খাবারে হলুদের ব্যবহার, পরিপাক ঠিক রাখতে চিরতার রস খাওয়া, ওজন কমাতে সজনে পাতা খাওয়া, মুখের উজ্জ্বলতা বাড়াতে নিম-চন্দন ব্যবহারের মতো সমাধানগুলো এসেছে আয়ুর্বেদ থেকে।
বাংলাদেশে চারটি চিকিৎসা পদ্ধতি স্বীকৃত- অ্যালোপ্যাথি, হোমিওপ্যাথি, ইউনানি ও আয়ুবের্দ। এর মধ্যে আয়ুর্বেদকে বলা হয় সবচেয়ে প্রাচীন ও ট্র্যাডিশনাল বা ঐতিহ্যগত চিকিৎসা পদ্ধতি।
আয়ুর্বেদ চিকিত্সা পাঁচ হাজার বছরের পুরনো এবং এর উদ্ভব হয়েছে ভারতবর্ষে। বাংলাদেশ, ভারত, পাকিস্তানে এ চিকিৎসা পদ্ধতি বেশ পরিচিতি পেয়েছে।
আয়ুর্বেদ শব্দটি দু’টি সংস্কৃত শব্দ আয়ু ও বেদ থেকে এসেছে। ‘আয়ু’ অর্থ ‘জীবন’ এবং ‘বেদ’ অর্থ ‘জ্ঞান’ বা ‘বিদ্যা’। অর্থাৎ যে জ্ঞানের মাধ্যমে জীবের কল্যাণ সাধন হয়।
আয়ুর্বেদে ভারসাম্য রক্ষা
জন হপকিন্স মেডিক্যাল জার্নালের মতে, আয়ুর্বেদ মূলত মন, শরীর, আত্মা ও পরিবেশের মধ্যে একটি ভারসাম্য তৈরি করে। যার কোনোটিতে ব্যাঘাত ঘটলেই রোগ হয়।
তখন ওই রোগের চিকিৎসায় ভারসাম্য নষ্ট হওয়ার কারণ বের করে সেটি পূর্বাবস্থায় ফেরানো হয়। সাধারণত ভুল খাদ্যাভ্যাস, ভুল ব্যায়াম, ত্রুটিপূর্ণ জীবনযাপন, মানসিক অবসাদ বা বিভিন্ন বদভ্যাসের কারণে এই ভারসাম্যে তারতম্য হতে পারে।
এক্ষেত্রে ওষুধ, পুষ্টিকর খাবার, ম্যাসাজ থেরাপি, যোগব্যায়াম ও ধ্যানের সমন্বয়ে চিকিৎসা করা হয়। এক কথায়, সঠিক চিকিৎসা দেয়ার পাশাপাশি সার্বিক জীবনযাত্রায় পরিবর্তন আনা হয়।
এই ওষুধ বানানো হয় বিভিন্ন গাছপালা, ফুল, ফল, শেকড় বাকড় দিয়ে।
আয়ুর্বেদ চিকিৎসার মূল প্রচেষ্টা থাকে রোগী যেন আগের শক্তি ও ভারসাম্য ফিরে পায় এবং ভবিষ্যতে রোগ না হয়।
আয়ুর্বেদ রোগ নিরাময়ের চাইতে রোগ যেন আর না হয় সে জন্য স্বাস্থ্যকর জীবনযাত্রার ওপর বেশি জোর দেয়। বেশিভাগ ক্ষেত্রেই রক্ত বিশুদ্ধিকরণ ও পেট পরিষ্কারের ওষুধ তৈরি করা হয়।
এ কারণে আধুনিক বিশ্বেও প্রাচীন এই চিকিৎসা পদ্ধতি বেশ জনপ্রিয়তা পেয়েছে।
আয়ুর্বেদে কিভাবে চিকিৎসা দেয়া হয়?
আয়ুর্বেদের মতে, মানবদেহের চারটি মূল উপাদান হলো দোষ, ধাতু, মল ও অগ্নি। এই চারটির গতিপ্রকৃতি ঠিক রাখাই এই চিকিৎসার মূল লক্ষ্য।
দোষ
‘দোষ’-এর প্রধান কাজ হলো আপনি যে খাবার খাচ্ছেন, সেটি হজম করা এবং খাদ্যের সব পুষ্টিগুণ সারা শরীরে পৌঁছে দেয়া যেন কোষ ও পেশি সুগঠিত হয়। দোষে কোনো গোলযোগ হলেই রোগ হয়।
ধাতু
ধাতু হলো মানবদেহের সাতটি টিস্যু সিস্টেম। এই টিস্যু সিস্টেমে আছে রস, রক্ত, মাংস, মেদ, অস্থি, মজ্জা ও শুক্র। ধাতু দেহের প্রধান পুষ্টি যোগায় এবং মানসিক বৃদ্ধি ও গঠনে সাহায্য করে।
মল
মল হলো শরীর থেকে নির্গত বর্জ্য বা পায়খানা, প্রস্রাব ও ঘাম। দেহের সুস্থতায় মল বেরিয়ে যাওয়া জরুরি।
অগ্নি
অগ্নি হলো লিভার বা পেশি কোষে উৎপন্ন জৈব রাসায়নিক পদার্থ। যা শরীরের সমস্ত রাসায়নিক ও পরিপাকের কাজ করে।
খাদ্যাভ্যাস নিয়ন্ত্রণে জোর
আয়ুর্বেদে খাদ্যাভ্যাস নিয়ন্ত্রণের ওপর সবচেয়ে বেশি জোর দেয়া হয়। কারণ মানুষের শারীরিক ও মানসিক বিকাশ, মন মেজাজ সবই তার খাদ্যের মানের ওপর নির্ভরশীল।
মানবদেহে খাদ্য প্রথমে ‘রস’-এ পরিবর্তিত হয় এবং তারপর রক্ত, পেশি, চর্বি, হাড়, হাড়ের মজ্জা, ইত্যাদিতে রূপান্তরিত হয়।
কাজেই খাদ্য হলো দেহের সমস্ত রাসায়নিক প্রক্রিয়া ও জীবনী শক্তির মূল। খাদ্যে পুষ্টির অভাব বা ভুল খাদ্যাভ্যাস অনেক রকম রোগের সৃষ্টি করে।
তবে আয়ুর্বেদের এই চিকিৎসা কতটা ভালো কাজ করবে সেটা নির্ভর করবে এর চিকিৎসক বা কবিরাজের জ্ঞান ও দক্ষতার ওপর।
তাই এই চিকিৎসা নিতে হলে, বিশেষ করে, গর্ভবতী বা স্তন্যপান করানো নারী ও শিশুকে আয়ুর্বেদিক থেরাপি দেয়ার আগে চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে।
এছাড়া আয়ুর্বেদ এখন পর্যন্ত যুক্তরাষ্ট্রের ফুড অ্যান্ড ড্রাগ অ্যাডমিনিস্ট্রেশনের ছাড়পত্র পায়নি। কারণ এর অনেক ভেষজ ওষুধে সীসা, পারদ ও আর্সেনিকের অস্তিত্ব পাওয়া গেছে।
তাই আয়ুর্বেদ চিকিৎসা নেয়ার ক্ষেত্রে সতর্ক হতে হবে।
সূত্র : বিবিসি
__________________________________________________________
__________________________________________________________
__________________________________________________________