বাস্তু শাস্ত্রে স্বস্তিকের গুরুত্ব

বাস্তু আচার্য্য দেবযানী

9051039387

ddebjani63@gmail.com

বাস্তশাস্ত্রের বিখ্যাত বই মায়া মত্তম বলে – যে একটি ভবন নির্মাণের সময় তামা, রৌপ্য বা সোনার তৈরী স্বস্তিক পৃথিবীর নীচে স্থাপন করা উচিত। বৈদিক ঋষিরা আধ্যাত্মিক অভিজ্ঞতার ভিত্তিতে কিছু বিশেষ প্রতীক বা চিহ্ন রচনা করেছিলেন। স্বস্তিক সেই প্রতীকগুলির মধ্যে একটি।

স্বস্তিক কি?

স্বস্তিক একটি শুভ প্রতীক যা সৌভাগ্য, সুস্থতা এবং বিশুদ্ধতাকে নির্দেশ করে। ১৯৭৯ সালে একজন সংস্কৃত পন্ডিত জনাব পি.আর. সরকার বলেছিলেন স্বস্তিক শব্দের অর্থ হল ‘স্বায়ী বিজয়’। স্বস্তিক মঙ্গলকে নিের্দশ করে এবং জীবনে সুখ শান্তি বজায় রাখে। বাস্তুশাস্ত্র অনুসারে স্বস্তিকের চারটি দিক (পূর্ব, পশ্চিম, উত্তর ও দক্ষিণ) রয়েছে। এটি প্রতিটি হিন্দুদের শুভ কাজে পূজিত হয়।

স্বস্তিকের চারটি শাখা দেবত্বের চারগুণ নীতির প্রতিনিধিত্ব করে

(১) চর্তুমুখী ভগবান ব্রহ্মা যিনি চারদিকে পবিত্র জ্ঞান ছড়িয়ে দেন (২) চারটি শাখা চারটি বেদের প্রতীক – ঋগ্বেদ, সামবেদ, যর্জুবেদ ও অর্থববেদ। (৩) জীবনের চারটি লক্ষ্য – ধর্ম, অর্থ, কাম এবং মোক্ষ (৪) জীবনের চারটি স্তর – ব্রহ্মচর্য, গার্হস্থ, বানপ্রস্থ এবং সন্ন্যাস।(৫) চারটি বর্ণ – ব্রাহ্মণ, ক্ষত্রিয়, বৈশ্য এবং শুদ্র (৬) স্বস্তিকের চারটি বাহু – পূর্ব, পশ্চিম, উত্তর ও দক্ষিণ এই চারটি দিক্‌কে প্রতিনিধিত্ব করে। (৭) স্বস্তিকের কেন্দ্রবিন্দুটি ভগবান বিষ্ণুর নাভিকে প্রতিনিধিত্ব করে যেখান থেকে ভগবান ব্রহ্মার উৎপত্তি বিশ্বাস করা হয়।

বাস্তুশাস্ত্রে স্বস্তিকের গুরুত্ব –

স্বস্তিক চিহ্নটি সাধারণত হিন্দু ধর্মের কোন শুভ অনুষ্ঠান শুরুর পূর্বে  আঁকা হয়, যা বাস্তুশাস্ত্র অনুসারে প্রচূর শুভ প্রভাব ফেলে। এটি নেতিবাচক শক্তিকে দূরে সরিয়ে গৃহে শান্তির বাতাবরণ তৈরী করে। এই প্রতিকের অর্থ এবং এর ব্যবহার শুধুমাত্র হিন্দু ধর্মেই পাওয়া যায়। স্বস্তিক চিহ্নটি সাধারণত ডান হাতের অনামিকা দিয়ে সিঁদুর বা কুমকুম দিয়ে মেঝে বা কলসে আঁকা হয়। এই প্রতীকটি পৃথিবীতে জীবনকে নির্দেশ করে, যা ভারতীয় সংস্কৃতি ও সভ্যতার অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ চিহ্ন।

