ভ্রমণ কাহিনী

‘হোম টাউনে আমরা’

 

কলমে: স্বপ্না মজুমদার

পুণে

বিশেষ প্রয়োজনে যেতে হবে হোম টাউন বেঙ্গলে। হঠাৎ ঠিক হলো ট্রেন,ফ্লাইট নাকি বাই কার।মুহূর্তের ডিসিসন।

আজই যাব। ঠিক হলো,বাই কার।

 বাইশো কি মি, দূরত্ব। বাই কার,,, বিশেষত ফ্যামিলী নিয়ে আসা যাওয়া করতে গেলে একটু তো চোখ কপালে ওঠেই। অনেকেই বলেছিল ,,এটা ঠিক নয়।

অবশ্য সেসব কথা অনেক আগের। বছর তিনেকের মধ্যে এই নিয়ে তিনবার হয়ে গেল। কৃষ্ণেন্দু এখন এক্সপার্ট মোটামুটি বলতেই পারি। তবে প্রথমবার বেশ ভয় পেয়েছিলাম। ওরাও  না বলে সারপ্রাইজ দিতে চেয়েছিল।

ওরা মানে, আমার মেয়ে জামাই।

এরপরে ওই যা হয়। চোখ সওয়া হয়ে গেছে।মন মেনে নিয়েছে। তারপরে তো কতোই ঘুরলাম।লং ড্রাইভে ঘুরে বেড়াতে আমাদের বরাবরই ভালো লাগে।

অভিজ্ঞতার ঝুলি ভরে ওঠে।চলার পথে বেশ কয়েকটি স্টেট পার হওয়া। সেখানে সামান্য কিছুটা ওই চলার পথেই দেখা। বেশ ভালো লাগে,সে সব দেখতে। মাঝে মাঝে দাঁড়িয়ে রেস্ট নেওয়া, ব্রেকফাস্ট,ডিনার লাঞ্চ করা, পেট্রোল পাম্পে গাড়ীর খাবার নেওয়া,মানে ডিজেল ‌ইত্যাদি,এসব তো আছেই।গান শুনতে শুনতে গল্প হই হই করতে করতে চলা।

এবারে আমিও সাথী হলাম। চললাম চার জনে বেঙ্গলে।

পুনে,মৌসির,চিখালী থেকে যাত্রা শুরু। ২৯/০৩/২০২৪ বিকেল পৌনে চারটায়। ছটা নাগাদ একটি রেস্ট্রোরেন্টে দাঁড়িয়ে চা ও মিসল পাও খাওয়া হলো। তারপরে আবার লাল স্করপিওর চলা শুরু।

রাতে দশটা নাগাদ আবার দাঁড়ালাম হোটেলে। রাতের ডিনার করে রাত এগারোটায় ঔরঙ্গাবাদে হোটেলে পৌঁছোলাম রাতের বিশ্রামে।হোটেলটা বেশ সুন্দর। পরের দিন রেডি হয়ে সকাল‌ সাড়ে সাতটায়  চা খেয়ে সকলে বেরোলাম।

আবার যাত্রা শুরু।

বেশ কিছু পথ আসার পরে পেলাম সম্রুদ্ধি হাই ওয়ে।

খুব সুন্দর সেই পথ। গাড়ী ১০০কিমি বেগে ছুটতে লাগলো।  ফাঁকা রাস্তা, হওয়ায় অনেকটা পথ অল্প সময়ে কভার করা গেলো। যদিও টোল ট্যাক্স একটু বেশি। তবে রাস্তা বেশ ভালো।ছুটে চলায় কোনো ক্লান্তি নেই। ট্রাফিক জ্যাম নেই।

পৌঁছে গেলাম একেবারে উড়িষ্যা,সম্বলপুরে।রাত তখন সাড়ে এগারোটা। পথেই ডিনার সেরে নিয়েছি সবাই। তখন শুধু হোটেলে গিয়ে বিছিনায় পৌঁছলেই সবাই খুশি হই। ভীষণ ক্লান্ত সবাই। বিশেষত কৃষ্ণেন্দু।আগেই হোটেল বুক করা ছিল।

পরের দিন চা খেয়ে সকাল সকালে বেরোনো।মিষ্টু  চাইছিল সুইমিং পুলে সাঁতার কাটতে। নতুন শিখলে মনটা এমন হয়। আমি তো শুধু দেখি। সাঁতার  জানি না।মিষ্টু ছোটো। আমার নাতনী।।যাইহোক এখন সে সময় নেই।ছুটতে হবে।এখনো অনেক পথ বাকি।রাস্তায় বারে বারে দাঁড়ানো ব্রেকফাস্ট,লাঞ্চ,,পেট্রোল পাম্পে যাওয়া ,,এ তো আছেই।

এবারে উড়িষ্যা পেরিয়ে বেঙ্গলে ঢুকলাম। পথে পেয়েছি পাহাড়ি পথ ,টানেল,নদ নদী দেখতে দেখতে চলার অভিজ্ঞতা। দেখেছি বহু ঘন জঙ্গল বহু মন্দির, মসজিদ, গুরুদুয়ারা।

ছোটো নাগপুরের পাহাড়ে গুগল দা বেশ রাতে উঠিয়ে দিল। ঘন অন্ধকার। পাহাড়ি অচেনা পথে ট্রাকের পিছু পিছু চললাম বেশ কিছু পথ। আবার কিছু অভিজ্ঞতা সঞ্চয়।অবশ্য,পুনে শহরে তো পাহাড় ঘেরা। গুগল দা বেশ পথ চিনিয়ে সাথী বন্ধু হয়ে চলে।

