তিন দিন আগে ইনস্টাগ্রামে নিজের সাদাকালো একটি পুরোনো ছবি পোস্ট করে ক্যাপশনে লিখেছিলেন, ‘ওল্ড ইজ গোল্ড।’ এটিই বলিউডের ‘গোল্ডম্যান’খ্যাত বাপ্পি লাহিড়ীর শেষ পোস্ট। সোনা ভালোবাসা এই সংগীত তারকা গতকাল মঙ্গলবার ৬৯-এ এসে থামলেন। প্রায় ৯ হাজার গানের তিনি শিল্পী। বলিউডের বিনোদন সাংবাদিক অনুপমা চোপড়াকে দেওয়া সাক্ষাৎকারের নির্বাচিত অংশ আজ প্রকাশিত হয়েছে ভোগ ইন্ডিয়ার অনলাইন সংস্করণে।

সোনার প্রতি আপনার এই আকর্ষণ কীভাবে তৈরি হলো?

১৯৭৪ সালে মা আমাকে একটি সোনার চেইন দিয়েছিল। ১৯৭৭ সালে বিয়ের পর স্ত্রী আমাকে আরেকটি সোনার চেইন উপহার দেয়। তারপর আমার মনে হলো, সোনার চেইন আমার জন্য সৌভাগ্যের প্রতীক। কয়েক বছর পরেই আমি যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্ক আর যুক্তরাজ্যের লন্ডন যাই। ওখানে তখন ভীষণ ঠান্ডা। আমার সোনার চেইন সব জ্যাকেটের তলায় পড়ে গিয়েছিল। ভারতীয়রা তখন আমাকে জিজ্ঞেস করছিল, ‘আপনিই বাপ্পি লাহিড়ী? কিন্তু আপনার চেইন কোথায়?’ এই প্রশ্ন শুনে আমার মনে হলো, গলার চেইন আমার পরিচয় বহন করে। আর এখন তো বাপ্পি লাহিড়ী নামের অর্থই দাঁড়িয়ে গেছে সোনা!

যখন আপনি সোনার অলংকার পরা শুরু করলেন, বলিউডের গানের ইন্ডাস্ট্রি বিষয়টিকে কীভাবে নিল?

মার্কিন রক সংগীতশিল্পী ও অভিনেতা এলভিস প্রেসলি আমার সবচেয়ে বড় প্রেরণা। ছোটবেলা থেকে উনাকে দেখে বড় হয়েছি। উনি বড় ‘ক্রস’ আঁকা একটা সোনার চেইন পরতেন। গাঢ় রঙের সানগ্লাস পরতেন। আর হাতভর্তি থাকত ব্রেসলেট। আমিও ছোটবেলা থেকেই নিজের সে রকম একটি ইমেজ তৈরি করতে চেয়েছিলাম। আর আজ সোনার অলংকার ছাড়া ‘বাপ্পিদা’ হয়ই না! আর এখন তো ভক্তরা আমার গানের মতো আমার ফ্যাশন আর স্টাইলেরও ভক্ত। আমার বিশ্বাস, আজ থেকে ৫০ বছর পরও যদি আমার গান বাজানো হয়, ২ হাজার লোকে নাচবে।

এই ইমেজের জন্য কখনো কটু কথা শুনতে হয়নি?

