শান্তি রায়চৌধুরী: সম্প্রতি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল হওয়া একটি ছবিতে সবুজ আলো ছড়িয়ে কোনো বস্তুকে উড়ে যেতে দেখা যায়। দাবি করা হয়েছে, এটি একটি গ্রহাণু; যা উড়ে গেছে ভারতের ওপর দিয়ে।

অন্তত তিনটি গ্রহাণু পৃথিবীকে পাশ কাটিয়ে গেছে গত ২৯ নভেম্বর থেকে ১৭ ডিসেম্বরের মধ্যে। এর বাইরে একটি নাটকীয় ছবি কয়েক দিন ধরেই ঘুরছে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে।

সবুজ আলো বিচ্ছুরিত সেই ছবিটি পোস্ট করে অনেকেই দাবি করছেন, চলতি মাসেই এই গ্রহাণুটি ভারতের আকাশে দেখা গেছে।

গত ১৩ ডিসেম্বর ফেসবুকে ছবিটি পোস্ট করে এক ব্যক্তি লেখেন, ‘এটি একটি গ্রহাণু, যা এক দিন আগেই ভারতের আকাশের ওপর দিয়ে পৃথিবীকে পাশ কাটিয়ে গেছে।’

রবিবার পর্যন্ত ওই পোস্টটি অন্তত ২ হাজার ৪০০ মানুষ শেয়ার করেছেন। কিন্তু এ ঘটনাটিকে মিথ্যা হিসেবে আখ্যায়িত করেছে মার্কিন গণমাধ্যম ইউএসএ-টুডে।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ছবিটিতে যে বস্তুটিকে সবুজ আলো ছড়াতে দেখা গেছে, তা আসলে একটি উল্কাপিণ্ড। এটি কোনো গ্রহাণু নয়। আর সবচেয়ে বড় ব্যাপার হলো- ছবিটি তোলা হয়েছিল আরও ছয় বছর আগে। ছবিটি যিনি তুলেছিলেন, সেই ফটোগ্রাফার প্রসেনজিৎ যাদবের সঙ্গেও যোগাযোগ করে ইউএসএ-টুডে।

এক ই-মেইল বার্তায় প্রসেনজিৎ জানান, ফেসবুকে যে ছবিটি ভাইরাল হয়েছে, সেই ছবিটি তিনি ২০১৫ সালে তুলেছিলেন। ভারতের দক্ষিণ-পশ্চিমে অবস্থিত পশ্চিমঘাট পর্বতমালার ওপর দিয়ে সবুজ আলো ছড়িয়ে একটি উল্কাপিণ্ড চলে যাওয়ার সময় ছবিটি তোলা হয়। পরে ২০১৭ সালে ছবিটি ন্যাশনাল জিওগ্রাফিকের এক প্রতিবেদনেও ব্যবহার করা হয়। এই ছবি তোলার জন্য ন্যাশনাল জিওগ্রাফিকের পক্ষ থেকে প্রজেনজিৎকে পুরস্কৃতও করা হয়।

নাসার ওয়েবসাাইটে বলা হয়েছে, ‘বিজ্ঞানীরা ধারণা করেন, প্রতিদিন অসংখ্য উল্কাপিণ্ডের অন্তত ৪৮ দশমিক ৫ টন উপাদান পৃথিবীর বুকে খসে পড়ে। কোনো উল্কাপিণ্ড থেকে বিচ্ছুরিত আলোর রং নির্ভর করে মূলত ওই উল্কাপিণ্ডের মধ্যে থাকা রাসায়নিক উপাদানের ওপর। উল্কাপিণ্ডের ছবি তোলা সহজ ব্যাপার নয়। কারণ দুর্দান্ত গতিতে এটিকে মুহূর্তের মধ্যেই খসে যেতে দেখা যায়।

ভাইরাল হওয়া ছবিটি ২০১৯ সালে ইনস্টাগ্রামে পোস্ট করে প্রসেনজিৎ যাদব লিখেছিলেন, ‘এটি নিঃসন্দেহে আমার তোলা স্মরণীয় ছবিগুলোর মধ্যে অন্যতম।’

তাই বলা যায়, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল হওয়া গ্রহাণু দাবি করা পোস্টটি সম্পূর্ণ মিথ্যা। সর্বপ্রথম যে অ্যাকাউন্ট থেকে পোস্টটি করা হয়েছিল, সেই পোস্টটিকে ইতিমধ্যেই ‘মিথ্যা’ হিসেবে একটি ট্যাগ জুড়ে দিয়েছে ফেসবুক কর্তৃপক্ষও।

Loading