আপনার মন যদি খুশি থাকে তার লক্ষণ ফুটে উঠবে আপনার চেহারাতে। কিন্তু এই ব্যস্ত এবং চাহিদাপূর্ণ জীবনে হাসিখুশি বা সতেজ মন নিয়ে চলা বেশ কঠিনই বটে। এরই প্রভাব দেখা যায় ত্বক ও চুলে। শুধুমাত্র সৌন্দর্যচর্চা করলেই নিজের রূপ পুরোপুরি তুলে ধরা যায় না, সঙ্গে চাই মনের প্রশান্তি ও আনন্দ। মূলত, বিষয় দুটি পরস্পরের পরিপূরক। অর্থাৎ আপনি খুশি থাকলে ত্বক আর চুলও খুশি। আবার বিপরীতভাবে বলা যায়, ত্বক আর চুল হাসিখুশি থাকলে আপনাকেও দেখাবে প্রাণময়। হাসিখুশি থাকতে চাই সঠিক পুষ্টি উপাদানসমৃদ্ধ উপকরণ। এ ক্ষেত্রে এমন উপকরণ বাছাই করতে হবে, যা আপনাকে এবং আপনার ত্বক ও চুলকে রাখবে হাসিখুশি।
অ্যারোমাথেরাপি তেল
মন ভালো রাখতে ও অবসাদ তাড়াতে অ্যারোমাথেরাপি বেশ জনপ্রিয়। সাধারণভাবে বলা যায়, সব তেলই ত্বক ও চুলের জন্য উপকারী। আবার ল্যাভেন্ডার, রোজমেরি, লেমন, ভ্যানিলা তেল আলাদাভাবে ত্বক ও চুলের জন্য ভালো। এ জন্য নিজের পছন্দ অনুযায়ী এক বা একাধিক তেল বিভিন্ন মাস্ক, লোশন বা বডি ক্রিমের সঙ্গে মিশিয়ে ব্যবহার করা যায়। তবে খেয়াল রাখতে হবে, এ ধরনের তেল সরাসরি ত্বকের সংস্পর্শে এলে ত্বক অধিক মাত্রায় রুক্ষ হয়ে উঠতে পারে।
যাঁদের ঘুমে সমস্যা আছে, তাঁরা ঘুমানোর আগে ল্যাভেন্ডার অয়েল ব্যবহার করতে পারেন। এটি ত্বককে ঠান্ডা রাখতে সাহায্য করে।
আপনি কী চুল লম্বা করতে চান? রোজমেরি অয়েল বেশ কার্যকর। এ ছাড়া চুলের অন্যান্য সমস্যা সমাধানেও এর বিশেষ ভূমিকা রয়েছে। তবে এই তেল সরাসরি ব্যবহার না করাই ভালো। অন্য কোনো ঠান্ডা তেল, যেমন নারকেল, অলিভ, ক্যাস্টর ইত্যাদির সঙ্গে মিশিয়ে মাথার স্ক্যাল্পে মালিশ করাই ভালো। কারণ, অধিকাংশ এসেনশিয়াল অয়েল তাপে কার্যকারিতা হারায়।
চন্দন ও সিনামন তেল ব্রণ, তেলতেলে ত্বক, পোরসের জন্য বিশেষভাবে উপযোগী। টি-ট্রি অয়েলও ব্রণ তাড়াতে দারুণ কার্যকর। রোদে পোড়া ত্বক থেকে মুক্তি বা রোদে পোড়া কালচে ভাব দূর করতে ক্যামোমাইল অয়েল ভালো কাজ করে। পাশাপাশি চুল অতিরিক্ত তৈলাক্ত না করেই স্ক্যাল্পের রুক্ষতা দূর করতেও সাহায্য করে। লেমন অয়েলে রয়েছে ব্লিচিং গুণাবলি। তাই এই তেল ত্বকের ক্লান্তি কাটাতে, ত্বককে উজ্জ্বল করতে ও ট্যানিং কমাতে ব্যবহার করা যায়।
চকলেট
