“রবি বাবুকে “

✍ – কলমে- সোমনাথ ঘোষ

কন্ঠে – সুজাতা ঘোষ

মিলনপল্লী, সোনারপুর

 

আমি শতবর্ষ বাদে তোমার কবিতা পড়ছি।

তোমার ‘দুই বোন’ এর পৃথিবীতে যারা শর্মিলা ও ঊর্মিমালা, ‘বলাকা’র স্বর্গে তারাই ঈশ্বরী ও অপ্সরী।

একটি পার্থক্য রবি বাবু স্বীকার করে নাও ।

সেটি পুরুষ ও নারীর। তারা এক নয়, স্বতন্ত্র্য।

পুরুষ হচ্ছে বাইরের, স্ত্রী ঘরের।

‘স্ত্রীর পত্র’র মৃণালের হবার কথা ছিল বড়জোর ওই মালতীর মতোই। পূর্ববঙ্গের গরিব ঘরের মেয়ে, পড়ালেখা কিছু আছে, দরখাস্ত লিখতে পারত শরৎচন্দ্রের কাছে।

এটা সত্য যে মৃণাল ঘর ছাড়তে পেরেছে তার সন্তান নেই বলেই।

কিন্তু, তবু মৃণাল বিজয়ী। পতাকা ওড়ায়নি । তবে ঠিকই বিদ্রোহ করেছে।

তুমি কি লিখেছো সাধারণ মেয়েকে নিয়ে কোনো গল্প?

লিখে উঠতে পারোনি জানি । নেবে আসতে পারোনি সাধারণ মেয়ের সমতলে ।

গোরা অবশ্য আলাদা মাপের পুরুষ।

পরাধীন নয় সে। অত্যন্ত স্বাধীনচেতা,

ভয়ংকরভাবে জাতীয়তাবাদী।

ইংরেজ ও ইংরেজদের কর্মচারী উভয়ের সঙ্গে তার বিরোধ বাধে এবং সে জেলও খাটে।

‘শেষের কবিতা’ ও ‘যোগাযোগ’ একই বছরে লেখা;

কেননা, তারা একে অপর থেকে সম্পূর্ণ স্বতন্ত্র্য।

অমিত মধুসূদন নয়, যেমন লাবণ্য নয় কুমু।

অমিত ব্যবসায়ী নয়, ব্যারিস্টার। তার আছে কল্পনা, তার আছে বিদেশি সাহিত্যে অগাধ উৎসাহ ও পাঠ।

সে কবিতা লিখতে জানে, মোটরগাড়ি চালায়, অনায়াসে জয় করে নেয় যেকোনো মানুষের হৃদয়। কলকাতার ছেলে কিন্তু অধিকতর স্বাভাবিক সে অক্সফোর্ডে ও শিলঙে।

অমিত সাহেবের সন্তান গোরা থেকেও স্বতন্ত্র্য;

সে একেবারেই জাতীয়তাবাদী নয়, বরং আন্তর্জাতিক। কিন্তু, সব কিছু সত্ত্বেও, না মেনে উপায় কী যে সেও কলোনিরই বাসিন্দা। তার স্ফূর্তি বাক্যে, তার জগৎ কর্মের দিক থেকে সংকীর্ণ।

গায়ে গন্ধ নেই সংস্কারের ও ধর্মবাদিতার;

কিন্তু সুগন্ধি রয়েছে ইংরেজিপ্রীতির।

কাজ নেই, প্রেম করে বেড়ায়। দায় নেই অর্থোপার্জনের, চলে পূর্বপুরুষের অর্জিত আয়ে।

কেটি-লিজিদের সমাজেরই মানুষ সে।

লাবণ্য অত্যন্ত জেদী এবং নিজের সিদ্ধান্তে অটল থাকার মেয়ে।  তাকে দিয়ে বলিয়েছ-

“ গ্রহণ করেছাে যত ঋণী তত করেছাে আমায়।”

এত প্রেম দিয়েও কেনো নিলে কেড়ে ?কিন্তু সুগন্ধি রয়েছে ইংরেজিপ্রীতির।

কাজ নেই, প্রেম করে বেড়ায়। দায় নেই অর্থোপার্জনের, চলে পূর্বপুরুষের অর্জিত আয়ে।

কেটি-লিজিদের সমাজেরই মানুষ সে।

লাবণ্য অত্যন্ত জেদী এবং নিজের সিদ্ধান্তে অটল থাকার মেয়ে।  তাকে দিয়ে বলিয়েছ-

“ গ্রহণ করেছাে যত ঋণী তত করেছাে আমায়।”

এত প্রেম দিয়েও কেনো নিলে কেড়ে ?

……………………………………………………………………………………………………

 

 

 

Loading