আমাদের ব্রেইনের ভেতরে একটি অতি ছোট একটি অংশ আছে যার নাম হিপ্পোক্যাম্পাস। তার কাজটি অনেকটা লাইব্রেরি কর্মীদের মতো।

আমাদের জীবনের ঘটে যাওয়া প্রতিটি  মুহূর্তের ঘটনাপ্রবাহ হিপ্পোক্যাম্পাস ক্রমানুসারে স্মৃতির ফিতায় সাজিয়ে রাখে। আপনি যেই মুহূর্তেই কোনো ঘটনা মনে করতে চাইলেন, হিপ্পোক্যাম্পাসের কাজ হলো সেটা আপনার মানসপটে ছবির মতো ফুটিয়ে তোলা।

ধরুন ছেলে বেলায় একবার স্কুল পালিয়ে সিনেমা খেলতে গিয়েছেন। আপনি চোখ বন্ধ করে মনে করার চেষ্টা করলেন। রঙিন হয়ে সেই মুহূর্তগুলো আপনার স্মৃতির আয়নায় ভেসে উঠতে থাকলো একটি একটি করে। পুরো সিকুয়েন্স মনে পড়ে গেল । সকল সঙ্গীদের চেহারা, হাসি, হৈ-হুল্লোড়, এমনকি সেদিনের কথাবার্তাগুলো।

ভাবুনতো এটা কিভাবে সম্ভব হলো? এই অসম্ভব কাজটিই করে রাখে হিপ্পোক্যাম্পাস। হিপ্পোক্যাম্পাস নিজের মধ্যে সব স্মৃতিগুলো ভবিষ্যতের প্রয়োজনে বা অপ্রয়োজনে সাজিয়ে রেখেছে ফলেই আমরা মনে করতে পারি।

হিপ্পোক্যাম্পাস এই কাজটি করে আমরা যখন রাতে ঘুমিয়ে পড়ি তখন। ঘুমের মধ্যে সারা দেহ ক্লান্ত হয়ে নিস্তেজ হয়ে পড়ে , জেগে থাকে কেবল ব্রেইন।  ব্রেইন ঘুমের সময় পুরো শরীরকে সারারাত একজন পাহারাদারের মতো পাহারা দিয়ে নিয়ে যায় ভোর বেলায়।

কিছু কিছু রোগে  মানুষ অতীতের কথাবার্তা, ঘটনা ধীরে ধীরে ভুলে যায়। হিপ্পোক্যাম্পাস যেসব রোগে শুকিয়ে যায় সেসব রোগের রোগীরা তাদের জীবনের অতীতের অনেক ঘটনা ধীরে ধীরে ভুলে যান। ডিমেনসিয়া, অ্যালঝাইমার্স, ডিপ্রেশন  অন্যতম রোগ যাতে রোগীর ব্রেইন তথা হিপ্পোক্যাম্পাস শুকিয়ে যায়, রোগী ধীরে ধীরে তার অতীত ভুলে যেতে থাকে।

ডিপ্রেশন বা হতাশা, সারাক্ষণ নেগেটিভ চিন্তা ভাবনায় মস্তিষ্কের গুরুত্বপূর্ণ অংশ ‘হিপ্পোক্যাম্পাস’ ধীরে ধীরে শুকিয়ে যায়। বয়সের প্রভাবেও এক সময় আমাদের ব্রেইনের কার্যক্ষমতা হ্রাস পায় অর্থাৎ ব্রেইন শুকিয়ে যায়। সেজন্যে বুড়ো বয়সে আমাদের দাদা দাদী, নানা নানী অনেক সময় ঠিকমতো সব কিছু মনে করতে পারেন না।

Loading