আজ সে প্রাপ্তির আকাশ ছোঁয়ায়
কলমে- পিয়ালী রায় কুণ্ডু
বি/এ, ৫/6, তালতলা, জোড়ামন্দির,
বাগুইআটি, স্বাগতম ভিলা, কলকাতা – ৫৯
ছিল ভীষণ সহজ সরল, ভালোবাসার প্রিয়, আবেগী, বাবা মায়ের ভীষণ আদরের, মধ্যবিত্ত সম্মানিত ঘরের মেয়েটি। কলেজ জীবন শেষ হতে না হতেই স্কুলে শিক্ষকতার সুযোগ পায়, বেশ ছিল সাদামাটা জীবনের গতি, নাচ গান পড়াশোনা হৈ হুল্লোড় নিয়ে মেতে থাকতো, ভীষণ হাসি খুশি বন্ধুদের অতি প্রিয় ছিল সে। বাড়িতে প্রায় প্রতিদিনই গান বাজনার আসর বসতো।
সময় তাগিদে জীবনের ধাপ বদলায়, সেই ভাবেই বদলে গেল মেয়েটির জীবনের গতি। বন্ধু মারফত আলাপ ও বৈবাহিক বন্ধনে আবদ্ধ। জীবন মোড় নিল নতুন গল্পের। ছোট্ট পরিবারের মধ্যে বড় হলেও মেয়েটি শ্বশুরবাড়ির সকলকে ভালোবেসে আপন করে নিতে সচেষ্ট ছিল। বড় পরিবারে নিজেকে মানাতে মেয়েটির বিন্দুমাত্র অসুবিধা ছিল না।
যদিও দুই পরিবারের উভয়পক্ষেই মানিয়ে চলা সময়সাপেক্ষ।
অযথা সময় অসময়ে চলত তার উপর অন্যায় ব্যবহার, অপ্রাসঙ্গিক কথা, যা সূত্র ধরে কলহ বাধার চেষ্টা, অসম্মানিতভাবে হতে হয়েছে বিভিন্ন কারণে তার বাবা-মাকেও। মেয়েটির ব্যক্তিগত শিক্ষা নিয়ে ও যথেষ্ট তাকে অসম্মান করতে পিছুপা হয়নি।
দিনের পর দিন এই অন্যায় অবিচার দেখে নিজেকে অপরিচিত মনে হয়েছিল মেয়েটির । ব্যক্তি সত্তার উপর আস্থা ছিল না তার। সচ্ছল, প্রাণবন্ত মেয়েটি ভুলে গেল হাসতে। মিথ্যের উপর মিথ্যে চড়াও হতো তার ব্যবহারে। সত্য উদ্ঘাটন করার সুযোগের অভাব ছিল। কিসের ভয়ে? কেন এই অবিচার?
মানুষের জীবনে নিয়মই সব? শিক্ষা, সম্মান,ভালোবাসা তার কোন মূল্য নেই? এ কি রকম সংসারের নিয়ম, নিজের ভাগ্যের প্রতি পরিহাস হলো, ভাঙ্গন ধরল মনের, ভালোবাসার সম্পর্কে তৈরি হলো প্রাচীর।
এত অপমান, মিথ্যাচার বন্ধ করতে রুখে দাঁড়ালো মেয়েটি অন্যায়ের বিরুদ্ধে। সত্যকে সত্য, ন্যায়, অন্যায় পার্থক্য চোখে আঙুল দিয়ে দেখানো। নিজের ব্যক্তিত্বের ওপর ছিল যার পুরোদমে ভরসা, ‘ভালো তো আমাকে বাসতেই হবে’, ছিল তার নিজের প্রতি বিশ্বস্ত জেদ। ভালো না বাসার কোন কারণ তো সেই মেয়েটির মধ্যে ছিল না।
এই একাকীত্ব থেকে মুক্তি পেতে তার কলম একমাত্র হাতিয়ার, ব্যক্ত হলো মনের আচ্ছন্নের ঢেকে থাকা না বলা অনেক কথা, যন্ত্রনা। মানসিক অশান্তি হয়েছে দূরীভূত। সকলের ভালোবাসায় আজ সে আকাশ ছুঁয়েছে। নিজেকে আবার ফিরে পেয়েছে সেই প্রাণ চঞ্চল স্বচ্ছ মেয়েটির অবয়বে। এখন আনন্দে বিভোর সে নিজের জীবন নিয়ে। বিগত সকল দুঃখ তার কাছে এখন নতুন আনন্দ রূপে স্থান পেয়েছে। ঈশ্বরের শক্তি সর্বশ্রেষ্ঠ। তাঁর কাছে মেয়েটি চিরঋণী।।