কবিতা – উচ্ছেদ অভিযান

কলমে – কল্যাণী সরকার

বাণীপুর, উত্তর চব্বিশ পরগনা

……………………..

তিন পুরুষ ধরে টিনের ছাউনি তে ভর করে একটা দোকান

খুব নাম ছিলো, বটতলার তেলেভাজা ।

মধ্যরাতের দানবীয় উল্লাস

মানবিকতা কে বুড়ো আঙুল দেখিয়ে

ধূলোয় মিশিয়ে দিলো সব ।

ষাটোর্ধ্ব বাবার হাত শক্ত মুঠোয় নিয়ে

অপলক বছর তেইশের ছেলে,

যে চার হাত বিকেলের ব্যস্ততা সামাল দিতে হিমশিম

খালি হাতে ঊর্ধ্বমুখে তাকিয়ে তারা,

অনেক খেটে দাঁড় করিয়ে ছিলাম দোকানটা

সব শেষ হয়ে গেলো! স্বগোতোক্তি বাবার ।

দু হাতে মুখ ঢেকে অঝোরে কেঁদে চলেছে

স্কুল পোষাক পরে এক বালিকা

বাবার ঝুপড়ি দোকান মাটিতে মিশে গেছে

আর সে পড়াশোনা করতে পারবে তো!!

চারিদিকে ছড়ানো টেবিল, গ্লাস, বিস্কুটের কৌটো, খেলনা গাড়ি

চায়ের পাতা, বই, খাতা, রং পেন্সিল,

সহজপাঠ ধূলায় গড়ায়!

উচ্ছেদ অভিযান – – –

বুলডোজার ধূলিস্যাৎ করে দিলো সব এক লহমায়,

সৌন্দর্যায়নের ভিড়ে চাপা পড়ে গেলো

অগুন্তি বোবা কান্না,

তছনছ হয়ে গেলো তিলে তিলে গড়ে ওঠা স্বপ্ন।

বুকে ডুকরে ওঠা কষ্ট চেপে দুটো উৎসুক চোখ

শেষবারের মতো হাতড়ে চলেছে

অবশিষ্ট কিছুর আশায়।

একটু দূরে ধংসস্তূপে উদাস দৃষ্টিতে তাকিয়ে এক প্রৌঢ়

আপন মনে বিড়বিড় করছেন – – –

অনেক লড়াই আন্দোলনের সাক্ষী এই ঘর,

রেহাই পেলোনা গুড়িয়ে দিলো

অর্ধভাঙা মার্কস এর ছবির ধূলো মুছে বললেন,

শোষণমুক্ত সমাজের স্বপ্ন দেখি আজও – – –

Loading