নিজস্ব প্রতিনিধি – পা দিলেই ১৫। বেসরকারি কিছু বাস রাস্তায় নামতেই লাগামছাড়া ভাড়া নিতে শুরু করেছেন কিছু রুটের কন্ডাক্টররা। হাওড়া স্টেশন থেকে ছেড়ে ব্রিজ পার করিয়ে বড়বাজার নামাতেই যাত্রীর থেকে নেওয়া হচ্ছে পনেরো টাকা। গতবার লকডাউন শেষে বাস চালু হলে সাতের বদলে ১০ টাকা প্রথম ধাপে ভাড়া নেওয়া হত। পরে দু’টাকা করে চার কিলোমিটার অন্তর ভাড়া বাড়ত। আর এবার বেশ কিছু রুট শুরুতেই পনেরো টাকা ভাড়া নিয়ে নিচ্ছে। আর তারপর চার কিলোমিটার অন্তর ভাড়া বাড়াচ্ছে পাঁচ টাকা করে। ফলে ১৬ কিলোমিটারের বেশি যেতে হলে মানে একটু দূরে গেলেই ভাড়া গিয়ে দাঁড়াচ্ছে ৩৫ টাকা। যেখানে ওই দূরত্বের ভাড়া ছিল ১২ টাকা। তবে কিছু রুট সর্বনিম্ন ভাড়া ১০ টাকাও নিচ্ছে। কিন্তু সেক্ষেত্রেও কিলোমিটারের হিসাবে ১২ টাকার ভাড়া হয়ে যাচ্ছে ৩০ টাকা। যাত্রীদের দাবি, সরকার ভাড়া ঠিক না করে দিলে যা খুশি ভাড়া নিচ্ছে কন্ডাক্টররা। অথচ ঠিকঠাক বাসও পাওয়া যাচ্ছে না। এরকম অবস্থায় ভুগছেন যাত্রীরা। এ বিষয়ে রাজ্যের পরিবহণমন্ত্রী ফিরহাদ হাকিম বলেন, “এরকম ভাবে বাড়তি ভাড়া নেওয়া বেআইনি। সাধারণ মানুষ এমনিতেই সমস্যার মধ্যে রয়েছেন। তার মধ্যে বাড়তি ভাড়া না নিতে বাসমালিকদের অনুরোধ করবো।” বাসমালিকদের বক্তব্য, ডিজেলের দাম যা বেড়েছে, তাতে ভাড়া বেশি নেওয়া ছাড়া উপায় নেই। না হলে বাস নামবে না। কিন্তু প্রথম ধাপেই ১৫ টাকা নেওয়াটা ঠিক না। তবে এখনও রাস্তায় বেসরকারি বাসের সংখ্যা বেশ কম। মালিকদের দাবি, সোমবার থেকে হয়তো আরও বেশি বাস রাস্তায় নামবে। সাধারণ মানুষের অসুবিধার কথা ভেবে বাসের ভাড়া বাড়ায়নি সরকার। বাসমালিকদের সুবিধায় মকুব করেছে রোড ট্যাক্স। কিন্তু তাতেও যে রাস্তায় পরিবহন ব্যবস্থার হাল ফিরেছে তেমন নয়। তবু যে কয়েকটি বাস নামছে হাতে গোনা তারাও মাত্রাতিরিক্ত ভাড়া হাঁকছেন বলে অভিযোগ যাত্রীদের। হাওড়া থেকে ছাড়া অধিকাংশ রুটের বাসে পা দিলেই নিচ্ছে ১৫ টাকা। না হলে নেমে যেতে বলা হচ্ছে বাস থেকে। এল২৩৮, ধর্মতলা-বারাসত-কল্যাণী, ধর্মতলা-বসিরহাট রুটে এই ভাড়া নেওয়া হচ্ছে বলে অভিযোগ। এছাড়াও উত্তর কলকাতা ও শহরতলির মধ্যে চলা রুট, এবং যে বাসগুলো সলপ, ডানকুনির দিক থেকে এসে বালি হয়ে সেক্টর ফাইভ বা উল্টোডাঙার দিকে যায় সেগুলিতে এই সর্বনিম্ন ভাড়া ১৫ টাকা নেওয়া হচ্ছে। বেশি দূরত্বের যেতে গেলে যাত্রীকে দিতে হচ্ছে আগের থেকে দ্বিগুণ অথবা আড়াইগুণ ভাড়া। তবে এটা যে ঠিক নয় তা মানছেন বাস মালিক সংগঠনের প্রতিনিধিরাও। তাদের বক্তব্য, ডিজেলের দাম বেড়েছে বলে একটু ভাড়া বেশি নেওয়া যেতে পারে। কিন্তু তা বলে কখনওই তা দ্বিগুন বা তার বেশি হওয়া উচিত না। জয়েন্ট কাউন্সিল অফ বার সিন্ডিকেটের সাধারণ সম্পাদক তপন বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, “এভাবে সরকারি নির্দেশিকা ছাড়া বাসের বাড়তি ভাড়া নেওয়া বেআইনি। আমরা চাই সরকার ভাড়া বৃদ্ধি করে একটা নির্দিষ্ট ভাড়া ঠিক করে দিক। যাতে মানুষ এবং কন্ডাকটরদের মধ্যে ভুল বোঝাবুঝি বন্ধ হয়। গত বছর এই বেশি ভাড়া নিয়ে বহু অশান্তি হয়েছে।” ওয়েস্ট বেঙ্গল বাস মিনিবাস ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক প্রদীপ নারায়ন বোস বলেন, ” কোথাও কোথাও সাতের ভাড়া অনুদান হিসাবে ১০ টাকা নেওয়া হচ্ছে। কিন্তু একেবারে ১৫ টাকা ভাড়া করা ঠিক না। হয়তো এসটিএ পারমিট যাদের, তারা এটা করছে। ওই বাসে এমনিতেই বেশি ভাড়া।”

Loading