নিজস্ব প্রতিনিধি – বদহজম একটি সমস্যা। সামান্য এই সমস্যাটিই মাঝে মাঝে প্রকট হয়ে ওঠে। অনেক সময় বদহজম বড় কোনো অসুখের উপসর্গ হিসেবে কাজ করে। পরিবেশদূষণ, ভেজাল খাবার ও নানান কারণে বদহজম হয়। মঝে মাঝে এই সমস্যা লুকায়িত ও বড় কোনো অসুখের উপসর্গ হিসেবে কাজ করে। বার বার ও দীর্ঘদিন যাবৎ বদহজমের সমস্যা হলে দেরি না করে, কারণ ও প্রতিকারে প্রতি মনোযোগী হন। বদহজম, অ্যাসিডিটি বা বুকে জ্বালা পোড়া চরম হয়ে গেলে বুকে প্রচণ্ড পরিমাণে ব্যথা পর্যন্ত হতে পারে। অনেক সময় মনে হয় হূৎপিণ্ডের অসুখ। কিন্তু বুকে ব্যথা মানে সব সময় হার্টের অসুখ নয়। অতিরিক্ত বদহজম থেকেও বুকে ব্যথা হয়। সামান্য কিছু অভ্যাস ও সচেতনতা আমাদের দেবে এ সমস্যা থেকে মুক্তি।
বদহজমের কারণ ও প্রতিকার
কারণগুলো হলো : খাবার সময় খুব দ্রুত খাওয়া। সঠিকভাবে চিবানোর অভাব, অতিরিক্ত দুশ্চিন্তা, মানসিক অবসাদ, নিয়মিত রাত জেগে ডিউটি করা, সঠিক সময়ে খাওয়ার অভাব, খাবারে অতিরিক্ত তেল-মসলা খাওয়া, তৈলাক্ত চর্বিজাতীয় খাবার বেশি খেলে এ ধরনের সমস্যা হয়।
পাকস্থলীর কোনো অসুখ, খাদ্যনালির কোনো গঠনগত ত্রুটি, মাত্রাতিরিক্ত এসিডিটির সমস্যা, অতিরিক্ত কোষ্ঠকাঠিন্য, দীর্ঘ সময় যাবৎ না খেয়ে থাকার পরে এক সাথে অতিরিক্ত খেয়ে ফেলা, হঠাৎ করে খুব বেশি পরিমাণে খাবার নিয়ন্ত্রণ করা, অতিরিক্ত ঝাল খাওয়া, গভীর রাতে বা খুব ভোরে একসাথে অনেক বেশি খাওয়া হলো খাবার সঠিকভাবে হজম না হওয়ার অন্যতম কারণ।
প্যানক্রিয়াস নামের এক ধরনে অঙ্গ রয়েছে, যাতে ইনফেকশন হলে খাবার সঠিকভাবে হজম হয় না। রক্তে চিনির মাত্রা অতিরিক্ত বেড়ে গেলে হজম শক্তি দুর্বল হয়ে যায়।
বিভিন্ন রকম ওষুধ খেলেও হজম শক্তি কমে। বিশেষত যারা বয়স্ক বা নানান রকম অসুখে আক্রান্ত, হাঁটাচলা ঠিকভাবে করতে পারেন না, মানসিক রোগ বা কেমোথেরাপির ওষুধ খান, এই সমস্যাগুলোও হজম শক্তি দুর্বল হওয়ার জন্য দায়ী।
মাদকদ্রব্য, ধূমপান, অতিরিক্ত চা-কফি, পান, সুপারি, গুল, জর্দা প্রভৃতি হজম শক্তি দুর্বল করে। দেহের কোথাও ক্যানসার, খাদ্যনালি থেকে পাকস্থলী পর্যন্ত কোনো গঠনগত ত্রুটি, খাবার হজমের সাথে সম্পৃক্ত কোনো অঙ্গ বা নালিতে ইনফেকশন বা কোনো অসুখ, দীর্ঘ বছর ধরে খাবারে প্রচণ্ড অনিয়ম, হঠাৎ করে ওজন বাড়ানোর জন্য অতিরিক্ত খাবার নিয়ন্ত্রণ, কৃমির আক্রমণ, দীর্ঘ বছর যাবৎ বদহজমের সমস্যা, পানি খুব অল্প পরিমাণে খাবার অভ্যাস (২৪ ঘণ্টাতে ৩-৪ গ্লাস), খাবারে প্রচণ্ড পরিমাণে অনিয়ম। গলব্লাডারে পাথর, কিডনিতে পাথর, খাদ্যনালির অপারেশনের পরে হজমে সমস্যা হতে পারে।
হজমের সমস্যা প্রতিকারের জন্য আমাদের করণীয়:
– নিয়মিত দুই লিটার পানি পান করুন। তবে কিডনির সমস্যাতে আক্রান্ত ব্যক্তিরা চিকিৎসকের পরামর্শে পানি পান করুন।
– অতিরিক্ত তেল, মসলা, চর্বিজাতীয় খাবার, অতিরিক্ত ফাস্টফুড, কোমল পানীয় পরিহার করুন। একবারে অতিরিক্ত খাবার না খেয়ে ধীরে ধীরে ভালোভাবে চিবিয়ে খান।
– মন থেকে ঝেড়ে ফেলুন হতাশা, কষ্ট। খাবার সময় মনোযোগ দিয়ে খান। হঠাৎ অতিরিক্ত খাবার নিয়ন্ত্রণ ঠিক নয়। ধীরে ধীরে খাবারের পরিমাণ কমান। আবার একবারে খুব বেশি খাওয়া ঠিক নয়।
– অতিরিক্ত রাত জেগে কাজ করাটা পরিহার করুন। যতটা সম্ভব সঠিক সময়ে খাবার খান।
– সব ধরনের মাদকদ্রব্য পরিহার করুন। ধূমপান থেকে বিরত থাকুন এবং খাবার সাথে সাথে ঘুমাবেন না।
– নিয়মিত হাঁটুন। উচ্চরক্তচাপ, ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে রাখুন।
– কোনো ওষুধ খাবার পরে হজমে সমস্যা হলে চিকিৎসকের পরামর্শ নিন।
– চিকিৎসকের পরামর্শ ব্যতীত একই ওষুধ দীর্ঘ বছর যাবৎ খাবেন না।
– টাইফয়েড, ডেঙ্গুজ্বরের পরে বা পেটের বড় কোনো অপারেশানের পরে হজম শক্তি কমে যায় অনেকের। এ বিষয়ে চিকিৎসকের পরামর্শ নিন।
বদহজম মারাত্মক কোনো সমস্যা নয়। তবে বছরের পর বছর এই সমস্যা তীব্র হতে থাকলে, অবহেলা করাটা উচিত হবে না। কারণ অনেক লুক্কায়িত অসুখের উপসর্গ হলো বদহজম। তাই নিজের প্রতি দৃষ্টি দিন।