বিচিত্র প্রেম

শ্রী সুবোধ চন্দ্র সরকার (আইন জীবি)

বেহালা,কলকাতা

 

ঠিকানা – বেহালা,কলকাতা-৭০০০৫৩

জন্ম – ১৩৬২, ৪ঠা অগ্রহায়ণ (ইং_ ২০শে নভেম্বর, ১৯৫৫) মাতুলালয় মুর্শিদাবাদ জেলার বড়ঞা গ্রামে।

পৈতৃক আবাস – বীরভূম জেলার  অন্তর্গত তরুলিয়া গ্রামে৷

পিতা– নারায়ণ চন্দ্র সরকার,   মাতা – বাসন্তী সরকার,

শিক্ষা – বীরভূম জেলার তরুলিয়া গ্রামের প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষা শুরু। কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুচন্দ্র কলেজ (নৈশ) থেকে  সাম্মানিক সহ স্নাতক ডিগ্রি অর্জন। যোগেশচন্দ্র চৌধুরী কলেজ থেকে আইনে স্নাতক, এবং বিদ্যাসাগর বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এম.কম. ডিগ্রি লাভ৷

সাহিত্য জীবন – কলকাতায় লেখা প্রকাশ রবীন্দ্র ভারতী সোসাইটিতে, কড়ি ও কোমল সাহিত্য পত্রিকায়।  সাহিত্য জগৎ প্রকাশনায়   দুইটি গ্রন্থ প্রণেতা “সাহিত্য মঞ্জুরী”  এবং ” ‘কাব্য মঞ্জুরী” বহু সাহিত্য পত্রিকার সাথে যুক্ত এবং লেখা প্রকাশিত৷

………………………………………………………………………………………………………….

অভিষেক দাসগুপ্ত অর্থাৎ অভিষেক বাবু একজন সঙ্গীত শিল্পী, রবীন্দ্র সঙ্গীত থেকে আধুনিক সবকরমের গান করেন, গানে বেশ নাম হয়েছে, রেডিও টিভিতে প্রোগ্রাম করেছেন৷ ইদানীং ক্লাব ফাংশানে গান গেয়ে এত প্রশংসিত যে শনিবার রবিবারে প্রোগ্রোম ঠাসা৷ অভিষেক বাবুর বয়স খুব বেশী নয় এই ৩৫ এর মধ্যে৷ এখনও বিবাহ করেননি৷ কিন্তু তার পাড়ার একটি মেয়ের সাথে দীর্ঘ পাঁচ বছরের ভালোবাসা৷ মেয়েটির নাম রেনুকা  মৈত্র, মধ্যবিত্ত ঘরে জন্ম, বাড়ীর বড় মেয়ে দায়িত্ব অনেক, নিজে টিউশন করে বৃদ্ধ বাবা মা এবং ছোট দুই ভাইবোনের লেখাপড়া এবং সংসার প্রতিপালনের দায়িত্ব নিতে বাধ্য হয়েছে৷

দীর্ঘদিন ওদের প্রেম ভালোবাসা হলেও বিয়ে করতে সাহস পাচ্ছেনা রেনুকা, সে চিন্তিত বিয়ে হয়ে গেলে তার সংসার ভেসে যাবে কে চালাবে তার সংসার৷ অভিষেক তাকে বিবাহের জন্য তাড়া  দেয়৷ বলে চিন্তা করোনা, বিয়ের পরেও তোমার সংসার তোমার আয় দিয়েই প্রতিপালন করবে৷ আমার কোন আপত্তি থাকবে না৷ উত্তরে রেনুকা বলেছিল দেখ, প্রথমে সবাই একথা বলে যখন এ মোহ থাকবে না তখন তুমিও একে সমর্থন করতে পারবে না৷ হবেনা, যদি হয় তাহলে আমার সংসারটা আকুল পাথারে ভেসে যাবে৷ আর কিছুদিন অপেক্ষা করো নিশ্চয়ই আমরা ঘর বাঁধব৷ ওরা নিয়মিত দেখা সাক্ষাৎ করে গল্প গুজন করে, উভয়ে মানিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করে৷ সবই ঠিকঠাক চলছিল কিন্তু এর ছন্দপতন ঘটল৷

কলকাতায় একটা সঙ্গীত শিল্পী সম্মেলনে যোগদানের জন্য অভিষেক আমন্ত্রীত হইল৷ বাংলাদেশ এবং ভারতের পশ্চিমবঙ্গের শিল্পীরা সেখানে সমবেত হয়েছিল৷ এই অনুষ্ঠানে একটা করে গান পরিবেশন করবে এবং প্রত্যেকেই সাধারন সম্মানে ভূষিত হবে কিন্তু যাঁরা প্রথম, দ্বিতীয় এবং তৃতীয় স্থান অধিকার করতে তাদেরকে সঙ্গীত রত্ন সম্মানে ভূষিত করা হবে৷

