ক্ষুধার্ত রুটি চোর

কবি – মফিজুর রহমান (মফিজ)

বয়স কয়,

সাত কিবা ছয়।

দেখতে ? একেবারে হাঁদা ভোঁদা।

দেখি তার কর  দ্বয় পশ্চাতে রশি দিয়ে বাধা।

বলি বাছা কিরে।

এমনি করে কে বাধল তোরে।

মৃদু কন্ঠে, ছলছল নয়নে, অবাক দৃষ্টিতে, মোর পানে চেয়ে বলে বাবু গো। আমি যে চুরি করেছি আজ l

 আমি বলি কেন বাছা করলি এমন কাজ।

কোথা হতে করলি কি হরণ।

বলে বাবু দুটি রুটি, একটি খেতাম আমি, আরেকটি মোর বোন।

তো। চুরি করতে গেলি কেন, দুটি রুটি কিনলেই তো হয়।

কিনতেই তো চাই গো বাবু পয়সা কোথায় পাই।

কেন। মা বাবার কাছে নিবি।

বাবা। সে তো থেকেও নাই গো বাবু, আর মা আছে তো ছবি।

মা। এত অকালে।

কিভাবে পরকালে ?

সেদিনের সেই রাতের কথা, মায়ের বুকে নিদারুণ ব্যথা, সে কি কাতরানী গো বাবু যন্ত্রণায় ছটফট করে মরে।

দিতে পারিনিকো একটুও দাওয়া টাকা ছিল নাকো ঘরে।

কত ছোটাছুটি করি কতজনে ধরি পাই।

সেদিন সকলে একি কথা কয় টাকা নাই দাওয়া নাই।

তবে জানেন বাবু, মা যেদিন মারা গেল, কটা টাকা একটু দাওয়ার কারণে।

মায়ের শেষকৃত্য টাকা দিয়ে গেল সেসবি মানুষ জনে।

ওই কটি টাকা যদি কদিন আগে দিয়ে, একটু দিত মোদের সাথ।

হয়তো, আজ রইতাম মায়ের আঁচল তলে, হতাম না ভাই বোনে অনাথ ।

আর বাবা, উনি তো আছে, ওনার কি খবর।

মা মরার সাতদিনে আবার বিয়ে সইলো না সবর।

তোর বাবা, তোর নতুন মা, তোদের রাখল না পাশে ।

না গো বাবু, বাবা নতুন মায়ের হাত ধরে, এখন পরবাসে।

খুব বেদনাদায়ক তোদের জীবন কথা, চোখে জল আসার  মত।

কিছু কাজি বা করবি কেমনে, তোরা যে বড়ই ছোট

না বাবু, বলেছিলাম চা দোকানে, কাপ ধবো যত জল লাগে সব জল দেবো তুলে।

বলে কাজ নাই ভাগ, বলে ঠেলিয়ে দিল ফেলে।

আমি বলি বাছা, তোরা তো অনাথ ভাই বোনে।

কোথায় যাবি। কি খাবি। যাবি মোর সনে।

কথা নিয়া যাবা বাবু মোরে?

কেন। মোর ঘরে।

শুনে কথা মোর।

হয়েছে বিভোর।

চেয়ে রই মোর পানে ।

অবাক নয়নে।

যাব বাবু। যত কাজ আছে, সব কাজ করিব দুজনে।

ঘর মোছা, বাসন মাজা, সব কাজ করিব গুনে গুনে।

শুধু দুই বেলা দুই মুঠো খেয়ে যেন, বাঁচি ভাই বোনে।

নারে বাছা, কোন কাজ করা লাগবে না।

তোরা দুইজনে, মিলে ভাই বনে, করবি শুধু পড়াশোনা।

মোর কথা শুনে, ছলছল নয়নে, স্তম্ভিত হয়ে চেয়ে রয় মোর পানে।

কত সুখ, ভাসে বুক নয়নে বারি বর্ষণে।

নিয়ে ভাই বোনে, ফিরি ঘর পানে, ভাবি মনে মনে।

হায়রে দেশ আমার, একই বিচার তোমার, কোটি কোটি টাকা কোথা হতে কোথায় যায়, সেকি কেউ দেখেনা নয়নে।

নানা, এই কথা বলে, আমি করছি না রুটি চুরির সমর্থন।

কিন্তু ভেবে দেখো বন্ধু কেউ রুটি চুরি করে ক্ষুধার জ্বালায় কেউ সুখ ভোগে কোটি করে হরণ।

ক্ষুধার্ত শিশু রুটি তস্কর, রশি দিয়ে বাধা কর  দ্বয়  তার ।

কোটি হরণের সাধু বাটপার, কলমে চুরির হয় না বিচার।

……………………………………………………………………………………………………

 

 

 

Loading