শোণিত
রচনা – সোনালী মুখার্জী
……………………..
ফেসবুকে বন্ধুত্ব দুটি ছেলেমেয়ের। আমরা তো ফেসবুক বলতে আগেই খারাপ দিকটা নিয়েই বেশি ভাবি।মতামত প্রকাশ করি। সকলে কিন্তু ফেসবুকে কেবল মজা করতে আসে না।অনেক ভালো কাজের উদাহরন এই ফেসবুক।আসলে কে বা কারা এই ফেসবুক কীভাবে কাজে লাগাবে তার উপর নির্ভর করে। এই যুবক -যুবতী নিজেদের বিভিন্ন কথার ভিতরে একে অপরের মনের কথা শেয়ার করে।কী কী করতে চায়।দেখা যায় দুজনের ইচ্ছা প্রায় এক।সমাজসেবা।
বাহ্!
দুজনে এবার ঠিক করে কীভাবে কাজ করা যায়।।
।আসছে আগামী ২৪ শে জুন খাওয়ানোর দিবস।
আমাদের সকল মানবিক মানুষদের এবার ও পাশে চাই।
প্রতিবার ঈশ্বরের আশীর্বাদ ও আপনাদের মত মানুষদের ভালোবাসা ও সহযোগিতা কে সাথে নিয়েই মানুষ এর কাছে পৌঁছেছি তাদের একটু ভালো রাখার একটু মুখে হাসি ফোটানোর সুযোগ পেয়েছি।
বললাম চব্বিশে জুন ফীড ডের কথা অর্থাৎ খাওয়ানোর দিবস। আমরা এই দিনটি অভুক্ত মানুষের মুখে খাবার তুলে দিয়ে থাকি। এক সপ্তাহের রেশন তুলে দিই সেই সব মানুষের হাতে।
ওরা একটা ফেসবুক গ্রুপ তৈরি করে যার নাম “আমরা ফ্যামিলি গ্রুপ”। এখানে বারো মাসে তেরো পার্বন এই প্রবাদ ছাড়িয়ে বহু পার্বন চলছে। ভাবতে অবাক লাগবে না,বাস্তবে রূপায়িত প্রতিটি কর্মকান্ড। নিজেরাই অর্থ সংগ্রহ করা নিজেদের মধ্যে।মানবিক মুখ এগিয়ে আসে এই মহান যজ্ঞে।
যেমন “রক্তদান উৎসব”, ঈদের তোফা,পূজার উপহার,মিলন মেলা,গরিবের সান্তা,প্রাকৃতিক দুর্যোগে যখন যেখানে যেমন ভাবে পাশে থাকা যায় এই আমরা ফ্যামিলি গ্রুপ আছে। “জয় হো “অনুষ্ঠান,ভাইবোন ফোঁটা, আগেই বলেছি ফীড ডের কথা।ব্ল্যাক ডে পালন,অষ্টমীট,রাখীবন্ধন উৎসব,হয়েই চলেছে।
ঐ দুইজন থেকে দুশো জন নয়,দুই হাজার নয় এখন সদস্য সংখ্যা ছয় হাজার। এরা লড়াকু সৈনিক।
এদের সবচেয়ে বড়ো কাজ হলো এরা ব্লাড ডোনার গ্রুপ। না কোন অর্থের বিনিময়ে রক্ত নয়। কেবল সমস্যার কথা একটা ফোন নাম্বারে জানান দেখুন সমস্যার সমাধান।আপনারা একবার রক্তদেবেন আর আমরা ফ্যামিলি গ্রুপ সারাবছর রক্তদেবে আপনাদের।
আমরা এই রক্তের তেজেই জাত-পাত,ধর্ম নিয়ে বিবাদ করি।অথচ একটা সময় আমাদের যখন রক্তের প্রয়োজন হয় তখন দেখিনা কোন ধর্মের রক্ত? তখন রক্তের পরিচয় মানুষের রক্ত। তাহলে মানুষ মানুষের জন্য পাশে থাকবে এটাই তো স্বাভাবিক। মানবিক হ য়ে উঠবে প্রতিটি মানুষ।
সেই যুবক-যুবতী আজ কত মানুষকে নিয়ে কাজ করছে।শুরু থেকে আজ অবধি চলছে সৈনিকদের সংগ্রাম।ভালোবাসার সংগ্রাম,ভালোরাখার সংগ্রাম,মানুষের জন্য মানুষের সংগ্রাম।
আমরা ফ্যামিলি গ্রুপ এবার গত ৫ই মে রক্তদান উৎসব করলো ভোলাগিরি মঞ্চে।১০৬ জন রক্তদাতা রক্তদান করলেন।চার বছর চলছে এই রক্তদান উৎসব। রক্তদাতাদের দামী কোনো উপহার এরা দিতে পারে না।তবে রক্তাদাতাদের ফুল দিয়ে বরণ করে মেডেল পরিয়ে থ্যাঙ্ক ইউ সার্টিফিকেট আর জলখাবারের প্যাকেট দেওয়া হয়েছে। প্রত্যেক রক্তদাতা ভীষণ খুশিতে রক্ত দিয়েছেন।
রক্তদান উৎসবের একদিন পর থেকে রক্তের জন্য মানুষ আসতে শুরু করেছেন আর আমরা ফ্যামিলি গ্রুপ তাদের পাশে। আমি নিজেই একজন ব্ল্যাড ক্যানসারের পেশেন্ট।এই পরিবারের ই একজন সদস্যা।আমি চিকিৎসাধীন।রক্তদান করতে পারিনা। এখনো রক্ত দিতে লাগেনি আমার।ওষুধেই বেঁচে আছি।তবে আমি জানি আমরা ফ্যামিলি গ্রুপ আমাদের সকলের পাশে আছে আর থাকবে।ভালোবাসা জানাই সেই দুই যুবক-যুবতীকে,সাথে বাকি সহোযোদ্ধাদের কারণ সারা বছর এরা নিরলস পরিশ্রম করে চলেছে মানবিকতার পরিচয় দিয়ে আর সেই সব মানুষ দের অসংখ্য ধন্যবাদ যাঁরা আর্থিক,মানসিক দিক দিয়ে আমাদের পাশে আছেন।
রক্ত কী?
জানিনা,দেখেছি।
বইতে পড়েছি।
প্রয়োজন শরীরে
সবাই জানি,
তাই জাত-পাত ধর্ম নিয়ে
নয় হানাহানি,
মন্দির,মসজিদ,গির্জা সবাই দেখেছি,
দেবতা কোথায়?
মানুষের মাঝেই
উত্তর পেয়েছি।
রক্তের প্রয়োজনে,
হন্যে হয়ে ঘুরেছি,
রক্ত চাই।
রক্ত পেলে ই হাসি মুখ,
বাঁচবে আমাদের প্রিয়জন,
এর চেয়ে নেই বড়ো সুখ।
রক্তদান,
জীবন দান।
নয় বন্ধন রক্তের,
বন্ধন হোক হৃদয়ের।
আমরা মানুষ,
এই হোক আমাদের পরিচয়।