হৃদমাঝারে
কলমে : অদিতি মুখার্জী সেনগুপ্ত
আপামর বাঙালির মননে-স্বপনে, সুখে-দুঃখে, উত্থানে-পতনে যার সর্বদাই চরাচর সে আর কেউ নয়, বিশ্বকবি, সবার প্রাণের ঠাকুর রবি ঠাকুর। নয়ন আর শুকতারাও তার ব্যতিক্রম নয়। প্রথম দেখাতেই নয়ন তার মনের মনিকোঠায় শুকতারাকে স্থান দিয়ে ফেলেছিল আর তাই নবীন বরণ উৎসবে, শুকতারাকে উদ্দেশ্য করে গেয়েছিল, “আমি চিনি গো চিনি তোমারে, ওগো বিদেশিনি…”। আর সেদিন শুকতারাও মনের আনন্দে গেয়েছিল, “হৃদয় আমার নাচেরে আজিকে,ময়ূরের মত নাচে রে…”।
শান্তিনিকেতন বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার সময় ওদের একে অপরের সাথে পরিচয়, আর সেই পরিচয়ের ঘনিষ্ঠতার থেকেই একে অপরের পরিপূরক হয়ে উঠে, গেয়ে উঠেছিল,”সেদিন দুজনে দুলেছিনু বনে, ফুলডোরে বাঁধা ঝুলনা।”
আজ বৈবাহিক জীবনের পঁচিশটা বছর পেরিয়ে এসে, ওদের মনে হয়,”এমনি করেই যায় যদি দিন যাক না…”। আর কাকতালীয় ভাবে আজ পঁচিশে বৈশাখ। ওদের প্রাণের ঠাকুরের জন্মদিন দিন। তাই ওরা ঠিক করল যে আজ এই শুভ দিনে একটা ঘরোয়া অনুষ্ঠানের মাধ্যমে কবিগুরুকে শ্রদ্ধার্ঘ্য জ্ঞাপন করবে। যেমন ভাবা তেমন কাজ।
বিবাহবার্ষিকীর সন্ধ্যায় বন্ধুদের সম্মুখে উপহার স্বরূপ শুকতারা, “আমি নিশিদিন তোমায় ভালোবাসি, তুমি অবসরমত বাসিয়ো..”, গানটা গাইল। আর তখনি নয়ন গেয়ে উঠেছিল, “আমি তোমার সঙ্গে বেঁধেছি আমার প্রাণ সুরের বাঁধনে..”। তারপর বন্ধুদের অনুরোধে, এক সাথে গাইল, “মম চিত্তে নিতি নৃত্যে কে যে নাচে,
তাতা থৈথৈ, তাতা থৈথৈ, তাতা থৈথৈ।”
নয়ন আর শুকতারা-এর বাবা-মা, সন্তানদের সুখে সুখী। তারাও রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের অনুগামী এবং নয়ন আর শুকতারা তো নিজেদের মায়েদের কাছেই গানের প্রশিক্ষণ লাভ করেছে। তাই ওরা নিজেদের মায়েদের কাছে গান গাওয়ার আব্দার করল। তাদের বয়স হয়েছে, তাও সন্তানদের আব্দার ফেলতে পারল না। নয়ন-এর মা গাইলেন, “যখন পড়বে না মোর পায়ের চিহ্ন এই বাটে…”। শুকতারা-এর মা গাইলেন, “প্রাণ ভরিয়ে তৃষা হরিয়ে মোরে আরও আরও দাও প্রাণ…”। নয়ন আর শুকতারা-এর বাবা গলা মেলালেন দ্বৈত কণ্ঠে, “তোমার হল শুরু, আমার হল সারা…”। ওদের মেয়ে তৃণাই বা বাদ যায় কেন? ঠাম্মি আর মায়ের প্রশিক্ষণে ভালোই গায়। ও দুটো গান গাইল। প্রথমে, “কী গাবো আমি, কী শুনাবো, আজি আনন্দধামে…”। তারপর গাইল, “এ দিন আজি কোন ঘরে গো,
খুলে দিল দ্বার,আজি প্রাতে সূর্য ওঠা সফল হল কার…”। অনুষ্ঠানের শেষ লগ্নে নয়ন গাইল, “আমারও পরাণ যাহা চায়…”।
সবাই মিলে গেয়ে উঠল, “দাঁড়িয়ে আছো তুমি আমার গানের ওপারে…”।