মাঙ্গলিক কন্যার কি বিয়ে হবে না?

বিশ্ববাংলা সেরা সম্মান ২০১৮, মাদার টেরেজা স্মারক সম্মান ২০১৮,

 বঙ্গরত্ন গৌরব সম্মান ২০১৮ দ্বারা অলংকৃত

আচার্য্য শিবু শাস্ত্রী

আচার্য্য, শাস্ত্রী, প্রাক শাস্ত্রী, রাষ্ট্রীয় সংস্কৃত সংস্থানম

(ভারত সরকারের মানবসম্পদ উন্নয়ন মন্ত্রক দ্বারা পরিচালিত)

জ্যোতিষ ভারতী, জ্যোতিষ শাস্ত্রী, জ্যোতিষ আচার্য, তান্ত্রিকাচার্য্য,

জ্যোতিষ এশিয়াশ্রী উপাধি প্রাপ্ত (স্বর্ণপদক প্রাপ্ত)

যোগাযোগ৯৮৩০২৯২১৭৪

Email : acharyashibusastri@gmail.com

এই বাংলাদেশে বা উত্তর ভারতের রাজ্যগুলিতে একটি ভয়ের কারণ মাঙ্গলিক দোষ। বেশীরভাগ কন্যার বিবাহ ভেঙে যায় এই দোষ আছে বলে। অনেকের কাছে প্রবল ভয়ের কারণ এই মাঙ্গলিক দোষ।

লগ্নে ব্যয় চ পাতালে যমিত্রে চাষ্টমে কুজে।

স্ত্রী জাতকে ভক্তিনাশঃ পুংসো ভার্য্যা বিনশ্যতি।।

এর অর্থ হচ্ছে মঙ্গল গ্রহ যদি লগ্ন, চতুর্থ, সপ্তম, অষ্টম ও দ্বাদশে থাকে তা হলে স্ত্রীলোকের বৈধব্য এবং পুরুষের স্ত্রী-হানি হয়ে থাকে। বধূর কোষ্ঠীতে এই রকম দোষ থাকলে কখনও বিবাহ দেবে না। স্বাভাবিক এইরূপ দোষযুক্ত কন্যার সঙ্গে কোনো পুত্রের পিতা তার পুত্রকে বিবাহ করাবে?কিন্তু কন্যার কোষ্ঠীতে মাঙ্গলিক দোষ আছে বলে শুধুমাত্র এইটুকু বিচার করলে হবে না। আবার শাস্ত্রে বলা হয়েছে –

লগ্নে ব্যয়ে চ পাতালে যামিত্রে চাষ্টমে কুজে।

কন্যা হরতি ভার্জারং ভর্ত্তা ভার্য্যাং হনিষ্যতি।।

এববিম্বে কুড়ে সংস্থে বিবাহো না কদাচন।

কাের্য্যো – বা গুণবাহুল্যে কুজে বা তাদৃশ্যে দ্বয়ো।।

এর অর্থ লগ্ন, ৪র্থ, ৭ম ও ১২শ উহার কোনো স্থানে মঙ্গল থাকলে পুরুষের স্ত্রী হানী, এবং বধূর ভর্ত্তৃনাশ হয়। অতএব বধূর কোষ্ঠীতে উক্ত ভৌমদোষ থাকলে কখনও বিবাহ করবে না। কিন্তু যদি ওই মঙ্গলে গুণবাহুল্য থাকে অর্থাৎ শুভাধিক বর্গগত মঙ্গল, উচ্চ ‘মূলত্রিকোণ’, বলবান, শুভ গ্রহদৃষ্ট বা মিত্র গ্রহ দৃষ্ট হয়ে গুণবাহল্য যুক্ত হন অথবা উভয়ের মঙ্গল পরস্পর পতি-পত্নী হানী যোগে থাকে এবং রূপ ধর্মাক্রান্ত হন। সেইরকম হলে ভৌমদোষে বিবাহে কোন অনিষ্ট হয় না।