আমি আমার লুকের কপিরাইট করতে সুপ্রিম কোর্ট গিয়েছিলাম। কপিরাইট করিয়েছি। কেউ যাতে আমার ফ্যাশন আর স্টাইল কপি করতে না পারে। কেউ আমার মতো জামাকাপড় পরে, সাজসজ্জা করে বাপ্পি লাহিড়ী সেজে হাসি-তামাশা করতে পারবে না। কেউ যদি এ রকম করে, তাকে আইন অনুযায়ী জরিমানা গুনতে হবে, শাস্তি পেতে হবে। লতা মঙ্গেশকরের গাওয়া ‘কালিও কি চামান’ গানের একটা আন্তর্জাতিক ভার্সন আছে। হ্যারি আনন্দের গাওয়া। ওই গানে আমার ক্রেডিট দেওয়া হয়নি। আমি তখন মুম্বাই থেকে যুক্তরাষ্ট্রের লস অ্যাঞ্জেলেসে যাই। আদালতকে জানাই যে আমার সংগীত আয়োজনে গানটি হয়েছে। আমাকে ক্রেডিট দিতে হবে। এক বছর পর রায় হয়। আমি জয়ী হই। ওই গানের ক্রেডিট লাইনে যুক্ত হয়, ‘অরিজিনাল সং কম্পোজড বাই বাপ্পি লাহিড়ী।’ ‘জিমি জিমি’ গানটি তো ৪০টি ভাষায় হয়েছে। সবখানে আমার নাম নেওয়া হয়েছে। মাইকেল জ্যাকসন যেবার ভারতে এলেন, আমার সঙ্গে দেখা হলে বলেছিলেন, ‘আই লাভ ইয়োর ডিসকো ড্যান্সার।’ উনি আমার সোনার গয়নার স্টাইলেরও প্রশংসা করেছিলেন।

তাই বলে এত অন্য রকম, চকচকে?

অন্য রকম না হলে অন্যদের থেকে আলাদা করবেন কীভাবে? এই জীবনে আমি ষাটের বেশি বসন্ত দেখেছি। বয়স হয়েছে। এখন আমার অর্থ বা খ্যাতি নয়, কেবল সম্মানজনক জীবনধারার জন্য ছোটা উচিত। কিন্তু সে জন্য আমি আমার ফ্যাশন বা স্টাইল বদলাইনি। আগেও যেমন পোশাক, অলংকার পরতাম, এখনো পরি। এই অন্য রকম চকচকে অলংকারগুলো আমার পরিচয় বহন করে। আমি কোনো হিরো নই। কিন্তু আমার ভক্তদের কাছে আমি একজন হিরো। কেননা, ওরা আমার গান ভালোবাসে। ‘ডার্টি পিকচার’ (২০১১) সিনেমার ‘উলালা উলালা’, ‘গুন্ডে’ (২০১৪) সিনেমার ‘তুনে মারি এন্ট্রিয়া’ বা ‘বদ্রিনাথ কি দুলহানিয়া’ (২০১৭) সিনেমার ‘তাম্মা তাম্মা’, এইগুলো তো সাম্প্রতিক কালের সিনেমা। আমি তো ৬৪০টির বেশি সিনেমায় গান করেছি।

এখনকার বলিউড তারকাদের মধ্যে কার বা কাদের স্টাইল আপনার ভালো লাগে?

রণবীর সিং আর বরুণ ধাওয়ান। যদিও এখন ‘পারসোনাল স্টাইল’ বলে কিছু নেই। কেউ তারকা হওয়ার আগেই তাঁর একাধিক স্টাইলিস্ট থাকে। বাইরে বের হওয়ার আগে তারাই তাঁকে সাজিয়ে-গুছিয়ে দেয়। নিজের কোনো স্টাইল নেই। সবাই জিনস, শার্ট, প্যান্ট পরছে। এসব আমাকে দিয়ে হয় না!

হিন্দি সিনেমার গান হিট করানোর ক্ষেত্রে কাদের অবদান সবচেয়ে বেশি?

শ্রোতাদের। তারপর সিনেমার পরিচালক আর সংগীত পরিচালকদের। তারপর শিল্পীদের জন্য। আমার গান কেন হিট হবে না বলুন? আমি কাজ করেছি কিশোর কুমার, লতা মঙ্গেশকর, মোহাম্মদ রাফি, মুকেশ, আশা ভোসলেদের সঙ্গে। এখনকার শিল্পীরাও খারাপ গায় না। তবে ওদের বৈচিত্র্য কম। সব গান কেমন যেন একই রকম।

 

 

Source : prothom alo

Loading