের হতে পারে। যেমন:

পেচ সোরিয়াসিস ঃ সোরিয়াসিস আক্রান্ত রোগীদের প্রায় ৮০ শতাংশ রোগী এধরণের রোগে ভুগতে থাকে। এটি প্রথমে লালচে আকার ধারণ করে, পরে সাদা রংয়ের আঁশ ওঠে।

গাট্রেট সোরিয়াসিস ঃ এ ধরনের রোগ শিশু ও যুবকদের হয়ে থাকে। এক্ষেত্রে প্রথমে লালচে ছোট ছোট দাগ শুরু হয়ে, পরে সাদা আবরণ ওঠে।

ইনভার্স সোরিয়াসিস ঃ এটি সাধারণত অধিক মোটা লোকদের যাদের মোটা চামড়ায় ভাঁজ পড়ে তাদের হয়ে থাকে। এটি প্রথমে লালচে রংয়ের হয়, তবে কোন আবরণ থাকে না।

পাষ্টুলার সোরিয়াসিস ঃ এটি হলে ত্বক লালচে আকার ধারণ করে, পরে নির্দিষ্ট স্থান হতে সাদা পুঁজ সৃষ্টি হতে পারে। আক্রান্ত স্থান শুকিয়ে সাদা আঁশ ওঠে।

ইরিথ্রোডার্মিক সোরিয়াসিসঃ এটিও লালচে রংয়ের, যা দেহের সম্ভব স্থানে আক্রান্ত হয়ে থাকে। আক্রান্ত শরীরে প্রচন্ড চুলকানি হয় এবং আঁশ ওঠে।

সোরিয়াটিক আর্থ্রাইটিসঃ এটি শরীরের বিভিন্ন সন্ধিস্থলে বা জয়েন্ট আক্রান্ত করে।

লক্ষণঃ

বেশীর ভাগ ক্ষেত্রে ত্বকে সাদা আঁশযুক্ত প্রদাহ বা অনেক ছোপ ছোপ দাগ দেখা যায়, কখনো কখনো সারা শরীরে, নখ, মাথা, হাঁটু, কনুই, হাত-পায়ের তলা, পিঠ প্রভূতি স্থানে সাদা আঁশ উঠতে থাকে। মাথার তালু হতে খুশকির মতো আঁশ ওঠে। জটিল সোরিয়াসিসের মধ্যে গিটে ব্যথা হতে পারে। বিভিন্ন ক্ষেত্রে শরীরের বিভিন্ন স্থানে পুঁজ আকৃতির সোরিয়াসিস দেখা দিতে পারে।

পরীক্ষাঃ

স্কিন বায়োপসি করে এ রোগ নির্ণয করা যায়।

চিকিৎসাঃ

এ রোগ সম্পূর্ণভাবে নিয়ন্ত্রণ যোগ্য রোগ। নিয়মিত সঠিক চিকিৎসা নিলে রোগটি নিয়ন্ত্রণে রাখা সম্ভব। হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসা লক্ষণভিত্তিক, তাই সুনির্দিস্ট লক্ষণ গুলো দেখে চিকিৎসক ঔষধ দেন।

সোরিয়াসিসের ঝুঁকি সমূহঃ

যাদের সোরিয়াসিস আছে তাদের কিছু ঝুঁকি থাকতে পারে, এ রোগ একবার হলে তার নিয়ন্ত্রণে এসে আবার আক্রান্ত হতে পারে।

সোরিয়াসিসে আক্রান্ত রোগীদের উচ্চ রক্তচাপ, কিডনী রোগ, ক্রনস ডিজিজ, পরিপাকতন্ত্রের রোগ হতে পারে।

টাইপ-টু ডায়াবেটিসের ঝুঁকি বাড়ে। অনেকের আর্থ্রাইটিস ও গেঁটে বাত হতে পারে।

চোখের সমস্যা হতে পারে। যেমন: চোখ উঠা, ইউভিআইটিস ইত্যাদি।

বারবার হওয়াতে রোগী হীনমন্যতায় ভুগতে থাকে, ফলে মানসিক সমস্যা হতে পারে।

অনেক সময় রোগের তীব্র অবস্থায় সারা শরীরে তা ছড়িয়ে যেতে পারে। শরীরে পুঁজ উৎপন্ন হতে পারে।

সোরিয়াসিস রোগীর খাদ্যাভ্যাসঃ

অনেকে সোরিয়াসিসকে এলার্জি মনে করেন, সেজন্য রোগীকে বেগুন, চিংড়ি, মিষ্টিকুমড়া, পুঁটি, বোয়াল ইত্যাদি এলার্জিযুক্ত খাবার বন্ধ করে দেন। এ ধারণা ঠিক নয়্ তবে লাল মাংস, যেমন: গরু ও খাসির মাংস খেলে রোগের তীব্রতা বাড়ে। তবে মুরগীর মাংস খাওয়া যেতে পারে। টক ফল ছাড়া প্রচুর শাকসব্জী ও ফল খেতে হবে। প্রচুর পানি পান করতে হবে।

গোছলের সময় আক্রান্ত স্থানে ঘষামাজা না করে বরং হালকা ভাবে পরিষ্কার করতে হবে। নিয়মিত গোসল করতে হবে। সব সময় পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন থাকতে হবে। পরিষ্কার পোষাক পরিধান করতে হবে।

মাত্রাতিরিক্ত সূর্যালোক হতে সাবধানে থাকতে হবে।

দুশ্চিন্তা, রাগ, মানসিক চাপ কমাতে হবে। সদা প্রফুল্ল থাকতে হবে।

স্বাস্থ্যকর ও পুষ্টিকর খাবার গ্রহণ করতে হবে। অতিরিক্ত ফ্যাট চর্বিযুক্ত, উত্তেজক খাদ্য গ্রহন হতে বিরত থাকতে হবে।

মদপান, ধুমপান বর্জন করতে হবে।

ক্ষারীয় সাবান বর্জন করতে হবে।

প্রতিদিন ব্যায়াম ও ভোরে হাঁটার অভ্যাস গড়ে তুলতে হবে।

 

__________________________________________________________

 

 

 

__________________________________________________________

_______

 

 

 

 

 

 

 

  

Loading