নিজস্ব প্রতিনিধি – পরিবারে আনন্দ-বেদনা, সুখ-দুঃখের অনেক কিছুই আবর্তিত হয় শিশুকে কেন্দ্র করে। শিশুর হাসি যেমন মায়ের যাবতীয় দুঃখ দূর করে দেয়, তেমনি বাবাকে অনুপ্রাণিত করে সংসারযুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়তে। প্রতিটি শিশুই ছোট্ট চারাগাছের মতো। তার মধ্যে রয়েছে বিশাল বৃক্ষ হয়ে বিকশিত হওয়ার যোগ্যতা। এই সময়ে শিশুদের আচার–ব্যবহার যেমন শেখাতে হবে, তেমনি আদর্শ খাবারের দিকে আগ্রহী করে তুলতে হবে। কারণ, শিশুদের বাড়ন্ত বয়সে সব ধরনের পুষ্টিকর খাবার খেতে হবে। অনেক সময় তারা কিছু খাবার খেতে চায় না, সেসব খাবার বিকল্প বুদ্ধিতে খাওয়াতে হবে শিশুদের। প্রতিটি পরিবারের নিয়মকানুনও আলাদা। কিন্তু এই বয়সী একটা বাচ্চার যে পরিমাণ খাদ্যপুষ্টি, ঘুম আর কার্যক্রম দরকার, তার ওপর ভিত্তি করে শিশুর জন্য রুটিন তৈরি করুন। এতে বাচ্চা যেমন রুটিন মানা শিখবে, তেমনি বাবা-মা হিসেবে আপনার জীবনযাত্রাও সহজ হবে।
অভ্যাসে শিশুর আচরণ
যদিও সাংসারিক কাজের ফাঁকে কঠিন মনে হতে পারে, বাচ্চাকে প্রচুর সময় দিন। তার সঙ্গে খেলুন। বাচ্চার জন্য অপ্রয়োজনীয় ইলেকট্রিক গ্যাজেট সরিয়ে রাখুন। মোবাইল ফোন, ট্যাব—এগুলো শিশুর জন্য নয়। তাকে হাতে খেলনা দিন, ছবিওয়ালা বই কিনে দিন। বাচ্চার সঙ্গে বসে খেলুন, বই পড়ে শোনান। মনে রাখবেন, শিশুরা গ্যাজেট চায় না। চায় আপনার নিরবচ্ছিন্ন মনোযোগ। আশপাশের ছড়িয়ে–ছিটিয়ে থাকা জিনিস, ফুল-পাতা, আকাশের রং দেখান, গাছ বা পাখি দেখিয়ে গুনতে শেখান। বই থেকে বর্ণমালা শেখান। প্রতিদিন ঘুমের অভ্যাস গড়ে তুলুন। ঘুমাতে না চাইলেও চুপচাপ শুয়ে থাকার অভ্যাস গড়ে তুলুন। তবে বাচ্চাকে ঘরের ভেতরে ও বাইরে যথেষ্ট পরিমাণ কাজ দিয়ে ব্যস্ত রাখলে বাচ্চা এমনিতে ক্লান্ত থাকবে।
দুই বছর বয়স থেকে শিশুদের ব্যক্তিত্ব গড়ে ওঠে। তখন বাবা-মায়ের দেওয়া সময়, আনন্দদায়ক অভিজ্ঞতা তার ব্যক্তিত্ব বিকাশে সহায়ক। সম্ভব হলে অন্য বাচ্চাদের সঙ্গে তাকে খেলতে দিন। খোলা পার্কে নিয়ে যান, ইচ্ছেমতো ছুটে বেড়াতে দিন। হাতে ধরে প্রকৃতি চেনান।
শিশুর খাবারে খেয়াল রাখুন
ছয় মাস থেকে দুই বছর বয়স পর্যন্ত সময়টা শিশুদের জন্য খুবই সংবেদনশীল। এই বয়সে মায়ের দুধের পাশাপাশি শিশুকে অন্যান্য সম্পূরক খাবার দেওয়া হয়। কিন্তু সম্পূরক খাবারে স্বাদের ভিন্নতা না থাকায় একই রকম খাবার খেতে শিশুর অরুচি আসে। শিশুর হজমে সমস্যা হতে পারে, এ জন্য এই বয়সী শিশুদের খাবারে খুব একটা নতুনত্ব আনা যায় না। তবে স্বাদে ভিন্নতা আনতে অবশ্যই হালকা কিছু যোগ করা যেতে পারে।
এ ছাড়া বাচ্চারা যেহেতু পানি তেমন একটা পান করে না, তাই বুকের দুধের পাশাপাশি অর্ধতরল খাবার বেশি খাওয়ানো হয়। এতে শিশুর পেট বেশি সময় ভরা থাকে। সেই সঙ্গে শিশু সব ধরনের পুষ্টি উপাদানও পায়, যা তাদের শারীরিক ও মানসিক বৃদ্ধিতে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। অনেক বাবা-মা শিশুর কোষ্ঠকাঠিন্য নিয়ে বেশ দুশ্চিন্তায় পড়েন। সাধারণত তিন থেকে পাঁচ বছরের শিশুদের মধ্যে এই সমস্যা প্রবল হয়ে দেখা দেয়। অনেক অভিভাবকই বেশির ভাগ ক্ষেত্রে শিশুদের কোষ্ঠকাঠিন্যের সমস্যাটি বুঝতে পারেন না। তাই শিশুর কোষ্ঠকাঠিন্যের বিষয়ে মা–বাবার সচেতন হওয়া খুবই প্রয়োজন। কোনো শিশু যদি সপ্তাহে তিনবারের কম মলত্যাগ করে এবং মল যদি খুব শক্ত হয়ে মলদ্বারে ব্যথা সৃষ্টি করে, ক্ষুধামান্দ্য দেখা দেয়, মাঝেমধ্যে পেটে ব্যথা হয়, পেট ফুলে থাকে, তখন মা–বাবাকে অবশ্যই বুঝতে হবে শিশু কোষ্ঠকাঠিন্যের সমস্যায় ভুগছে।
শিশুদের খাদ্যতালিকায় আঁশজাতীয় খাবার রাখুন। এতে মল নরম হয়। ফলে কোষ্ঠকাঠিন্য প্রতিরোধ হয়। কচুশাক, মিষ্টি আলুর শাক, কলমিশাক, পুদিনাপাতা, পুঁইশাক, মুলাশাক, ডাঁটাশাক, লাউ ও মিষ্টিকুমড়া ইত্যাদিতে প্রচুর আঁশ রয়েছে। পানি খাবার হজমে সহায়তা করে। বেশি পানি খেলে মলাশয় পরিষ্কার হয় এবং শরীর নতুন করে খাবার থেকে পুষ্টি গ্রহণ করতে পারে সহজে। তাই প্রতিদিন শিশুকে বেশি করে পানি খাওয়াতে হবে। শিশু পানি খেতে না চাইলে শরবত, তাজা ফলের রস বা স্যুপ খাওয়ানো যেতে পারে। অনেক শিশুরই ফাস্ট ফুড এবং মাংসজাতীয় খাবার খুবই প্রিয়। কোষ্ঠকাঠিন্য রোধের জন্য শিশুকে এই ধরনের খাবার কম দেওয়া উচিত। আপনার শিশু আপনার ভবিষ্যৎ, তাই শিশুর প্রতিপালনে মা–বাবার সচেতনতা খুবই জরুরি।