শিশুর অটিজমের জন্য অনেক ক্ষেত্রে  এখনো একক ভাবে মাকে দায়ী করে তাদের সঙ্গে অমানবিক আচরণ করা হয়। অথচ অটিজম সন্তান জন্মের জন্য মায়ের একক কোনো ভূমিকা নেই। সন্তান জন্মের জন্য যেমন পিতা-মাতা উভয়েরই ভূমিকা রয়েছে তেমনি অটিজম শিশুর জন্মের জন্য পিতা-মাতা উভয়েরই ভূমিকা রয়েছে। কীভাবে অটিজম শিশুর জন্ম হয় এবং মাকে দায়ী করে তাদের সঙ্গে অমানবিক আচরণ সম্পর্কিত সামাজিক সচেতনতা সৃষ্টি করতেই আজকের আলোচনা।

অটিজমের কারণ:

মাতৃগর্ভে মানব ভ্রুণ সৃষ্টির শুরু থেকেই তার মধ্যে নেগেটিভ ও পজিটিভ ২টি ফ্যাক্টর কাজ করে। ২টি ফ্যাক্টরের মধ্যে যে ফ্যাক্টরটি জয়লাভ করে সেটির প্রভাবই আমাদের শরীর ও মনে প্রতিফলিত হয়। পিতার বংশের জেনেটিক ফ্যাক্টরসমূহ শুক্রাণুর মাধ্যমে এবং মাতার বংশের জেনেটিক ফ্যাক্টরসমূহ ডিম্বাণুর মাধ্যমে সন্তানের শরীরে প্রতিস্থাপিত হয়। ফলে, সন্তান পিতা-মাতার বংশের জেনেটিক পজিটিভ ও নেগেটিভ ফ্যাক্টর নিয়ে বেড়ে উঠে। মাতার গর্ভধারণের সময় থেকেই এই ক্রিয়া শুরু হয় এবং মাতার শারীরিক, মানসিক ও সামাজিক বিষয়ও ফ্যাক্টরসমূকে যথেষ্ট প্রভাবিত করে। এভাবেই শরীরের মধ্যে জটিল প্যাথোলজি তৈরি হয় মাতার গর্ভকালীন সময়ে গর্ভের সন্তানের মধ্যে নেগেটিভ ফ্যাক্টর জোরালো থাকলে গর্ভের সন্তান এবোর্শন হওয়া অথবা অসুস্থ সন্তান ভূমিষ্ট হতে পারে। এভাবে যখন নেগেটিভ ফ্যাক্টর দ্বারা প্রভাবিত ভূমিষ্ট হওয়া একটি শিশুর ক্রমোজম এবং মস্তিষ্কের নিউরোনের মধ্যে যখন জটিলতা তৈরি হয় তখন শিশুর স্বাভাবিক বিকাশ বাধাগ্রস্ত হয়।

অটিজমে কি ঘটে?

অটিজমে আক্রান্ত শিশুর নিউরোডেভেলপমেন্ট বা মনোবিকাশের সমস্যা হয়। ব্রেনের নিউরোনসমূহ সঠিকভাবে তথ্য আদান-প্রদান করতে না পারায় শিশুর আচরণ, কথাবার্তা ও বুদ্ধিবৃত্তি স্বাভাবিকভাবে কাজ করে না। ব্রেন ডেভেলপ হয়ে পরিপূর্ণতা পেলে ব্রেনের নিউরোনসমূহ সঠিকভাবে তথ্য আদান-প্রদান করলে শিশুর আচরণ, কথাবার্তা ও বুদ্ধিবৃত্তি স্বাভাবিক হবে।

মায়ের সঙ্গে প্রয়োজন মানবিক আচরণ:

পরিবারে একটি শিশুর অটিজম আছে জানার পর সেই পরিবারের বেশির ভাগ সদস্যই এর জন্য মাকে দায়ী করেন। মায়ের সঙ্গে শুরু হয় দুর্ব্যবহার। মাকে তার পিতার বাড়িতে পাঠিয়ে দেয়া হয়। কখনো বা তাকে এর জন্য ডিভোর্সের হুমকিও দেয়া হয় যা অনেক সময় ডিভোর্স পর্যন্ত পৌঁছায়। শ্বশুরবাড়ি থেকে বলা হয় এটা নাকি তার পাপের শাস্তি। এই আধুনিক যুগেও চলছে এই বর্বরতা। অটিজম শিশুর মা না পারেন কাউকে বলতে না পারেন সহ্য করতে। বিনা অপরাধে তাকে বয়ে বেড়াতে হয় বুকভরা ব্যথা, অপমান আর তা অটিজম সন্তানকে। হাইরে মানবতা! যারা নিজের স্ত্রী এবং সন্তানের সঙ্গে এমনটি করতে পারে তারা অন্যদের সঙ্গে কিনা করতে পারে? তারা একবারও ভাবে না এই অসুস্থ সন্তান নিয়ে তার স্ত্রী কোথায় যাবে? এই অভাগা মায়েরা কারও নিকট তার দুঃখের কথা বলতে পারেন না। এসব মায়েদের দুঃখ গোপনের ব্যর্থ চেষ্টা আমি বহুবার দেখেছি।

পরিশেষে বলতে চাই, সন্তান আপনার, স্ত্রীও আপনার। আপনাদের পরিবারের সকল বিপদের দায়ভার শুধুমাত্র স্ত্রীর ঘাড়ে তুলে না দিয়ে আসুন আমরা তার পাশে দাঁড়াই। শুধু স্বামী বা তার পরিবার নয় আসুন সমগ্র সমাজ তাদের প্রতি সহযোগিতা ও সহমর্মিতার হাত বাড়িয়ে দেই। জেগে উঠুক বিবেক, জয় হোক মানবতার।

__________________________________________________________

 

 

 

__________________________________________________________

__________________________________________________________

 

 

 

 

 

 

 

 

  

Loading