আবার বৃহজ্যোতিঃ সার গ্রন্থে লিখিত আছে –

যামিত্রে চ সদা সৌরি লগ্নে বা হিবুকে যবা।

অষ্টমে দ্বাদশে চৈব ভৌমদোষ ন বিদ্যাতে।।

লগ্নে চতুর্থে চ ব্যায়াষ্টমে নগে রাহুঃ শনিবাপি যদি স্থিতঃ স্যাৎ।

তদা কুজো নৈব করোতি দোষং বিবাহ কালে প্রবদন্তি গর্গাঃ।।

এর অর্থ লগ্ন, ৪র্থ, ৭ম, ৮ম ও ১২শ, ইহার যোকোনো স্থানে শনি বা রাহু থাকলে উক্ত স্থানস্থিত ভৌম দোষ নষ্ট হয়। তবে আমার দীর্ঘ জ্যোতিষ জীবনে এমন ফল খুবই কম পেতে দেখেছি। এই ক্ষেত্রেও আমি জাতক-জাতিকাকে প্রতিকারের বিধান দিয়েছি। ফলে ওই সমস্ত জাতক-জাতিকার দাম্পত্য জীবন নষ্ট হয়নি। আবার দেখা গেছে যে, কোনো জাতক-জাতিকার জন্ম কোষ্ঠীতে দূর্বল মঙ্গল জায়াভাবস্থ রয়েছে, ঐ সকল জাতক-জাতিকার জীবনে নানা অনর্থ ও বৃথা চিন্তার জন্য কোন কাজে শান্তি থাকে না। তার সকল কাজে বাধা আসে। সে শত্রুদের দ্বারা বারে বারে পরাজিত হয়ে থাকে। ক্ষয়প্রাপ্ত হয়ে থাকে। পুরুষের পত্নী নাশ হয়। সে যতবারই বিবাহ করুক না কেন তার জীবনে এই দুঃখ থেকে নিষ্কৃতি মেলে না।

জ্যোতিষ শাস্ত্রের প্রাচীন গ্রন্থ হতে পাওয়া যায় –

ক্রূরৈরস্তে বিধবা ভবতি পুনর্ভু

শুশুভৈর্নারী।

ক্রুরেহষ্টমে চ বিধবা স্যাৎ সৎস্বার্থে

সা স্বয়ং ম্রিয়তে।

এর অর্থ জাতিকার পাপ গ্রহগণ লগ্নের সপ্তমে থাকলে জাতিকা বিধবা হয়। শুভাশুভ গ্রহ সপ্তমে অবস্থান করলে পুর্নভু অর্থাৎ দ্বিরূঢ়া হয়ে থাকে। আর পাপ গ্রহ অষ্টম স্থানে থাকলেও কন্যা বিধবা হয়। কিন্তু দ্বিতীয় স্থানে যদি শুভ গ্রহ থাকে তাহলে কন্যা বিধবা না হয়ে নিজেই যমালয়ে চলে যায়।

ওই কপাল নিয়ে ভারতে বহু জাতিকাই জন্ম গ্রহণ করেন। বহু কেন বলব, বেশীরভাগ জাতিকাই ভৌমদোষে দুষ্ট। তাদের কি সংসার হবে না? যদি তাদের কেউ বিবাহ না করতে চায় তবে তো পুরুষের জন্য কন্যা খুঁজে পাওয়ায় দায় হয়ে দাঁড়াবে। এই বিষয় নিয়ে বহুকাল আগে অভিজ্ঞ পন্ডিতগণেরা নানা গবেষণা করে বেশকিছু বিধান দিয়ে গেছেন। সেইগুলি মেনে চলা আমাদের প্রয়োজন। কেন বিচ্ছেদ ভাব। আজ আধুনিক সমাজে এক ব্যধী মহামারীর আকার ধারণ করেছে। আজ অনেক আধুনিক কন্যারা সংসারই বা করে ক’দিন? যে বিধবা হবার ভয় থাকবে। আমি এ কথা অনেক দুঃখের সঙ্গে বলছি, মাঙ্গলিক কন্যার বিবাহ বিচ্ছেদ হবার ভয় থাকে। কিন্তু আমি আজকাল অনেক বিবাহ বিচ্ছিন্না জাতিকার জন্ম ছক দেখেছি তাদের তো ভৌমদোষ নেই, তবে বিবাহ বিচ্ছেদ হল কেন? বেশ কিছুদিন এই ভাবনা নিয়ে উত্তর খুঁজে বেড়িয়েছি। আমি কিছু উত্তর খুঁজে পেয়েছি (১) উচ্ শিক্ষিত হওয়া ভালো তাতে নিজের ও জাতির উন্নতি হয়, কিন্তু অহংকারী হওয়া ভলো নয়। (২) দু পাতা ইংরাজী পড়ে ইংরেজের অনকিরণ করে চলা বেশ ভয়ঙ্কর (৩) বিদুষী সেজে পুরাতন প্রথাকে একেবারে বর্জন করা। শিক্ষার কোন বড়াই নয়, বিদেশীরা আমাদের কোনো বিষয় শিখলেও তারা তাদের আচার কায়দা বর্জন করেন না। (৪) অনেকে আবার বিজ্ঞাপনের প্রভাবে মাথা কিছুটা খারাপ করে সুন্দরী হবার চেষ্টা করে বেশ ভালো। তাতে প্রত্যেক ঘর উজ্জ্বল হয়। তাই বলে নিজেকে বিশ্ব সুন্দরী ভাবা ঠিক নয়। (৭) আজকাল অনেক মায়েরা মেয়েকে শ্বশুর বাড়ি পাঠিয়ে নিজে পিছন থেকে ছড়ি ঘোরায়। সর্বদা ফোন করে কুপরামর্শ দেয়। (৮) অনেক মা ছেলেকে বিয়ে দিয়ে বাড়িতে বৌ আনার পর ভাবতে বসেন ছেলে আমার পর হয়ে গেল, ছেলে বউয়ের ভেড়া হয়ে গেল। এমন ভাবা ঠিক নয়, এতে সংসারে অশান্তি বাড়বে। একটু অতীতে মন ও চোখ ফিরিয়ে দেখুন। আপনি যখন বৌ হয়ে সংসারে এসেছিলেন, তখন কর্তাটি কেমন ছিল। এ প্রকৃতির স্বভাব। কিছুদিন পর একটু পুরনো হলে ছেলেকে আর ভেড়া মনে হবে না। (৯)সমস্যা নিয়ে মানুষের জীবন। মাঝে মাঝে সমস্যা আসবে, তা অপরকে না জানালে বুঝবে না। তাই পরিবারের সকলের মধ্যে আলোচনা করুন। সমাধানের পথ খুলে যাবে। (১০) সামাজিক অনুষ্ঠান মেনে চলুন।

