বেঁধে বেঁধে থাকি বাহুবন্ধনে
✍️ – সোনালী মুখার্জী
আড়ুপাড়া,সাঁতরাগাছি,হাওড়া
……………………..
বহু বছর পরও সংসারের মানে বুঝে উঠতে পারিনা। সংসার করতে করতে একসময় মানুষ ধরে নেয়, একই টেবিলে খাওয়া, একই ঘরে থাকা আর ছেলেমেয়ে মানুষ করার নাম সংসার,আর স্বামী স্ত্রীর সম্পর্কে র এটাই আসল অর্থ।
ব্যাপারটা কি আসলে তাই? তাহলে, কিছু সংসার কখনো কখনো টেকে না কেন? তারাও তো একই ঘরে থাকে,একই টেবিলে খাবার খায়, একজন অন্যজনকে সঙ্গমে সহযোগিতা করে। তবুও, সংসার টেকে না।
তুমি একটা মানুষের সাথে আছো, পাশে আছো, চোখের সামনে আছো। তবুও মাঝখানে একটা দূরত্ব থাকে, এই দূরত্বটা অন্যরকম। বলা যায় না, বুঝানো যায় না, সহ্যও করা যায় না।খুব কাছাকাছি,পাশাপাশি থেকেও বড্ড দূরের মনে হয়।চোখের আড়ালে বহুদূরের ব্যক্তিটি কাছাকাছি না থেকেও মনে হয় কত আপনার।
সবই চাই, যা যা সবাই চায়। সেটাও চাই, যেটা অনেকেই করে না। সংসার মানে আসলে অভ্যাস, এই ধারণা থেকে আমরা কেন জানি বের হতে পারি না। অভ্যাস অবশ্যই, তবুও সবই কি অভ্যাস?
নতুন কিছুই কি থাকে না? আমরা একই ছাদের নিচে থাকি, অথচ কখনো একসাথে আকাশ দেখতে চাই না।আকাশের তারাদের বোকার মতো গোনার সাহস দেখাই না।ঐ যে বিমান উড়ে গেলো,চলো আমরাও একদিন উড়ে যাবো দূর-দূরান্তে কোথাও।হোক না প্রলাপ তবুও আলাপ হতে দোষ কোথায়?
না পাওয়া স্বপ্প গুলো থাক না স্বপ্নে।স্বপ্ন দেখতে দোষ কোথায়?যে স্বপ্ন আমরা জেগে দেখি কখনো তাও তো পূরণ হয়।
নদীর বহে যাওয়ার হিসাব রাখিনা।অকারণে আলিঙ্গন করিনা।অকারণে চুম্বন আঁকার ইচ্ছা প্রকাশ করিনা।চলো একটু হেঁটে আসি বলি না।সবাই যখন ঘুমায় তখন নিঝুম পথে দুজনে হাঁটার মজা নিতে চাইনা।আজ রান্না থাক,চলো অনেক দূরে কোথাও গিয়ে অতি সাধারণ খাবার খাই।এটা কী জীবনের চাহিদার সাথে একেবারেই মেশে না?
আমরা বুঝি না,সমস্ত সময় তার সাথে কাটানোর পরও তাকে আলাদা করে সময় দেওয়ার প্রয়োজন। আমরা শরীরের দিক থেকে কাছে আসি অথচ, আমাদের মনের দূরত্ব বেড়ে চলে। রান্না করে দেবার জন্য তো লোক রাখা যায়,শরীরের চাহিদা পূরণের জন্য উপায় আছে তবে পরিবার তৈরির প্রয়োজন কেন?সুন্দর সংসার, প্রিয়জন,সন্তান এসব তো আমরা মন থেকে চাই।তাহলে সবটাই অভ্যাসে এসে যায় কেন?
