আমার চোখে আমার মা
কলমে-প্রসূন বিশ্বাস
৪সি কাশী নাথ দত্ত রোড, কলিকাতা ৭০০০৩৬
আজকে মা দিবস।। ভাবলাম আজকে সবাই মা কে নিয়ে লিখবে।। তাই ভাবলাম আমি ও লিখে ফেলি কিন্তু লিখবো টা কি ?মা কে নিয়ে লেখার কি আছে মা তো মা ই।।দশ মাস দশ দিন কষ্ট সহ্য করে জন্ম দেওয়ার নাম ই মা।। শুধু এই টুকু বলে শেষ করা যাবে না মা নামক সুগভীর শব্দ টির যার ব্যাপ্তি সুমদ্র তলে র ও তলায় যেখানে মানুষের পৌঁছানো সম্ভব নয়।। মা কে নিয়ে লেখা চিন্তা র ব্যাপার শুধু মা কেনো জগতে বাবা নামক বটগাছ টিকে ও অস্বীকার করা যায় না।।
ছোট বেলা থেকেই আমাদের পরিবার ছিলো জ্যাঠা,কাকা,নিয়ে একান্নবর্তী পরিবার।। পরে সবার আলাদা আলাদা হয়ে যায় কিন্তু একবাড়ীর মধ্যে ই সবাই মিলিয়ে থাকা।। ছোট্ট বেলা থেকেই স্বল্প পরিসর,
স্বল্প আয় এই দুটি নিদারুণ সংকটের সাথে মা আমাকে বড় করে তুলেছে ।। মা তার সন্তানকে কি ভাবে দুধে ভাতে রাখবে সেটা আমি হাড়ে হাড়ে টের পেয়েছি আমার মা এর লড়াই কে দেখে ।। নানা রকম নানা ভাবে কখোনো ব্লাউজ সেলাই করে কখোনো আমের জেলী বানিয়ে কখোনো শাড়ি র ফলস লাগিয়ে নিরন্তর চেষ্টা করে গেছে তার সন্তান কি ভাবে পড়াশোনা করবে কি পড়বে সর্বোপরি তার সংসার কি করে চলবে এর জন্য প্রত্যেক দিন ৫ কিলোমিটার হেঁটে যাতায়াত সকালে বিকেলে কোনো অভিযোগ ছিলো না মুখে ।। সঙ্গে একান্নবর্তী পরিবারের কথা,গল্প তো আছেই সব ভেঙে বলা সম্ভব ও নয় চুপ করে দাঁতে দাঁত চেপে সব কিছু সহ্য করে এগিয়ে নিয়ে গেছে আমার মা ।। হয়তো পৃথিবীর সকল মা রাই এই রকম হয়।। কিন্তু আমার মায়ের মতো নয় ।।
এই জন্য ই পৃথিবীতে সর্বশ্রেষ্ঠ, সর্বকালের সর্বাধিক উচ্চারিত শব্দের “মা” শব্দটিই হবে সর্বাধিক উচ্চারিত। মা শব্দটি অতি ছোট্ট ও ক্ষুদ্র কিন্তু বিশাল ও ব্যাপক তার প্রভাব। বিশ্বাস-আস্থা আর ভালোবাসার অপর নাম মা। মায়ের মমতার তুলনা নাই। লিখতে গেলে তো শেষ হবে না আজকে নিজে বাবা হয়ে বুঝতে পারছি সেই মা এর মর্ম । এখন সেই ছোট বেলা র কথা গুলো মনে পড়লে শিহরিত হয়ে পরি ।। আজকে যখন আমার সন্তান কে মানুষ করছি তখন অনুভব করছি আমি মানুষ হয়েছি কি ভাবে। আজ মায়ের সেই কষ্ট ,সেই আবেগ ,সেই একরোখা জেদী মনোভাব আজ ভাসে মুখে র সামনে ।। সব কিছু লিখে প্রকাশ করার ও সম্ভব নয়। কিছু জিনিষ মনের গহনে রেখে দিতে হয় কেনোনা অনুভব করার জন্য।। তবেই তার মর্ম বুঝতে পারা যায়।। যেমন মা ডাক টা যেন এক প্রশান্তির ডাক, সেই ডাকে রয়েছে এক মধুর আবেগ। মাকে ভালবাসি অনেক, সেই ভালবাসার অন্ত নেই।। আর এই মা এর আর এক রূপ মাসি বা মায়ের বোন। আমার জীবনে এই মাসি নামক কথা টি অস্বীকার করতে পারি না কিছু টা হলেও আমার অনেকটা জুড়ে অবস্থান করছে ।।আমার ছোটো মাসি আমার মায়ের ছোটো বোন হাফ মানুষ তার কাছে আমি ।। তার কথা যদি এখানে না বলি তা হলে উপরে যিনি আছেন তিনি ক্ষমা করবেন না আমাকে।। একটি ছোট্ট ঘটনা বলি মায়ের টিউমার অপারেশন হবার সময় মা ভর্তি হসপিটালে।।মামার বাড়ি তে ছিলাম। কালীপূজার বিসর্জনে হাতে চকলেট বোম ফেটে যায়।। তখন মাসি রুপে মা এর আর এক রূপ দর্শন করেছি । আরো আছে কিন্তু ঐ যে বললাম আগে সব তো বলে প্রকাশ করা যায় না কিছু কিছু জিনিষ বলা যায় লেখা যায় বাকিটা হৃদয় এর অন্তরে চিরকাল থেকে যায় ।।
সবশেষে একটাই কথা বলার বর্তমান সময়ে দেখা যাচ্ছে, যে মা সব অভাব অভিযোগ সহ্য করে ছেলেকে মানুষ করছে , এত ত্যাগস্বীকার করেও সন্তানদের দ্বারা লাঞ্ছিতা ও নির্যাতিতা হচ্ছে । নিজের ঘর থেকেও সন্তান ও বৌমাদের দ্বারা গৃহহীনা হয়ে পড়ছে।।
নিজের সন্তান ই তাঁকে অজানা স্টেশনে ছেড়ে চলে আসেন, বৃদ্ধাশ্রমে ছেড়ে দিয়ে আনন্দোল্লাস করেন। পিতামাতা উভয়েই এভাবেই অত্যাচারিত হন, কোলেপিঠে যাদের নিজেদের সুখ- স্বাচ্ছন্দ্য বিসর্জন জলাঞ্জলি দিয়ে তিলে তিলে মানুষ করে তোলেন, তাদের কাছেই। এটা কি মনুষ্যত্বের লক্ষণ? না কি, এটাই প্রতিদান হওয়া উচিত?আর পৃথিবীর সকল মা ভালো থাকুন, সুস্থ থাকুন, আদরে থাকুন যত্নে থাকুন, হৃদয়ে থাকুন নমস্কার, শ্রদ্ধা, ভালোবাসা সবকিছু।
………………………………………………………………………………………………………………