নিজস্ব প্রতিনিধি – পুজোর আগেই রাজ্যের ১১৬টি পুরসভার নির্বাচন করাতে চায় রাজ্য। ইতিমধ্যেই পুর ও নগরোন্নয়ন দপ্তরের কর্তারা এই নিয়ে প্রাথমিক আলোচনা সেরেছেন। পুজোর আগে নির্বাচন করাতে কোনও অসুবিধা হবে কিনা, তা নিয়ে রাজ্য নির্বাচন কমিশনের মতামতও রাজ্য চেয়েছিল। নির্বাচন কমিশন ভোট করাতে অসুবিধা নেই বলে জানিয়ে দিয়েছে। তবে রাজ্যের সবচেয়ে বেশি চিন্তা কোভিড পরিস্থিতি। এখন সংক্রমণের হার অনেক কমে গেলেও অক্টোবরে ফের তৃতীয় ঢেউ আসতে পারে বলে স্বাস্থ্য দপ্তরের কর্তারা আশঙ্কা করছেন। সেক্ষেত্রে নির্বাচনের জন্য সংক্রমণ বেড়ে গেলে রাজ্যকে চাপে পড়তে হতে পারে। এর আগে বিধানসভা ভোট ৮ দফায় হওয়া নিয়ে নির্বাচন কমিশনের বিরুদ্ধে সরব হয়েছিল তৃণমূল, বাম ও কংগ্রেস। এবার একইভাবে পুরসভা ভোট করালে বিরোধীদের সমালোচনার মুখে রাজ্যকে পড়তে হতে পারে। সাধারণ মানুষও ভালোভাবে তা দেখবেন না বলে রাজ্য প্রশাসনের কর্তারা মনে করছেন। তাই স্বাস্থ্য দপ্তরের সঙ্গে পরামর্শ করেই নির্বাচন করানোর সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। জুন মাসের শেষেই এই নিয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়া হতে পারে বলে নবান্ন সূত্রে জানা গিয়েছে। রাজ্যের পুরমন্ত্রী চন্দ্রিমা ভট্টাচার্য বলেন, কোভিড পরিস্থিতির জন্য পুরসভার ভোট করানো যায়নি। রাজ্য দ্রুত পুরসভার ভোট করানোর পক্ষপাতী। পরিস্থিতি অনুযায়ী সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। রাজ্যের প্রায় প্রতিটি পুরসভারই মেয়াদ শেষ হয়ে গিয়েছে। হাওড়া সহ কয়েকটি পুরসভার মেয়াদ ৩ বছর আগে শেষ হয়েছে। সেখানে প্রশাসকমণ্ডলী বসিয়ে কাজ চালানো হচ্ছে। ২০২০ সালের মে মাসে রাজ্যের সব পুরসভার ভোট করানোর কথা রাজ্য সরকার ভেবেছিল। কিন্তু তখন কোভিড পরিস্থিতি ব্যাপক আকার নেওয়ায় রাজ্যে লকডাউন চলছিল। তাই পুরসভা ভোট করানো সম্ভব হয়নি। এবার বিধানসভা ভোটের জন্য মে মাস পর্যন্ত ভোট করানো সম্ভব হয়নি। তারপরই করোনা সংক্রমণ হু হু করে বাড়তে শুরু করে। রাজ্যে দৈনিক সংক্রমণ ২১ হাজারে পৌঁছে গিয়েছিল। মে ও জুন মাসে কঠোর বিধিনিষেধ জারি থাকায় সংক্রমণের গতি অনেকখানি হ্রাস পেয়েছে। এখন আড়াই হাজারের কাছাকাছি দৈনিক সংক্রমণ হচ্ছে। মৃত্যুর সংখ্যাও অনেকটা নিয়ন্ত্রণে আনা সম্ভব হয়েছে। বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, একটি ঢেউ চলে যাওয়ার পর তিনমাস স্থিতাবস্থা বজায় থাকে। তারপর নতুন ঢেউ আসার আশঙ্কা থাকে। সেই হিসেবে অক্টোবরে তৃতীয় ঢেউ আসতে পারে বলে স্বাস্থ্য দপ্তরের কর্তারা আশঙ্কা করছেন। তাছাড়া অক্টোবর ও নভেম্বরের মাঝামাঝি পর্যন্ত রাজ্যে উৎসবের মরশুম চলবে। তখন পুরসভা ভোট সম্ভব নয়। তাই সেপ্টেম্বরেই ভোট করানোর পক্ষে অনেকে মত দিচ্ছেন।
এই ভোটের ব্যাপারে রাজ্যের আরও চিন্তা রয়েছে। সেপ্টেম্বরে ভরা বর্ষা চলবে। প্রতিবছরই রাজ্যের বেশ কিছু পুরসভা এলাকায় বর্ষায় জল জমে থাকে। তার মধ্যে পশ্চিম মেদিনীপুরের ঘাটাল অন্যতম। এই পুরসভার কয়েকটি ওয়ার্ডে রীতিমতো নৌকা চালাতে হয়। একই অবস্থা হয় হুগলির ডানকুনি পুরসভা এলাকার কয়েকটি ওয়ার্ডে। উত্তরবঙ্গেও কয়েকটি পুর এলাকা জলমগ্ন হয়ে থাকে। ওই পরিস্থিতিতে সেখানে ভোট করানো কঠিন হবে। তাই পুরসভা ভোট কবে করানো যাবে, তা নিয়ে অনেকেই চিন্তায় আছেন। তবে তৃণমূল সূত্রে জানা গিয়েছে, পুজোর আগেই পুরসভা ভোট মিটিয়ে ফেলতে চায় দল। কর্পোরেশনের ভোটগুলি একদিনে ও পুরসভাগুলির ভোট আরেকদিনে করার কথা ভাবা হচ্ছে। তাতে পর্যাপ্ত পুলিশও সর্বত্র মোতায়েন করা সম্ভব হবে। কোনও এলাকা জলমগ্ন থাকলে তার বিকল্প ব্যবস্থা কী করা যায়, তা নিয়ে কমিশনের কর্তাদের মতামত নেওয়া হবে। তার আগে কমিশন সর্বদলীয় বৈঠকও করবে। এমনিতেই রাজ্যের ৬টি বিধানসভার ভোট করাতে হবে। গোসাবায় বিধায়কের মৃত্যুতে ওই আসনটিও শূন্য হয়েছে। ফলে মুর্শিদাবাদের দুটি কেন্দ্রে নির্বাচন ও ৫টি কেন্দ্রে উপনির্বাচন বাকি রয়েছে। ৫ নভেম্বরের মধ্যে ভবানীপুরে উপনির্বাচন করানো না হলে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে ইস্তফা দিতে হবে। সূএ: উত্তরবঙ্গ সংবাদ
150 total views, 2 views today