অভিষেক সেখানে একটি মেয়েকে দেখতে পেল, তার নাম চম্পা সেমগুপ্ত৷ মেয়েটি আধুনিকা অপরূপ সাজে সজ্জিত হয়েছে সুন্দর করে চুলের বেণী বেঁধেছে মাথায় সাদা ফুলের মালা জড়ানো, ঠোঁটে লাল টকটকে লিপস্টিক, গৌর বর্ণা এক কথায় অতীব সুন্দরী বলা চলে৷

হঠাৎ অভিষেক চম্পার দিকে তাকিয়ে মুগ্ধ হয়ে গেল৷ চম্পাও অভিষেকের দিকে একদৃষ্টে তাকিয়ে থাকল৷ উভয়ে চিন্তা করতে থাকল যে তারা একে অপরের হয়তো বহুদিনের চেনা৷ একে অপরের চোখ থেকে চোখ নামাতে পারছেনা৷

            “দৃষ্টি দিয়ে আর যেন দৃষ্টি ফেরাতে মন না চাই,

            তৃষ্ণা মেটেনা দুচোখে মনের সাথে মিলন ঘটাই৷”

এক দর্শনেই ওরা যেন একে অপরকে ভালবেসে  ফেলল৷ অর্থাৎ প্রেমে পড়ে গেল৷ প্রেম কথাটি দুটি শব্দ দ্বারা গঠিত৷ কিন্তু ইহার বিশালতা, ইহার গভীরতা স্বয়ং বিধাতা পুরুষও বুঝতে পারেনা৷ মানেনা কোন বয়স, জাতি, শিক্ষিত অশিক্ষিত জ্ঞানী অজ্ঞানী, কোন বাধাই মানে না৷ এদের ক্ষেত্রে তার ব্যতিক্রম হলোনা৷

চম্পা, অভিষেকের দিকে এগিয়ে এলো, অভিষেকের একেবারে সামনে হেসে ফেলল, সাহসে ভর করে জিজ্ঞাসা করল, আপনি কোথা থেকে এসেছেন, অভিষেক বলল কলকাতা ভবানীপুর থেকে, আপনি অপনি কোথা থেকে চম্পা বলল আমিও কলকাতা থেকে ঠাকুরপুকুর থেকে৷ এরপর ওদের সম্বন্ধে একে অপরের কিছু কথা হল, এবং ওরা এক সঙ্গে বসা, দাঁড়ানো করতে লাগল৷ গানশোনে আর একে অপরের মন্তব্য করত লাগল৷ একে অপরের ফোন নং হোয়াটস্অ্যাপ নম্বর দেয়া নেয়া হল৷ অনুষ্ঠানে এক অেপরের ফটো তুলল এবং ভিডিও করল৷ অনুষ্ঠান শেষ হলে সেখান থেকে মোমেন্টো সার্টিফিকেট নিয়ে উভয়ে উভয়কে বিদায় জানিয়ে ঘরে ফিরলো৷

            এখন মাঝে মাঝে তাদের গানের বিষয়ে আলাপ আলোচনা চলে৷ ফোনের মাধ্যমে, একসঙ্গে সম্মেলনে যাবার কথা বলে, এইভাবে কথা বলতে বলতে আর একটা অনুষ্ঠানের খবর পেল এবং অনুষ্ঠানের দিন আরও যেসব শিল্পীরা গিয়েছিল তাদের সঙ্গে বন্ধুত্ব হল প্রায় তিনবার জন্য মধ্যে বন্ধুত্বের ঘনিষ্ঠ হল৷

এখন যেখানে যেখানে অনুষ্ঠান হয় তারা একসঙ্গে যোগদান করে এবং একসঙ্গে যাতায়াত করে প্রতিদিন তারা গুডনাইট গুডমর্ণিং জানাতে থাকে৷

এদিকে রেনুকার সঙ্গে যোগাযোগ করত আসবার জন্য রেণুকা অভিষেককে ফোন করে৷ অভিষেক তার ভালোবাসায় অমর্যাদা করে না তার প্রশ্নের যথাযথ উত্তর দেয়৷ কিন্তু কোথাও যেন একটা আস্তে আস্তে দুরত্ব তৈরী হচ্ছে৷ কথায় আছে চোখের আড়াল হলে মনের আড়াল হয়৷ এদের ক্ষেত্রেও তা দেখা যাচ্ছে৷ এখন প্রশ্ন অভিষেক কি রেণুকাকে একদম ভুলে যাবে? না তার ভালোবাসা রেণুকা এবং চম্পা দুজনের মধ্যেই ভাগাভাগি হয়ে যাবে৷ অভিষেক একটা উভয় সংকটে পড়ে গিয়েছে, একবার রেণুকাকে সময় দিচ্ছে একবার চম্পাকে সময় দিচ্ছে৷ এই ত্রিমুখী ভালোবাসার পরিণাম কি হবে ভবিষ্যৎ সময় তা বলে দেবে৷ এই রকম ঘটনা তাদের জীবনে ঘটে চলেছে, তাদের কোন দোষ আছে কি নাই তারা বুঝে উঠতে পারে না৷ কখন কার জীবনে প্রেম আসে বলা যায় না৷ সবই নিয়তির ইচ্ছা নিয়তি কেন বাধ্যমে ৷

………………………………………………………………………………………………………………

 

Loading