স্বস্তিক কেন গুরুত্বপূর্ণ –

(১) বাড়ির প্রবেশদ্বারের দুই পাশে দুটি স্বস্তিক বানানো বাড়ির জন্য খুবই শুভ মানা হয়। এটি রোগ, শোক কমায় এবং সুখ ও সমৃদ্ধি বাড়ায়।

(২) ঘরকে মন্দ দৃষ্টি থেকে বাঁচাতে স্বস্তিক ব্যবহার করা হয়।

(৩) এই চিহ্ন সকল ব্যক্তির জন্য ইতিবাচক শক্তি ও সৌভাগ্য নিয়ে আসে। তাদের সমস্ত উদ্যোগে বাধা দূর করে।

(৪) অফিস, পড়াশোনার জায়াগাতে স্বস্তিক রাখলে কাজ, পড়াশোনায় শুভ ফল পাওয়া যায়।

(৫) গৃহের কোন সদস্য যদি মানসিকভাবে অবসাদগ্রস্থ থাকে তাহলে  পূজার ঘরে একটি স্বস্তিক চিহ্ন বানিয়ে রেখে তার সামনে দিনে একবার ১০ মিনিট ধ্যান করলে শুভ ফল পাওয়া যায়।

(৬)যদি কোনো ব্যক্তি চাকরি সংক্রান্ত অসুবিধাতে ভোগেন, এর থেকে মুক্তি পেতে একটি স্বস্তিকের লকেট সোনা বা রূপা দিয়ে তৈরী করে চেন দিয়ে গলায় পরলে খুবই শুভ ফল পাওয়া যায়।

(৭) আলমারী বা টাকা রাখার জায়গায় যেকোনো শুভ সময়ে স্বস্তিক চিহ্ন বানালে গৃহে কখনোও টাকা পয়সার অভাব হয় না।সর্বদা মা লক্ষ্মীর কৃপা দৃষ্টি গৃহে থাকে।

স্বস্তিক শুধুমাত্র ভরতেই নয় বিশ্বের অন্যান্য হিন্দু দেশে ও বিভিন্ন রূপে মানা হয়। জার্মানী, ফ্রান্স, রোম, তিব্বত, চীন, জাপান ইত্যাদি দেশে স্বস্তিকের প্রচলন বিভিন্ন রূপে দেখা যায়।

জৈনরা স্বস্তিক ব্যবহার করে তাদের অ্যাকাউন্টের বই, দরজা খোলার পৃষ্ঠাগুলি চিহ্নিত করে।

বৌদ্ধ ঐতিহ্যে স্বস্তিক বুদ্ধের পায়ের বা পায়ের ছাপের প্রতীক। বৌদ্ধ ধর্মের বিস্তারের সাথে সাথে স্বস্তিক চীন ও জাপানের মূর্তি বিদ্যায় চলে যায়, যেখানে এটি প্রাচূর্য, সমৃদ্ধি এবং দীর্ঘ জীবন বোঝাতে ব্যবহৃত হয়।

হিন্দু স্বস্তিক প্রতীকের একটি উল্লেখযোগ্য বৈশিষ্ট রয়েছে। এই চিহ্নটি যেকোনো কোন থেকেই দেখা হোক এটিকে একই বলে মনে হয়। এই কারণে এটি সূর্যের প্রতীক হিসাবে বিবেচিত হয়। হিন্দুধর্মের বিশ্বাস অনুসারে সূর্য যেভাবে প্রতিদিন উদয় হয় এবং সন্ধ্যায় অস্ত যায় ঠিক তেমন একই ভাবে স্বস্তিক চিহ্ন কখনই তার রূপ হারায় না। কারণ এটি অসীমতার প্রতীক, স্বস্তিক একটি প্রতীক যা ক্রমাগত অগ্রগতিকেই নির্দেশ করে।

 

Loading