বিবাহ বিচ্ছেদ বা পতিনাশ অথবা পত্নীনাশ ঘটনাকে প্রবল দোষ বলে মাঙ্গলিককে দোষ দেবেনা না। এর সমধান করার পথ খুঁজুন। আজ এত বিবাহ বিচ্ছেদ হচ্ছে তা শুধু মাঙ্গলিকের জন্য নয়।আমরা ধর্ম বা সামাজিক অনুশাসন মানি না বলে। আমরা নিজের দোষ পরের ঘাড়ে চাপাতে ভালোবাসি। নিজেকে সুধরাতে চাই না। আমি দীর্ঘদিন জ্যোতিষ শাস্ত্রের সঙ্গে যুক্ত থেকে দেখেছি অনেকে বিবাহ বিচ্ছেদের খেলায় মেতেছে। আবার কেউ, ব্যাঙ্কের আমানত বাড়াবার ব্যবসা ভাবছে। আবার কেউ ফুর্তির ফোয়ারা তোলায় বারবার রূচি পরিবর্তন করছে। ভাবছে এতে অনেক সুখ লাভ হচ্ছে। আবার কেউ টাকার গরমে জীবন বিলোতে চাইছে। অনেকে আবার আধুনিকতার দোহাই দিয়ে সামাজিক প্রথা বর্জন করে মজার খেলায় ভাসছে। এতেই দুঃখ বাড়ছে। আপনি নিজের তো ক্ষতি করছেন এবং পরবর্তী প্রজন্মকে পাঁকে ঠেলে দিচ্ছেন, তাই নয় কী? শুধু কি মাঙ্গলিক কন্যার দোষ? আমি তো তিরিশ বছর ধরে দেখছি অনেক মাঙ্গলিক কন্যা এখনও তারা দিব্যি সংসার করছে। তবে তারা শাস্ত্রের বিধান মেনে চলছে। কোনো মাঙ্গলিক জাতক-জাতিকা অপয়া নয়। তাদের অনেকের দাম্পত্য জীবন বেশ সুখের। আমি মনে করি মাঙ্গলিক জাতক-জাতিকাদের তো অবশ্যই, তাছাড়া প্রত্যেক দম্পতিকে শাস্ত্রের বিধানগুলি মানা উচিত। শাস্ত্রের বিধানগুলি আমি আলোচনা করছি।

শাস্ত্রের বিধান ঃ-

(১) যারা মাঙ্গলিক জাতক-জাতিকা তাদের উচিত বিবাহের আগে একজন সৎ আচার্য্যকে দিয়ে শাস্ত্র সম্মত বিধানে মাঙ্গলিক রোধের অনুষ্ঠান করিয়ে নেওয়া। এতে বিবাহ যোগাযোগ, অনুষ্ঠান, স্বাস্থ্যহানী রোধ ও সুখী দাম্পত্য জীবনের পূর্বাভাষ হতে পারে।

(২) মাঙ্গলিক জাতক-জাতিকার রক্তপ্রবাল ধারণ করা কর্তব্য।

(৩) অভিজ্ঞ জ্যেতিষী দ্বারা জন্ম ছক বিচার করিয়ে বেশ কিছু প্রতিকার করিয়ে নেওয়া দরকার। কারণ শত্রু গ্রহ, দাম্পত্য জীবনে একটি গুরুত্বপূর্ণ। এর প্রভাবেও অনেক শুভ-অশুভ ঘটনা ঘটে।

(৪) শাস্ত্রীয় অনুষ্ঠান করে বিবাহ করা। এতে দুটি পরিবারের মধ্যে মেল বন্ধন ঘটে।

(৫) বিবাহিত নারীদের শাঁখা, পলা ও ভেষজ সিঁদুর ব্যবহার করা প্রয়োজন।

Loading