‘‘খোলা চিঠি’’
সোনালী মুখার্জী
আড়ুপাড়া,সাঁতরাগাছি, হাওড়া
মা, তুমি কেমন আছো?বাবা কেমন আছে?আমি জানি চোখের জলে তোমাদের দিন কাটছে।রান্না করতে,খেতে ভালো লাগছে না তোমাদের।
মা,আমি আসছি,একসাথে খাবো কথাগুলো তোমার কানে বাজছে তাই তো?আমি আছি গো মা অন্যায়ের প্রতিবাদে।
মা ঠাকুরের বায়না করার জন্য কাকু এসেছিলো বলো? বেনেমশলার দোকান থেকেও তো এসেছিল তাই না?ঢাকি কী বললো মা?তুমি চোখে কাপড় চাপা দিয়ে বললে,পূজো হবে না।ওরাও মন খারাপ করে চলে গেলো বলো।
মা,পূজো-পার্বণ তো চলবেই।বছরে একবার ছেলেমেয়ে নিয়ে বাপের বাড়ি আসবেন মা।এটা তো স্বাভাবিক মা।চারিদিকে আলোর রোশনাই,মানুষ মেতেছে উৎসবে আমি আমার পাথর চোখ দিয়ে সব দেখতে পাচ্ছি মা।
মা তো নিজেও সব দেখতে পাচ্ছেন বলো। “এত আনন্দ আয়োজন সবই বৃথা আমায় ছাড়া “সে তো তোমার কাছে মা।
পূজো করবে কী না তাই নিয়ে আত্মীয় -স্বজন ফোন করেছিল বলো মা।আমার বন্ধুরাও তাই তো।
এই চারটে দিনের মজাই আলাদা।ঠাকুরের পূজোর জোগাড় করা,ভোগ রাঁধা কীভাবে কেটে যেতো বলো মা।
মা,ঘুমের ভেতর আমাকে তুমি দেখতে পাও বলো।গলার আওয়াজ পাও?রান্না করতে গিয়ে চোখে জল আসে তাই না? ফোনটা বেজে উঠলে ভাবো,এই বুঝি আমার ফোন এলো। এ ঘর-ওঘর করো তো,মনে করো আমি ঘরেই আছি,ঠিক বলেছি না?আমার জামাকাপড়ে এখন ও তুমি আমার গায়ের গন্ধ নাও তাই না মা। যেমন তোমার শাড়ির আঁচলে তোমার গায়ের গন্ধ নিতাম আমি।
আমার সব জিনিস তুমি যত্ন করে রেখে দিয়েছ,সব আমি দেখতে পাই গো মা।বাবাকে সাবধানে রেখো।তুমিও একটু সাবধানে থেকো।মনে করো তোমার মেয়ে বিদেশে আছে।সহজে তোমাদের কাছে আসা সম্ভব নয়। দেশ যতই উন্নত হোক তোমার আমার ফোনে কোন ফেসিলিটি নেই মা।ভিডিও কল্ হবে না।ফোন করাও যাবে না।সব বন্ধ মা।তুমি আর আমি বড্ড বোকা। তবে একটা কথ বলি
খোলা জানালা দিয়ে নীল আকাশে যখন মেঘের ভেলা দেখতে পাবে জানবে ঐ ভেলাটাতেই তোমার মেয়ে মেঘেদের ঘাটে ঘাটে ঘুরে বেড়াচ্ছে।
রাতের আকাশের দিকে তাকিয়ে দেখবে কত তারা মিটমিট্ করছে,ওখান থেকেই আমি তোমায় দেখে মিটমিট করে
হাসবো মা,আমাকে চিনে নিতে ভুল কোরো না মা।
ওমা,একটি কথা তোমাকে বলা হয়নি আমার সারা শরীরে ভীষণ যন্ত্রণা হচ্ছে মা।তোমার কোলে মাথা দিয়ে একটু শুতে দেবে মা,তোমার স্নেহ শীতল স্পর্শে আমার সারা শরীর যন্ত্রণা মুক্ত হবে।
আসছি গো মা,খুঁজে নিও তোমার মেয়েকে এই আকাশ-বাতাস,নদ-নদী,পাহাড়-সমুদ্রে,গভীর অরণ্যে,তারাদের মাঝে তোমার মেয়ে যন্ত্রণায় চিৎকার করছে।