নিজস্ব প্রতিনিধি – বাঁকুড়া শহরের এক ব্যক্তি। পেশায় তিনি সরকারি হাসপাতালের স্বাস্থ্যকর্মী। মাসিক বেতন প্রায় ৬০ হাজার টাকা। তারপরও টাকা জমানোর নেশায় শহরের বিভিন্ন প্রান্তে ঘুরে ঘুরে ভিক্ষা করেন তিনি। সম্প্রতি তাকে ভিক্ষুক ভেবে উদ্ধার করে ভবঘুরেদের রাত্রিনিবাসে নিয়ে যাওয়া হয়। কিন্তু তিনি সেখানে থাকতে চান না। পরক্ষণে জানান, তিনি সরকারি হাসপাতালে চাকরি করেন! ওই ব্যক্তির স্ত্রীর দাবি, তার স্বামী টাকা জমানোর নেশায় দীর্ঘদিন ভিক্ষা করছেন। তবে তিনি বাড়িতে কোনো টাকা দেন না। সব ব্যাঙ্কের সেভিংস অ্যাকাউন্টে জমা রাখেন। সূত্র জানায়, কাঁচা-পাকা চুল। গালের খোঁচা দাড়ি ঢাকা ময়লা মাস্কে। কনুই পর্যন্ত গোটানো কালো চিটে পড়া সাদা শার্ট। ততধিক ময়লা, হাঁটু পর্যন্ত গোটানো প্যান্ট। সঙ্গে লাঠি আর নাইলনের ব্যাগ। তাতে রাখা এনামেলের বাটি, কিছু ময়লা, ছেঁড়া পোশাক। গত শুক্রবার গভীর রাতে বাঁকুড়া স্টেশনের টিকিট কাউন্টার চত্বর থেকে বছর পঞ্চাশের ওই ব্যক্তিকে উদ্ধার করেন বাঁকুড়া পৌরসভার ভবঘুরেদের রাত্রিনিবাস পরিচালনাকারী সংস্থার কর্মীরা। সেখানে প্রাথমিকভাবে ভিক্ষুক হিসেবে নিজের নাম-পরিচয় লেখান তিনি। কিন্তু গত রবিবার তিনি সেখান থেকে বের হওয়ার জন্য জোরাজোরি শুরু করেন। রাত্রিনিবাসের কর্মীদের দাবি, তাদের কাছে তিনি স্বীকার করেন সরকারি হাসপাতালের কর্মী। তার নাম-পরিচয়ও আলাদা। হাসপাতালের কাজে যোগ দিতে চেয়ে তিনি আবেদন করায় গত মঙ্গলবার সকালে তাকে ছেড়ে দেওয়া হয়। তবে পুরো ঘটনাটি পুলিশকে লিখিতভাবে জানিয়েছে ভবঘুরেদের ভবন পরিচালনার দায়িত্বে থাকা সংস্থা। বাঁকুড়া পৌরসভার সদস্য দিলীপ আগরওয়াল ও পৌরসভার ভবঘুরেদের রাত্রিনিবাস পরিচালনকারী সংস্থার সম্পাদক অরুণ সিংহ বলেন, ‘ভিক্ষুক পরিচয় পেয়ে তাকে উদ্ধার করা হয়েছিল। কিন্তু সেখানে থাকা-খাওয়ার ব্যবস্থা থাকা সত্ত্বেও গত রবিবার ওই ব্যক্তি ছাড়া পাওয়ার জন্য জেদাজেদি করায় সন্দেহ হয়। উনি সরকারি কর্মী শুনে আমরা তাজ্জব!’ এদিকে ওই ব্যক্তির সহকর্মীরা জানান, ছেঁড়া ও নোংরা পোশাক পরলেও হাসপাতালে নিয়মিত যান তিনি। এক সহকর্মী বলেন, ‘আমরাও তাকে স্টেশনে, বাসস্ট্যান্ডে ভিক্ষা করতে দেখেছি বহু দিন। নিষেধ করলে বলেন, ‘চাকরি করলে ভিক্ষা করা যাবে না, এমন নিয়ম আছে নাকি?’ স্বামীর ভিক্ষা করার বিষয়ে তার স্ত্রী বলেন, ‘বিয়ের পরেই জানতে পারি, টাকা জমানোর নেশাতেই চাকরির বাইরেও ভিক্ষা করেন স্বামী। শুনেছি, দুটি ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট রয়েছে। একটিতে বছর চারেক আগে প্রায় ৮০ লাখ টাকা ছিল বলে মনে পড়ে। এখন হয়তো কোটি টাকা হয়ে গিয়েছে। তবে উনি আমাকে কানাকড়িও দেন না। বাপের বাড়ির আর্থিক সাহায্যে কোনোমতে একমাত্র মেয়েকে মানুষ করছি।’ ওই বৃদ্ধ যে হাসপাতালের কর্মী তার সুপার সুনীলকুমার সিংহ বলেন, ‘ওই ব্যক্তির পরিবার নানা অভিযোগ করেছেন। দেখছি, কী করা যায়।’ জেলা স্বাস্থ্য দপ্তরের এক কর্তার মন্তব্য, ‘ভুয়া আইপিএস, ভুয়া টিকা-কাণ্ডের পরে এবার ভুয়া ভিক্ষাজীবী- ভাবা যাচ্ছে না!’

Loading