সংসার কী?রান্না-খাওয়া,রোজগার,সন্তান মানুষ করা এর মধ্যে সীমাবদ্ধ না, এর বাইরেও অনেক কিছু থাকে। আমি ওএকা, তুমি ওএকা, একসাথে দুজনে মিলেমিশে গেলেও একা।
অথচ, দিনশেষে আমাদের একটা নিজের মতো থাকার ঘরের প্রয়োজন হয়। একজন কাছের মানুষের প্রয়োজন হয়, একটা ব্যক্তিগত নির্ভরশীলতার জায়গার প্রয়োজন হয়। বোঝাবুঝির প্রয়োজন হয়, কারো কন্ঠস্বরে আমার জন্য একটু গভীর ভালোবাসার প্রয়োজন হয়। একটা আলাদা,খুব কাছের একেবার আত্মার মতো মিলেমিশে যাবার প্রাণের ছোঁয়ার প্রয়োজন হয়।
এই ছোঁয়া কামনার ছোঁয়া নয়, এটা একটা ভালোবাসার ছোঁয়া। কামনা ছাড়া ভালোবাসা পূর্নতা পায়না অনেকেই বলে। তবে কাম ও যে সবসময় ভালোবাসার জন্ম দিতে পারে না, এটাও ঠিক। সংসারকে অভ্যাস বলে চালিয়ে দেওয়া মানুষেরা আসলে ভালোবাসার দায়বদ্ধতাকে এড়িয়ে যেতে চায়।
যে দাম্পত্যে প্রেম থাকে না, সেখানে অভিনয় নিত্য। এরকম অনেক দম্পতিই আছে, যারা শুধু অভিনয় করেই একটা জীবন একটা অপছন্দের মানুষের সাথে একই ছাদের নিচে কাটিয়ে দেয়। সারাদিন কর্ম ব্যস্ততায় থেকে,ঘরে ফিরে স্ত্রীকে সময় দিতে অনিচ্ছা প্রকাশ করা স্বামীও মিথ্যে হাসি টেনে অভ্যাসমতো সময় কাটায়।রাত কেটে ভোর হয়।
আমরা সব সময় ব্যস্ত। চাইলেই একটু সময় বের করতে পারি আমাদের প্রিয় মানুষটার জন্য। তার কী পছন্দ জেনে নিতেই পারি সোহাগের ফাঁকে।পছন্দের খাবার,ফুল,গান,কবিতা,নাটক না কী কাছে পিঠে কোথাও একটু ঘুরে আসা।কি জানি, আমরা হয়তো চাই ই না। অপরের জন্মদিন মনে থাকে অথচ, নিজের স্ত্রীর বা স্বামীর জন্মদিনটা বেমালুম ভুলে যাই। এখান থেকেই সংসারে তার প্রয়োজনটা গুরুত্ব পায় ।তার পছন্দ অপছন্দ যেন তেমন কিছুই নয় বলেই প্রমাণ হ য়।
সে তো কোনো যন্ত্র নয়।মন তো কিছু আলাদা রকম আশা করে।বাঁধাধরা নিয়ম থেকে একটু অন্যরকম।
তার পছন্দের ফুলটা ফুলদানিতে রেখে একটা আলাদা অনুভব সৃষ্টি করা যেতেই পারে।
যে সব মানুষ ভালোবাসাকে অবহেলা করতে পারে।তাদের কাছে সংসার শুধু একটা অভ্যাস।
দাম্পত্য জীবন সুন্দর তখনি হয়, যখন আমরা অভ্যাস থেকে বের হতে পারি। মানুষটার একটা অস্তিত্ব হোক! অধিকার হোক, বেঁচে থাকার মানে একটা শক্ত বাঁধন হোক, আমাদের সংসার হোক আমাদে জীবনের রসায়ন আমাদের মাঝে ভালোবাসার মাদকতা থাকাটা জরুরী, বাঁচার জন্য একটা অন্যরকম স্বাদ।জীবনের কঠিন বাস্তবতার সাথে কিছু আবেগ আর আবেশ আদর মাখানো একটা আলগা আহ্লাদে জড়ানো,সুন্দর ক্ষণ।