নিজস্ব প্রতিনিধি- একুশের পশ্চিমবঙ্গ বিধানসভা নির্বাচনে হাইভোল্টেজ কেন্দ্র ‘নন্দীগ্রাম’ থেকে মনোনয়ন পত্র জমা দিলেন তৃণমূল কংগ্রেসের প্রধান মমতা ব্যনার্জি।
বুধবার দুপুরে হলদিয়ার মহকুমা শাসকের দফতরে (এসডিও) নন্দীগ্রামের প্রার্থী হিসেবে নিজের মনোনয়ন পত্র জমা দেন মমতা। এই মনোনয়নপত্রে চারজন প্রস্তাবক (প্রোপোজর) আছেন- এরা হলেন আবদুল সামাদ, স্বদেশ দাস, মহাদেব বাগ এবং সুষমা মাইতি। এই কেন্দ্রে মমতা ব্যানার্জির নির্বাচনী এজেন্ট হয়েছে শেখ সুফিয়ান।
এর আগে এদিন দুপুরে নন্দীগ্রামে শিব মন্দিরে পূজা দেন ও আরতি করেন মমতা। সেখান থেকে চলে যান হলদিয়ায়। সেখানে রোড শো করে হলদিয়ায় মহকুমা শাসকের দফতরে পৌঁছান মুখ্যমন্ত্রী। মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার পর বাইরে অপেক্ষমান গণমাধ্যমের কর্মীদের সামনে তিনি বলেন, ‘আমাদের তৃণমূল কংগ্রেস কর্মী, প্রশাসক, গণমাধ্যমের কর্মী- সবাইকে ধন্যবাদ জানাচ্ছি। আজ আমি মনোনয়নপত্র জমা দিলাম। ’ নন্দীগ্রাম নিয়ে নিজের অনুভুতি প্রকাশ করতে গিয়ে তারই এক সময়ের বিশ্বস্ত সঙ্গী তথা এই কেন্দ্রেরই বিজেপি প্রার্থী শুভেন্দু অধিকারীকে নিশানা করেন মমতা। মমতা বলেন ‘নন্দীগ্রাম নিয়ে আমার অনুভুতি পরিস্কার। ভবানীপুর আমার যেটা কেন্দ্র ছিল, সেখানে সময়ের কোনো ব্যাপার ছিল না।
একদিন সময় দিলেই আমার কাজ হয়ে যেত। কিন্তু নন্দীগ্রামও আমার কাছে নতুন কোন জায়গা নয়। নন্দীগ্রামে যখন আন্দোলন হয়েছিল তখন মেদিনীপুরের যেসব বড় বড় নেতারা ছিলেন তারা ওই আন্দোলনে বাইরে বের হননি। কিন্তু ৭ মার্চ, ১০ ডিসেম্বর বা ১৪ মার্চ- প্রতিটি আন্দোলনে আমি নন্দীগ্রামের সাথে ছিলাম। কৃষক আন্দোলনের জন্য আমি ২৬ দিন অনশন করেছিলাম, ১৪ দিন ধরনায় বসেছিলাম।
এই কারণে আমার মন কখনও কখনও চাইছিলো যে হয় সিঙ্গুর বা নন্দীগ্রামে আমি একবার প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবো। এরপরই নন্দীগ্রামের কথা মাথায় এল। তখন ওই কেন্দ্রে কোন বিধায়ক ছিল না, কারণ উনি পদত্যাগ করেছেন। শেষবার যখন নন্দীগ্রামে আসলাম তখন আমি জিজ্ঞাসা করেছিলাম নন্দীগ্রাম দাঁড়ালে কেমন হয়? সেসময় তারা তাকে সমর্থন জানালো। তাদের এই উৎসাহ, উদ্দীপনা, সমর্থন দেখে আমার মনে হয়েছে যে নন্দীগ্রাম কেবলমাত্র স্লোগান নয়। এখানকার মাটি থেকে কৃষক আন্দোলনের সূচনা হয়েছিল। তাই এই আন্দোলনে যারা মারা গিয়েছিলেন আমি তাদের শ্রদ্ধা জানাই। ’
