শান্তি রায়চৌধুরী: আবার আলোচনায় ক্রিকেট জুয়া, স্পট ফিক্সিং। এবার ক্রিকেট জুয়ার ভয়ংকর কাহিনি নিয়ে হাজির হয়েছেন ব্রেন্ডান টেলর। প্রাক্তন এই জিম্বাবুয়ে অধিনায়ক সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে এক বিবৃতিতে জুয়াড়ির ফাঁদে পড়ার বর্ণনা দিয়েছেন। প্রথমে সেই ভারতীয় জুয়াড়ির সঙ্গে ডিনার পার্টি, তারপর কোকেন সেবন। সেই দৃশ্য গোপনে ক্যামেরাবন্দী করে টেলরকে ব্ল্যাকমেইল করতে চান ভারতীয় জুয়াড়ি।

২০১৯ সালের ঘটনা। ঘটনাটি আইসিসিকে ঘটনা জানালেও ততদিনে অনেক দেরি করে ফেলেন টেলর। ওই সময় এক ভারতীয় জুয়াড়ি টেলরের সঙ্গে যোগাযোগ করে তাঁকে পৃষ্ঠপোষকতা করার প্রস্তাব দেন। একই সঙ্গে জিম্বাবুয়েতে একটি টি-টোয়েন্টি টুর্নামেন্ট আয়োজনের কথাও জানান সেই ভারতীয় জুয়াড়ি। এ জন্য টেলরকে ১৫ হাজার ডলার (প্রায় ১৩ লাখ টাকা) দেওয়ার প্রস্তাব দেন সেই জুয়াড়ি।

ভয় থাকলেও জুয়াড়ির প্রস্তাব ফেলতে পারেননি টেলর। জিম্বাবুয়ে ক্রিকেট বোর্ডের (জেডসি) আর্থিক দুরবস্থাও তাঁকে কুকর্মে জড়াতে বাধ্য করেছিল।  জিম্বাবুয়ে অধিনায়কের দেওয়া তথ্যমতে, বোর্ড থেকে ছয় মাসের বেতন বকেয়া ছিল খেলোয়াড়দের। অবস্থা এতটাই সঙ্গিন ছিল যে, জিম্বাবুয়ে আন্তর্জাতিক ক্রিকেট চালিয়ে যেতে পারবে কি না, সে বিষয়ে সন্দিহান ছিলেন টেলর। সবকিছু চিন্তা করে জুয়াড়ির ফাঁদে পা দিয়ে একটা ডিনার পার্টিতে যান তিনি। পার্টিতে খাওয়া-দাওয়ার পর শুরু হয় মাদক সেবন।

টেলর তাঁর বিবৃতিতে বলেছেন, এ ঘটনায় আইসিসি তাঁকে একাধিক বছরের জন্য নিষেধাজ্ঞা দিতে যাচ্ছে। শাস্তিটা তিনি মেনেও নিয়েছেন, ‘আশা করি আমার গল্পটা ক্রিকেটারদের আগেভাগেই এমন প্রস্তাব রিপোর্ট করার ব্যাপারে উৎসাহিত করবে।’

টেলর তাঁর বিবৃতিতে বলেছেন, এ ঘটনায় আইসিসি তাঁকে একাধিক বছরের জন্য নিষেধাজ্ঞা দিতে যাচ্ছে। শাস্তিটা তিনি মেনেও নিয়েছেন, ‘আশা করি আমার গল্পটা ক্রিকেটারদের আগেভাগেই এমন প্রস্তাব রিপোর্ট করার ব্যাপারে উৎসাহিত করবে।’

ডিনার শেষে টেলরকে সরাসরি কোকেন সেবনের প্রস্তাব দেন সেই জুয়াড়ি। ফাঁদটা তৈরি হয় সেই মুহূর্তে। টেলরের কোকেন সেবনের দৃশ্য গোপনে ক্যামেরায় ধারণ করেন জুয়াড়ি। টেলরের ভাষ্য, ‘আমি বোকার মতো তাদের কথায় কোকেন সেবন করেছিলাম। পরদিন সকালে সেই ব্যক্তি আমার হোটেল রুমে এসে আমাকে একটি ভিডিও দেখায়, যাতে আগের রাতে আমার কোকেন সেবনের দৃশ্য ধারণ করা ছিল। আমি হতভম্ব হয়ে যাই। তখন সেই ব্যক্তি আমাকে তাদের হয়ে আন্তর্জাতিক ম্যাচে ফিক্সিং করার নির্দেশ দেয়। না হলে সেই ভিডিও ফাঁস করার হুমকি দেয়।

নিজের নিরাপত্তা আর ভারত ছাড়ার কথা চিন্তা করে সেই মুহূর্তে জুয়াড়িদের প্রস্তাবে সাড়া দেন টেলর। তখন সেই জুয়াড়ি কাজ শেষ হলে টেলরকে আরও ২০ হাজার ডলার (১৭ লাখ টাকা) দেওয়ার কথা জানান। দেশে ফেরার পর মানসিক অশান্তি এবং অপরাধবোধে ভুগতে থাকেন তিনি। এমনকি মানসিক চিকিৎসাও নিতে হয়। জুয়াড়িরা তাঁকে চার মাস সময় দিয়েছিল। তবে টেলর স্পট ফিক্সিংয়ে জড়াতে চাইছিলেন না। একপর্যায়ে আইসিসিকে সব কিছু জানান তিনি।

Loading