পৌঁছোলাম আসানসোল হয়ে দূর্গাপুর।রাত তখন একটা।

উড়িষ্যায় একটা আ্যকসিডেন্টের জন্য বেশ বড় ট্রাফিক জ্যামে আটকে অনেকটা সময় দাঁড়িয়ে কাটলো।

এমন তো হতেই পারে। স্মুথ পথ চলা তো সব সময়‌ হয় না। যাইহোক, পৌঁছে গেলাম আমার প্রানের বাংলায়। আমার জন্ম শহর দূর্গাপুরে।

বেশ কয়েক দিন আত্মীয় স্বজনের মধ্যে কাটলো। চেনা মুখ, চেনা মানুষগুলো বড়োই আপনার। আন্তরিক ভালোবাসা ও আমন্ত্রনে কাটালাম হই হই করে। ছিল কিছু পার্সোনাল কাজ কৃষ্ণেন্দু,মাম্পীর। যে জন্য আসা।

গিয়েছিলাম পানাগড়ে ,বাবা ধাম,ঘন্টা মন্দিরে পূজো দিতে। সেও এক ব্যাপার।যাওয়ার পথে, জি টি রোডে বিশাল দুঃখজনক এক আ্যক্সিডেন্টে হৃদয় বিদারক দৃশ্যের মুখোমুখি হলাম।

গিয়েছিলাম আমার জ্যাঠতুতো দাদার শ্রাদ্ধে।উপস্থিত থাকার ব্যাপার,বৌদির একান্ত ইচ্ছে। ছিল আমার মনের বিশেষ তাগিদ।আমার ছোটো ভাইয়ের সাথে দেখা হওয়া।

এরই মাঝে গিয়েছিলাম মায়াপুর।জা ভাশুর,ছোটো ননদকে নিয়ে। যদিও পথে ভাশুর অসুস্থতা বোধ করায় বর্ধমানে আত্মীয়ের বাড়িতে নেমে যায়। ফেরার পথে আবার আমাদের সাথে ফেরে।

একটা দিন মায়াপুরে থাকলে ভালো হতো। কিন্তু সময় কম,,,সম্ভব হলো না। নতুন মন্দির তৈরি আজো হচ্ছে। খুব সুন্দর সে মন্দির।দূর থেকেই দেখলাম।

পুরোনো মন্দিরে রাধা গোবিন্দের বিগ্ৰহ দর্শন করে প্রসাদ পেলাম। দুপুরে ভোগ খেলাম। আসে পাশে তেমন করে আর ঘোরা হলো না। প্রচন্ড গরমে দুপুরটা বিশ্রামেই কাটলো।আর গল্প গুজবে, আইসক্রিম খেয়ে।পড়ন্ত বিকেলে আবার ফেরা। পথে ব্রেকফাস্ট,রাতের ডিনার সেরে  রাত একটা নাগাদ ঘরে ফিরলাম।

দূর্গাপুর চেনা শহর , আমার দীর্ঘ সময় অতিবাহিত করার শহর আমার ফেলে আসা অতীতের সাথে হলাম মুখোমুখি।

সে এক মনের টান অনুভবে একাত্ম হয়ে ওঠা। সেই চেনা ছোটোবেলার স্কুল,খেলার মাঠ,বড় হয়ে ওঠার দিনগুলো ছুঁয়ে এলাম। দেখলাম আমার দুটি বিক্রি হয়ে অন্যের ছোঁয়ায় দাঁড়িয়ে থাকা বাড়ি। যে জানিয়ে দিল বিদায়ী অস্তিত্বের কথা।সবটুকু নিয়েই তো আমার বাংলায় আসা। কিছুটা সুখ অনুভব। কেটে গেল বেশ কয়েক দিন।

গিয়েছিলাম গোপাল মাঠে।শিব শক্তিধাম মন্দিরে। মনটা শান্ত হয়ে গেল। খুব সুন্দর এই অধুনা মন্দির। এক কথায় অপূর্ব।

এবার ফেরার পালা। ০৬/০৪/২০২৪ এ সকাল বেলায়

আবার যাত্রা শুরু । ফিরতে হবে একই পথ ধরে পুনে শহরে। আমাদের বর্তমান বাসস্থানে।পৌছোলাম নাগপুর নাসিক সম্রুদ্ধি রোড হয়ে ০৮/০৪/২০২৪,,, বিকাল সাতটায় ঘরে। এখানে তখনো শেষ বেলার সূর্যের আলো ছিটিয়ে আছে শহরের বুকে। রাস্তায় পেয়েছিলাম চলার পথে  কোনো এক গুরুদুয়ারা মন্দিরের প্রসাদ ছোলে ও এক গ্লাস ঠাণ্ডা সরবত। ওরা শহরের মধ্য দিয়ে যাওয়ার সময় গাড়ী দাঁড় করিয়ে প্রসাদ বিতরণ করছিল। আমরাও পেলাম।

শুধু অভিজ্ঞতায়  বুঝলাম না। উড়িষ্যায় সম্বল পুরে পেট্রোল পাম্পে ঢোকার সময় উল্টো দিক দিয়ে আসা দুটি ছেলে স্কুটি নিয়ে আমাদের গাড়ী দেখে বেশ কিছু দূরেই কেন কাঁপতে কাঁপতে উল্টে পড়ে গেল।।

সমাপ্ত

………………………………………………………………………………………………….

  •  

  • __________________________________________________________

  •  

  •  

  •  

  • __________________________________________________________

  • _______

  •  

  •  

  •  

  •  

  •  

  •  

  •  

  •   

Loading