আসন্ন নির্বাচনে তার দল জয়ী হবে বলে আশা প্রকাশ করে মমতা বলেন, ‘নন্দীগ্রামের আরেক নাম সংগ্রাম। আমি নিজে একজন স্ট্রিট-ফাইটার। একজন সাধারণ মানুষ হিসাবে এবার সেই সংগ্রামের জায়গা থেকে লড়াই করছি। আমি আশাবাদী যে নন্দীগ্রামের মানুষ খুব খুশি হবে। তারা আমাকে ভোট দেবেন। নন্দীগ্রামের মা, ভাই, বোনেরা- সবাই মিলে আমাকে ভোট দেবেন। তৃণমূলের চিহ্নে ভোট দেবেন এবং আমাদের জয় হবেই। গোটা জেলায় যারা আমাদের দলের হয়ে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন, তাদের সকলের জন্যই আপনাদের কাছে দোয়া, প্রার্থনা চাইছি। ’
মনোনয়ন জমা দিয়ে নন্দীগ্রাম রেয়াপাড়ায় কালীমন্দিরে পূজা দেন মমতা। আগামীকাল বৃহস্পতিবার সকালে কলকাতায় ফিরবেন। কারণ ওইদিন দুপুরে দলের তরফে নির্বাচনী ইশতেহার প্রকাশ করবেন তৃণমূল নেত্রী মমতা ব্যানার্জি। ইতিমধ্যেই নন্দীগ্রামের রেয়া পাড়ায় দুই-কামরা বিশিষ্ট একটি বাড়ি ভাড়া নিয়েছেন তৃণমূল নেত্রী।
আগামী ২৭ মার্চ থেকে মোট আট দফায় রাজ্যের ২৯৪ টি আসনে নির্বাচন শুরু হচ্ছে। ১ এপ্রিল দ্বিতীয় দফায় এই নন্দীগ্রাম কেন্দ্রে ভোটগ্রহণ। এই কেন্দ্রে বিজেপির হেভিওয়েট প্রার্থী রাজ্যের সাবেক পরিবহন মন্ত্রী শুভেন্দু অধিকারী।
এদিকে নন্দীগ্রামের মাটিতে দাঁড়িয়ে তৃণমূলের প্রার্থী মমতা ব্যানার্জি যখন মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন, ঠিক তখনই এদিন সকালে নন্দীগ্রাম বাসস্ট্যান্ডে নিজের নির্বাচনী কার্যালয়ের উদ্বোধন করেন শুভেন্দু। তার আগে একটি পদযাত্রাতেও অংশগ্রহণ করেন তিনি। আগামী ১২ ই মার্চ এই কেন্দ্র থেকে মনোনয়ন পত্র জমা দেবেন শুভেন্দু।
এদিন মমতার মনোনয়নপত্র জমা দেওয়া নিয়ে শুভেন্দু কটাক্ষের সুরে বলেন ‘তিনি (মমতা) সবসময় নন্দীগ্রামকে হিংসা করেছেন। তার কারণ নন্দীগ্রামকে যদি গুরুত্ব দেওয়া হয় তবে শুভেন্দু প্রচার পেয়ে যাবেন। তিনি খুব বড় বড় কথা বলেছেন। সিঙ্গুর না হলে না কি নন্দীগ্রাম হতো না। উনি তো সিঙ্গুর থেকে পালিয়ে গিয়েছিলেন। ভোরবেলায় পুলিশ ওনাকে হুগলি ব্রিজে নামিয়ে দিয়েছিল। উনি এখন বলছেন আপনারাই বলুন আমি নন্দীগ্রামে দাঁড়াবো কি না? আমরা বলছি দাঁড়াতে আপনাকে হবেই। এবং হেরে বাড়িতে যেতে হবেই। ’
146 total views, 2 views today