নয়ন
কলমে – কেয়া দেবনাথ
গ্রা+ডাক দক্ষিণ চাতরা, থানা-বাদুড়িয়া, উত্তর চব্বিশ পরগণা,
ফর্সা পাতলা এক মাথা কালো চুলের সাদামাটা ছেলে নয়ন। স্বপ্নালু চোখ দুটিতে অপার কৌতুহল- চার দেওয়ালের মধ্যে বই-খাতা মুখে নিয়ে বসে থাকার ছেলে সে নয় সুযোগ পেলেই বেরিয়ে পরে প্রকৃতির খোলা হাওয়ায় — বাবা-মা তো হাল ছেড়ে দিয়েছেন। ছেলের জেদের কাছে তারা হার স্বীকার করে নিয়েছেন। যা পারে করুক ইচ্ছে হলে পড়তে বসবে নচেৎ নয় স্কুলে সে স্ট্যান্ড না করলেও সব বিষয়ে পাশ করে যায় এবার সে ক্লাস ফোরে,– বাবা রাজমিস্ত্রির কাজ করে সংসার চালান যদিও সময়-অসময়ে বাবার সঙ্গে যায় কাজে তাই বাবার মনে ভরসা একটাই কাজ করে সে খেতে পারবে।
কিন্তু প্রকৃতি নয়নকে বড়ই টানে করে উধাও হয়ে যায় কেউ খুঁজে পায়না, মা বুঝতে পারে ছেলে কোথায় থাকতে পারে। পুবের মাঠের আলের ধারে দু-পা ছড়িয়ে সূর্যাস্তের দৃশ্য দেখছে সে হয়তোবা কচি ধানের শিষের মাথা থেকে শিশিরে হাতখানি বুলিয়ে নিচ্ছে, কিন্তু ওর সমবয়সীদের এসব ব্যাপার স্যাপার একদম পছন্দ হয়না , তাই একরকম তারা এড়িয়েই যায়।
এহেন ছেলে এই বয়সেই একদিন সাহসিকতার পরিচয় দিয়ে দিল–এক অমাবস্যার রাত্রে এখন ঘুমে নিমগ্ন হঠাৎ করে বাইকের শব্দ হয়, শব্দ বাড়ির উঠানে এসে থামে ফিসফাস শব্দ নয়ন সচকিত হয়- অভ্যাস মতই পেনসিল কাটা ছুরি প্যান্টের পকেটে রেখে চুপিসারে পিছনের দরজা দিয়ে অন্ধকারে বেরিয়ে যায় গা ঢাকা দিয়ে।
চারজন কালো কাপড়ে সর্বাঙ্গ ঢেকে ধীরে ধীরে ঘরের দিকে আসতে থাকে ওরা ঘরে ঢুকে গেলে নয়ন প্রথমেই ছুড়ে দিয়ে দুটো গাড়ির চাকা পাংচার করে দেয় তারপরে পাশের বাড়ির কাকু ও জেঠুকে ডেকে দেয় ও জেঠুকে ডেকে তোলে কানে কানে সব বলে দেয়– ব্যস্ তারপর যা হলো বাছাধন দের সে আর না বলাই ভালো-
নয়নের সমার্থক এরপর তো বেড়েই গেল বাবা-মা খুব আদর করেছে ছেলেকে। সাহসিকতা ও উপস্থিত বুদ্ধিমত্তার জন্য– পাড়ায় তো রীতিমতো হিরো। শীতকালে স্কুলের মাঠেই হয় সব প্রতিযোগিতা মূলক খেলা বারের মতো এবারেও সে প্রস্তুত খেলার টিচার সত্য বাবু ও খুব ভালবাসেন তাকে মনে কাছে ডেকে নিয়ে কিছু কিছু টিপস্ও দিলেন। 200 মিটার দৌড়ের ট্রাকে 25 জন প্রতিযোগী বাঁ দিক থেকে প্রথমেই নয়ন। হুইসেল পড়ার সঙ্গে সঙ্গেই শুরু হলো দৌড়– দেখতে দেখতে সবার নজরে এসে গেল নয়ন অনেক ব্যবধানেই সে গিয়ে, দর্শকদের উল্লাস নয়ন নয়ন— কিন্তু অবাক কান্ড এন্ডিং পয়েন্টে দড়ি ছোঁয়ার আগেই দুই হাত পেছনে থেমে যায়- এই অবসরে পিছনের প্রতিযোগী ফার্স্ট হয়ে যায় তারপরে দৌড়ে নয়ন সেকেন্ড হয় আকস্মিক ঘটনায় সবাই হতবিহ্বল!- কি হল ছেলেটার কেন এমন বোকামি করল? সত্য বাবু থাকতে না পেরে ওকে হাত ধরে টেনে কিছু দূরে নিয়ে যায় পরে জিজ্ঞাসা করে,” এটা কী করে করলি, ইডিয়েট থামলি কেন?”– দু চোখ ভরা টলটলে জল নিয়ে মাথা নিচু করে আমতা আমতা করে বলে,– আসলে প্রথম পুরস্কার দেখলাম জলের জগ আর দ্বিতীয় হল পেনদানি,– স্যার আমার ওইটাই পছন্দ যে জলের জগ দিয়ে কি করব?- তাই——
– শেষ –