নিজস্ব প্রতিনিধি – একটানা দীর্ঘ সময় ধরে বসে থাকার কারণে স্বাস্থ্যের ওপর ক্ষতিকারক প্রভাব পড়ার সম্ভাবনা রয়েছে। বেশ কয়েকজন স্বাস্থ্য গবেষক পরামর্শ দিয়েছেন যে, দীর্ঘক্ষণ বসে থাকা বা শুয়ে থাকার ফলে হৃদরোগ, ডায়াবেটিস, কোলন ক্যান্সার এবং অগ্ন্যাশয়ের সমস্যার মতো দীর্ঘস্থায়ী স্বাস্থ্য ঝুঁকি বৃদ্ধি পায়।
হৃদরোগ:
দীর্ঘ সময় বসে থাকার কারণে রক্ত প্রবাহ কমে যায় এবং ফ্যাটি অ্যাসিডগুলো আরও সহজেই হার্ট ব্লক করতে পারে। দীর্ঘক্ষণ বসে থাকার সাথে উচ্চ রক্তচাপের যোগসূত্র রয়েছে। যারা কম সময় বসে কাটান, তাদের চেয়ে দীর্ঘ সময় বসে কাটানো মানুষের হৃদরোগজনিত রোগে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা দ্বিগুণের বেশি। কোলন ক্যান্সার: গবেষণাগুলো থেকে দেখা যায় টানা বসে থাকার কারণে কোলন, স্তন এবং এন্ডোমেট্রিয়াল ক্যান্সারের ঝুঁকি রয়েছে। ত্বকে এর কারণটি স্পষ্ট নয়। একটি তত্ত্ব হলো, অতিরিক্ত ইনসুলিন কোষের বৃদ্ধিকে তরান্বিত করে। আর একটি হলো, নিয়মিত চলাচলের কারণে প্রাকৃতিক অ্যান্টিঅক্সিডেন্টগুলো বৃদ্ধি পায় যা ক্ষতিকারক কোষ হত্যা করে।
নরম পেশী:
আপনি যখন দাঁড়ান বা সোজা হয়ে বসেন, পেটের পেশী আপনাকে সোজা রাখতে সহায়তা করে। কিন্তু চেয়ারে সোজা হয়ে না বসলে এই পেশী কোনো কাজে আসে না এবং মেরুদণ্ডের নানা সমস্যা দেখা দিতে পারে।
পায়ের ব্যাধি:
দীর্ঘ সময় ধরে বসে থাকার কারণে রক্ত সঞ্চালন বাধাপ্রাপ্ত হয়, যার ফলে পায়ে তরল পদার্থ সঞ্চারিত হয়। এর থেকে পায়ের গোড়ালি ফুলে যাওয়া এবং শিরায় রক্তও জমে যেতে পারে।
নরম হাড়:
হাঁটা এবং দৌড়ানোর মতো ক্রিয়াকলাপগুলো দেহের নিম্নাংশের নরম হাড়কে শক্তিশালী করতে সাহায্য করে। সম্প্রতি অস্টিওপোরোসিস বৃদ্ধির জন্য আংশিকভাবে কার্যকলাপের অভাবকে দায়ী করেছেন বিজ্ঞানীরা।
মস্তিষ্ক:
চলন্ত পেশীগুলো মস্তিষ্কের মাধ্যমে তাজা রক্ত এবং অক্সিজেনকে পাম্প করে এবং মস্তিষ্কের সমস্ত প্রকার এবং মেজাজ-বর্ধনকারী রাসায়নিকগুলার ক্রিয়া সচল রাখে। কিন্তু যখন আমরা দীর্ঘ সময়ের জন্য বসে থাকি তখন মস্তিষ্কের সকল ক্রিয়া ধীর হয়ে যায়।
ঘাড়:
যদি আপনার বেশিরভাগ সময় কাজের জন্য কোনো ডেস্কে বসে থাকতে হয়, এসময় টাইপ করার জন্য আপনার ঘাড় কীবোর্ডের দিকে বা মাথা ফোনের দিকে ঝুঁকে থাকলে তা মেরুদণ্ডে চাপ সৃষ্টি করে এবং এর ফলে স্থায়ী ভারসাম্যহীনতা হতে পারে।
কাঁধ:
দীর্ঘ সময় ধরে বসে থাকার কারণে শুধু ঘাড়ই না, কাঁধেরও ক্ষতি হয়। বিশেষ করে ট্র্যাপিজিয়াস, যা ঘাড় এবং কাঁধকে সংযুক্ত করে।
কোমর:
আমরা যখন দীর্ঘক্ষণ সামনের দিকে ঝুঁকে বসে থাকি, তখন আমাদের মেরুদণ্ডের ডিস্কগুলোতে অনেক চাপ পড়ে। সেই সাথে চাপ পড়ে মেরুদণ্ডের পাশে থাকা বিভিন্ন মাংশ পেশি ও লিগামেন্টের ওপর। ডিস্কগুলো নরম হওয়ায় অস্বাভাবিক চাপের কারণে ধীরে ধীরে তা স্ফিত হয়ে মেরুদণ্ডের ভেতর থেকে শরীরের বিভিন্ন নার্ভের ওপর চাপ দেয়। আর এজন্য আমরা ব্যথা অনুভব করি। চাপের তারতম্য বা তীব্রতার ওপর ব্যথার ধরণ নির্ভর করে। চাপ যত বেশি হবে, ব্যথার তীব্রতাও বেশি হবে, সেই সাথে কোমরে ব্যথা ছড়িয়ে পড়বে।
বসার সঠিক নিয়ম: আপনার যদি প্রায়শই বসে কাজ করতে হয়ম সঠিকভাবে করার চেষ্টা করুন।
১. সামনের দিকে ঝুঁকে না যাওয়া।
২. কাঁধ শিথিল রাখা
৩. হাত দুই পাশে মিশিয়ে রাখা
৪. কনুই ৯০ ডিগ্রি বক্র রাখা
৫. কোমর সোজা রেখে বসা
৬. পা সমতলে রাখা
৭. প্রতি আধা ঘন্টা পর পর উঠে ৩-৫ মিনিট হাঁটা।