নিজস্ব প্রতিনিধি – দুয়ারে সরকারের সাফল্যের পরবর্তীকালে পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রীর স্বপ্নের প্রকল্প দুয়ারে রেশন । কিন্তু চালু হওয়ার সপ্তাহ দুয়েকের মধ্যেই এই প্রকল্প নিয়ে অনিশ্চয়তা । রেশন ডিলারদের একটা বড় অংশ প্রকল্প চালাতে চাইছেন না।

বিধানসভা নির্বাচনের আগে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন, তিনি ক্ষমতায় এলে রেশন সামগ্রী পৌঁছে যাবে দুয়ারে। প্রকল্পের নাম দুয়ারে রেশন। সরকারের পরিকল্পনা অনুযায়ী, কোন এলাকায় ৫০০ মিটার দূরে দূরে রেশন সামগ্রীবাহি গাড়ি দাঁড়াবে। সংশ্লিষ্ট এলাকার মানুষকে অর্থাৎ যারা গাড়ি দাঁড়ানোর ৫০০ মিটারের মধ্যে বসবাস করে, তাদের সামগ্রী বিতরণের আগাম খবর দিতে হবে। গ্রাহকরা গাড়ি থেকে সামগ্রী সংগ্রহ করবেন নিজস্ব কার্ড দেখিয়ে।

সামগ্রী বহন করার গাড়ি কেনার ক্ষেত্রে এক লাখ রুপি ভর্তুকি দেবে সরকার। মুখ্যমন্ত্রীর প্রস্তাব প্রত্যেক রেশন ডিলার দুজন কর্মী রাখতে পারবেন। তাদের বেতনের অর্ধেক বহন করবে রাজ্য সরকার। এর ফলে রাজ্যের সব রেশন দোকানের নিরিখে প্রায় ৪২ হাজার কর্মসংস্থানের সুযোগ তৈরি হবে বলে আশা প্রকাশ করেছেন মুখ্যমন্ত্রী। কিন্তু রেশন ডিলারদের সবচেয়ে বড় সংগঠন ‘জয়েন্ট ফোরাম ফর ওয়েস্ট বেঙ্গল রেশন ডিলার্স’ বলছে এই প্রকল্প চালানোর পরিকাঠামো তাদের হাতে নেই। একইসঙ্গে এর জন্য বাড়তি খরচ বহন করা তাদের পক্ষে সম্ভব নয়।

রেশন ডিলাররা যাতে বাড়তি খরচ বহন করতে পারেন, সেজন্য তাদের কমিশন বৃদ্ধি করেছে রাজ্য কুইন্টাল প্রতি কমিশন ৭৫ টাকা থেকে বাড়িয়ে দেড়শ টাকা করা হয়েছে। কিন্তু এতেও সন্তুষ্ট নন রেশন ডিলারদের একটা বড় অংশ। সংগঠনের চেয়ারম্যান নীরদময় পালিত বলেন, ‘‘গাড়ির জন্য আমাদের যে টাকা ঋণ নিতে হবে তার ইএমআই দিতে হবে প্রতি মাসে। গাড়ি চালকের বেতন আছে, আছে গাড়ি রক্ষণাবেক্ষণের খরচ আর জ্বালানির দাম কোথায় দাঁড়িয়ে সেটা সবাই জানে। সরকার কমিশন বাড়ালেও আমরা সামাল দিতে পারব না।’’

পশ্চিমবঙ্গে যে ২০,২৭১ টি রেশন দোকান রয়েছে, তার উপর ১০ কোটি ৪৮ লাখ মানুষ নির্ভরশীল। উত্তর দমদম এলাকায় রেশন ডিলার শেখ আমিনুল ইসলাম ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘আমরা দুয়ারে রেশন প্রকল্পের বিরোধিতা করছিনা। কিন্তু সেটা বাস্তবায়িত করা সম্ভব কিনা তা সরকারকে বুঝতে হবে। শহরাঞ্চলে ৫০মিটারের মধ্যে দুইটি দোকান, এক কিলোমিটারের মধ্যে পাঁচটি দোকান। সে ক্ষেত্রে দুয়ারে রেশন করার সার্থকতা কোথায়?’’ আমিনুলের দোকানের এক খদ্দের নীপা দাস বলেন, ‘‘পাড়াতে গাড়ি গেলেও যদি লাইন দিতে হয়, তাহলে দোকানেই দেখে জিনিস নেওয়া বেশি ভাল। ডিজিটাইজেশনের জন্য এই ছাপ মেলানোর জন্য বাড়িতে বাচ্চা রেখে আসতে অসুবিধা হয়। একদম বাড়িতে পৌঁছে দিলে সেটা অবশ্যই স্বাগত।’’

নভেম্বরের শেষে বাঁকুড়া জেলা রেশন ডিলার সংগঠন সাংবাদিক বৈঠক ডেকে জানিয়ে দেয় ডিসেম্বর মাসে তারা রেশন দিতে পারবে না বাড়ি বাড়ি। মুখ্যমন্ত্রীর একগুচ্ছ প্রস্তাব ও সহায়তা ঘোষণার পরেও কী সমস্যা হচ্ছে? নীরদময় পালিতের বক্তব্য, ‘‘গ্রাহকদের আঙ্গুলের ছাপ ছাপ না মিললে রেশন দেওয়া যাবে না। কোন এলাকায় গিয়ে যদি রেশন না দিয়ে আমি ফিরে আসতে চাই, গ্রামবাসী আমাদের ছাড়বে না। সেক্ষেত্রে কর্মীদের নিরাপত্তা কী হবে?” শহরাঞ্চলের চেয়ে গ্রামাঞ্চলে সমস্যা বেশি বলে মনে করেন তিনি। তার বক্তব্য, ‘‘গ্রামাঞ্চলে দুয়ারে রেশনের গাড়ি নিয়ে গিয়ে দেখা যাচ্ছে রেশন নেওয়ার কেউ নেই। অনেকেই কাজ করতে বাড়ির বাইরে থাকছে।’’

সুতরাং রেশন ডিলারদের আপত্তিতে পশ্চিমবঙ্গে কার্যত মুখ থুবড়ে পড়েছে দুয়ারে রেশন প্রকল্প। ফোরামের সম্পাদক বিশ্বম্ভর বসু বলেন, ‘‘আমরা সরকারকে প্রস্তাব দিয়েছিলাম ১৫ দিন দোকান থেকে রেশন দেয়া হবে। বাকি ১৫ দিন অসুস্থ প্রবীণ মানুষদের বাড়িতে আমরা রেশন পৌঁছে দেব। এই প্রস্তাবে সরকার রাজি হয়নি। কিন্তু নিয়মিত বাড়ি গিয়ে রেশন সরবরাহ আমাদের পক্ষে সম্ভব নয়।’’ ভবিষ্যতে কি রাজ্যের সঙ্গে সংঘাতের পথে যাবেন তারা? বিশ্বম্ভর বসু বলেন, ‘‘সোমবার আমাদের একটা কনভেনশন আছে সেখানে আলোচনার ভিত্তিতে মঙ্গল-বুধবার আমরা পদক্ষেপ নেব। আগামী সপ্তাহে রাজ্য সরকারকে আমরা বিকল্প প্রস্তাব দেব। তাদের প্রতিক্রিয়ার উপর নির্ভর করছে প্রকল্পের ভবিষ্যৎ।’’ সূত্র: ডয়চে ভেলে।

Loading