চকলেট কমবেশি সবারই বেশ প্রিয়। চকলেটে রয়েছে মনমাতানো সুগন্ধ ও ভরপুর পুষ্টিগুণ। এটি ত্বক কোমল ও উজ্জ্বল রাখে। কারণ, এতে রয়েছে নানা ধরনের ফ্যাটি অ্যাসিড ও অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট। চুলের আর্দ্রতা জোগাতে ও ত্বকের কোলাজেন বাড়াতেও এটি কার্যকর। আবার সব সময় সব চকলেট সমান উপকারী নয়। অন্যান্য চকলেটের চেয়ে ডার্ক চকলেট বেশি উপকারী। মাস্ক, শাওয়ার জেল, লিপবাম—বিভিন্ন উপায়েই ব্যবহার করা যায় এটি।
গুঁড়া বা গলানো ডার্ক চকলেটের সঙ্গে অর্ধেক অলিভ অয়েল ও একটি ডিমের কুসুম মিশিয়ে সহজেই মাস্ক তৈরি করে নেওয়া যায়। যা মুখের ত্বক ও চুলের জন্য সমান উপযোগী। মাস্কটি মুখে ও চুলে মেখে ১৫ মিনিট রেখে ঠান্ডা জল দিয়ে ধুয়ে ফেলতে হবে।
চকলেট ত্বকের আর্দ্রতা ধরে রাখে। তাই স্নানের সময় শাওয়ার জেল বা বডি ওয়াশের সঙ্গে খানিকটা কোকো পাউডার মিশিয়ে ব্যবহার করলে ত্বক সজীব ও আর্দ্র থাকবে।
অনেকের বছরজুড়ে ঠোঁট এবং হাত-পায়ের তালু শুষ্ক থাকে। তাঁরা চাইলে ঘরেই তৈরি করে নিতে পারেন লিপবাম বা ময়েশ্চারাইজার। এ জন্য খানিকটা পেট্রোলিয়াম জেলি ও অল্প কোকো পাউডার কিছু সময় তাপে রেখে একসঙ্গে ভালোভাবে মিশিয়ে নিতে হবে। এরপর ঠান্ডা করে ব্যবহার করা যাবে।
আমন্ড
অবসর সময় কাটাতে অথবা সিনেমা টাইমের ভালো সঙ্গী নানা ধরনের বাদাম। এর মধ্যে রূপচর্চায় আমন্ড অতুলনীয়। ঘরোয়া স্ক্রাব হিসেবে এটি বেশি ব্যবহৃত হয়। এ ছাড়া ঠোঁট ও ত্বকের কালচে ভাব দূর করতে, ত্বকের আর্দ্রতা ধরে রাখতেও এটি কার্যকর। আমন্ড তেলেরও রয়েছে নানা গুণ। চুল পড়া কমাতে, খুশকি প্রতিরোধে সাহায্য করে।
ঠোঁটের যত্নে আমন্ড অদ্বিতীয়। এ জন্য ঘরেই তৈরি করে নিতে পারেন প্যাক। যেমন কয়েকটি আমন্ড, ১ চা-চামচ দুধের সর এবং গোলাপের কয়েকটি পাপড়ি একসঙ্গে বেটে প্যাক তৈরি করে নিতে হবে। প্রতিদিন ঘুমানোর আগে ঠোঁটে ব্যবহার করলে ঠোঁট নরম ও গোলাপি হবে।
আমন্ড স্ক্রাব হিসেবে ব্যবহার করতে চাইলে, কয়েকটি আমন্ড দুই থেকে তিন ঘণ্টা ভিজিয়ে ব্লেন্ড করে বা বেটে নিতে হবে। আবার ত্বককে আর্দ্রতা দিতেও কয়েকটি আমন্ড ভিজিয়ে বেটে, তা দিয়ে মুখ স্ক্রাব করতে পারেন। মৃত কোষ তো দূর হবেই, পাশাপাশি ত্বকে জেল্লাও আসবে।
আমন্ড পুড়িয়ে নারকেল তেলে ভিজিয়ে রাখুন কয়েক দিন। এই তেল চুল কালো করবে। পাকা চুল কমানোর জন্য এই তেল দারুণ উপকারী।